বরিশালের ১৩টি নৌ-পথে ৫৩টি ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রীবাহী লঞ্চ

প্রেমানন্দ ঘরামী, বিশেষ প্রতিনিধি ॥  বরিশাল- ঢাকাসহ দক্ষিণাঞ্চলের অভ্যন্তরীণ ১৩টি নৌ-পথে চলাচলকারী ৫৩টি যাত্রীবাহী লঞ্চে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে হাজার-হাজার লঞ্চযাত্রীরা। লঞ্চগুলোতে বাধ্যতামূলক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ জ্যাকেট, লাইফ বয়াসহ জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম থাকার কথা থাকলেও যাত্রীর তুলনায় তা একেবারেই অপ্রতুল। ফলে প্রাকৃতিক দুর্যোগ কিংবা আকস্মিক দুর্ঘটনায় অসংখ্য প্রাণহানির আশংকা রয়েছে।

 
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লি¬উটিএ) জ্যেষ্ঠ উপ-পরিচালক মোঃ আলমগীর কবির বলেন, নদীপথে যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য লাইফ বয়া, ফায়ার বাকেট, অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, বালুভর্তি বাক্স, বালতি এবং হস্তচালিত পানির পাম্পের ব্যবস্থা রাখা অপরিহার্য। এ ব্যাপারে প্রতিটি লঞ্চের যাত্রী ধারণের ক্ষমতা অনুযায়ী সুনিদৃষ্ট নির্দেশনা রয়েছে। বাধ্যতামূলকভাবে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর এ নৌযানগুলোতে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখার নির্দেশ দিলেও তা তোয়াক্কা করছে না লঞ্চ মালিকেরা। অভিযোগ রয়েছে, সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভে বিভাগকে উৎকোচ দিলে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদী না থাকলেও এসব নৌযান চলাচল করতে পারে। উৎকোচ না দিলে মামলা জটিলতায় ফেলে দেয় ওই দপ্তরের কতিপয় কর্তাব্যক্তিরা। আর উৎকোচ দিয়ে সনদ নেয়ার পর লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম রাখার প্রয়োজনবোধ করছেননা লঞ্চ মালিকেরা। সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিটি লঞ্চের সামনের নোটিশ বোর্ডে ধারণক্ষমতার কথা উল্লে¬খ রয়েছে। কিন্তু উল্লে¬খিত সংখ্যার দ্বিগুনেরও বেশি যাত্রী নিয়ে লঞ্চগুলো যাতায়াত করে থাকে। ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদী থাকার কথা থাকলেও তা অধিকাংশ লঞ্চের ক্ষেত্রেই মেলেনি। যেসব লঞ্চে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামাদী রয়েছে তাও এমনস্থানে রাখা হয়েছে তা যেকোন দুর্ঘটনা ঘটলে বের করা সম্ভব নয়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এমভি পারাবাত-১১ লঞ্চের যাত্রী ধারণের ক্ষমতা ১ হাজার ১২ জন। ধারণ ক্ষমতা অনুযায়ী লঞ্চটিতে লাইফ বয়া থাকার কথা ২৫৩টি কিন্তু আছে ১১৬টি।  ২২টি অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের মধ্যে মাত্র ১২টি থাকলেও তার মধ্যে তিনটি বিকল। এমভি সুরভী লঞ্চের যাত্রী ধারণের ক্ষমতা ৮৯০ জন। লাইফ বয়া ২’শ টির পরির্বতে আছে ১০৫টি। ফায়ার বাকেট ১৮টির মধ্যে তিনটি বিকল। এ লঞ্চের কোথাও বালুভর্তি বাক্সের দেখা মেলেনি। একই অবস্থা সুন্দরবন, টিপু, কীর্তনখোলাসহ অন্যান্য লঞ্চগুলোর। আর প্রতিযাত্রীর জন্য একটি করে লাইফ জ্যাকেট থাকার বিধান থাকলেও বাস্তবে দিবা নৌ সার্ভিস বে-ক্রজ ব্যতিত অন্য কোন লঞ্চে একটি লাইফ জ্যাকেটেরও খোঁজ মেলেনি। অন্যদিকে ছোট লঞ্চগুলোর অবস্থা আরো শোচনীয়। অনেক লঞ্চের জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জাম যে পরিমান থাকার কথা তার অর্ধেকও নেই। আবার যেগুলোতে আছে তা দূর্ঘটনায় পরলে ব্যবহার করা নিয়ে চিন্তিত লঞ্চ স্টাফরাই। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা-বরিশাল রুটের নৌ-যানের এক প্রথম শ্রেনীর মাস্টার জানান, বেশীর ভাগ লঞ্চে যে পরিমানের অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র, লাইফ বয়া রাখার নিয়ম, তার অর্ধেকও নেই। প্রতি যাত্রীর জন্য একটি করে লাইফ জ্যাকেট রাখার নিয়ম আছে শুনেছি। কিন্তু আমার ২২ বছরের কর্ম জীবনে তার বাস্তবায়ন দেখিনি। তিনি আরো জানান, মালিক পক্ষ ঢাকা সমদ্র্র পরিবহন অধিদপ্তরকে টাকা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ করে রেখেছে। তাই যাত্রীদের জীবন রক্ষায় লঞ্চে বিভিন্ন সরঞ্জামাদী না থাকলেও কোন বাঁধা নেই।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, প্রতি বছর সার্ভে করা হয়। সে সময় সব ঠিক না থাকলে সার্ভে সনদ দেয় হয় না। সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর বরিশালের ইঞ্জিনিয়ারিং ও র্সাভেয়ার (চলতি দায়িত্ব) মোঃ মঈনুদ্দিন জুলফিকার বলেন, বড় লঞ্চগুলো অর্থাৎ ঢাকা-বরিশাল রুটের লঞ্চগুলো সার্ভে করে ঢাকা সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তর। যার কারণে এ লঞ্চগুলোর বিরুদ্ধে আমরা কোন ব্যবস্থা নিতে পারিনা। আর ছোট লঞ্চগুলোতে আমরা সার্ভে করি। সার্ভে অনুযায়ী সরঞ্জামাদি না থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। আমরা শুধু পারি মামলা করতে। উৎকোচ সর্ম্পকে তিনি বলেন, এগুলো আমাদের এখানে হয়না। আর যারা করে তাদের বিষয়ে কোন কথা বলতে চাই না।