গৌরনদীতে সর্বত্র চলছে মাদকের রমারমা বানিজ্য
পুলিশের বিরুদ্ধে মাশোহারা নেয়ার অভিযোগ
মোঃ জামাল উদ্দিন ॥ গৌরনদীর সর্বত্র চলছে মাদকের রমারমা বানিজ্য। এখন হাত বাড়ালেই ফেন্সিডিল, মদ, গাঁজা, হিরোইন, ইয়াবা পাওয়া যাচ্ছে মুড়ি-মুড়কির মতো। এখন আর কোন রাখ-ঢাক নেই প্রকাশ্যেই বিক্রি হচ্ছে এ সব নেশা দ্রব্য। এ অপরাধ কর্মের সাথে জড়িয়ে পরেছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা-কর্মী ও জনপ্রতিনিধি সহ প্রভাবশালীরা। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের গৌরনদী সার্কেলের নিষ্ক্রীয়তার কারণে এর প্রসারতা বাড়ছে দিনদিন। পুলিশের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদক ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিয়মিত মাশোহারা নেয়ার অভিযোগ। এ সব কারণে পরিস্থিতি দিনদিন নিয়ন্ত্রনের বাইরে চলে যাচ্ছে। নেশার ছোবলে ধ্বংশ হচ্ছে গোটা এলাকার যুব সমাজ। এলাকায় বাড়ছে খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, ধর্ষন সহ নানা অপরাধ কর্ম।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, গৌরনদীর ভুরঘাটা বাসষ্ট্যান্ড, বাকাই বাজার , বার্থী, ইল্লা, ধানডোবা, রাজাপুর, কটকস্থল, বেজগাতি, সাউদেরখালপাড়, রামসিদ্দিবাজার, বাটাজোর, মাহিলাড়া, চন্দ্রহার, আধুনা, গৌরনদী বাসষ্ট্যান্ড, আশোকাঠী, শাহজিরা, সরিকল, গয়নাঘাটা, চাঁশীর হাট, দক্ষিণ বিজয়পুরসহ প্রায় ৩০টি স্পটে অবাধে মাদক বেচা-কেনা হয়।
গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী গৌরনদীর বিভিন্ন স্থানে ৩৫/৪০ জন মাদক বিক্রেতা দেদারছে মাদক বিক্রি করছে। মটর সাইকেল নিয়ে মাদক আসক্তরা হাজির হয় এসব স্পটে। পুলিশ এসব স্পট থেকে নিয়মিত মাশোহারা পেয়ে থাকে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাঝে মধ্যে মাশোহারা না পেলে চলে পুলিশের অভিযান। পুলিশের সাথে মাদক ব্যবসায়ীরা একই সাথে উঠাবসা করে এবং তাদের সাথে অবৈধ লেনদেন হয়।
তবে গৌরনদী থানার ওসি আবুল কালাম পুলিশের বিরূদ্ধে মাশোহারা নেয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, এ ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন গৌরনদীর ৪ জন ইউপি সদস্য ও প্রভাবশালী কতিপয় ব্যক্তি। এরা সর্বত্র গড়ে তুলেছে মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট। এ ছাড়া র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে এসব মাদকদ্রব্য উদ্ধারসহ বিক্রেতাদের গ্রেফতার করে আদালতে সোর্পদ করলেও আইনের ফাঁক ফোঁকর দিয়ে আটককৃতরা জামিনে মুক্তি পেয়ে পূণরায় এ ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরছে বলে ওসি জানান।
তিনি আরো বলেন, বার্থীর ইউপি সদস্য নান্নু ও তার সহোদর একই ইউনিয়নের সাবেক মেম্বর সেন্টু মৃধা এলাকায় ফেন্সি সম্রাট বলে পরিচিত। গত কয়েক মাস আগে এক হাজার বোতল ফেন্সিডিল সহ তারা উভয়ে গ্রেফতার হয়। পার্শ্ববর্তি কটকস্থল গ্রামের অপর দুই মাদক সম্রাট হচ্ছে জাফর আকন ও তার ছোট ভাই বশার আকন। গৌরনদীর সবচেয়ে বড় মাদকের হাট বসে জাফরের বাড়ীতে। মাস ছয়েক আগে জাফর ৯’শত বোতল ফেন্সিডিল সহ র্যাবের হাতে গ্রেফতার হয়। ওই সময় মাদক নিয়ন্ত্রন আইনে নিম্ন আদালত জাফরের যাবত জীবন কারাদন্ড প্রদান করে। কিন্তু কিছু দিন যেতে না যেতেই জাফর ও নান্নু মেম্বর আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে উচ্চ আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আসে। পূণরায় তারা জড়িয়ে পরে মাদক ব্যবসার সাথে। জাফর ও নান্নুর বিরুদ্ধে ১০/১২টি মামলা রযেছে।
এছাড়া চাঁদশীর এক ইউপি মেম্বর তার ২ সহযোগী সায়েম ও শওকতকে দিয়ে মাদক ব্যবসা পরিচালনা করছে। ওই ইউনিয়নের আরো ২ জন মেম্বর মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে, একইভাবে মাহিলাড়া ইউনিয়নের এক মেম্বর ও গড়ে তুলেছে মাদক বিক্রির সিন্ডিকেট। গৌরনদীর কয়েকজন যুবলীগ নেতা ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পরেছে।
এ ছাড়া বার্থীর কাদের লস্কর, দক্ষিণ পালরদী গ্রামের নুর ইসলাম বেপারী, শাহজিরা গ্রামের জুয়েল মৃধা, স্বপন দীর্ঘদিন যাবত মাদক বিক্রি করছে বলে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে।
অপর একটি সূত্র জানায়, গৌরনদীর কসবা এলাকায় কতিপয় হিজড়া মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছে। গৌরনদীতে মাদকা শক্তি নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের নামে মাত্র একটি সার্কেল অফিস থাকলেও তাদের কার্যক্রম নেই বললেই চলে। এখানে মাদক নিয়ন্ত্রন অফিস থকিলেও জনবলের অভাবে মাদক নিয়ন্ত্রন সম্ভব হ্েচ্ছনা।
গৌরনদীর পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ক্ষোভের সাথে জানান, পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রীয়তার কারণে মাদকের প্রসারতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।