তারুণ্যের ভালোবাসা : মোহিত কামাল

এসএসসি পাস করার পর কোচিং করার সুযোগ পায়। ফার্মগেইটের পাশে ‘লাইফএন্ড লাইট হসপিটালের’ লবিতে দেখা হয় রুহেলের সাথে। দেখেই ভালো লেগেছে রুহেলকে। কথা বলার পর আরো বেশি ভালো লাগে। এক ধরনের অবশ করা মুগ্ধতা গ্রাস করে তাকে।

রুহেল লম্বা। শ্যামলা রঙের রুহেলের ড্রেস স্মার্ট। কথা বলার ভঙ্গি তীব্র পীড়া দেয় শাìতার মনে।

বাসায় ফিরে শাìতার মন শাìত হয় না। অশাìত হতে থাকে। রুহেলকে দেখার জন্য মন কেুন করতে থাকে। নিজের আনন্দ সুখ, চিìত্মা যেন গেঁথে গেছে একটি মুখে। পৃথিবী একদিকে আর রুহেল এখন আর একদিকে। শাìতার পুরো পৃথিবী এখন রুহেলের দখলে।

বেশ ক’দিন গড়িয়েছে। দেখা হয় প্রতিদিন। কথা হয়। তবে ঘনিষ্ঠ হবার সুযোগ নেই। কোচিং শেষে শাìতাকে ফিরে যেতে হয়। রুহেলের জন্য গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। তাকেু সাথে সাথে এসে গাড়িতে উঠতে হয়।
নিজের মনের কথা প্রকাশের সুযোগ পাচ্ছে না শাìতা। মন তাই বেপরোয়া হয়ে উঠছে। অশাìত ঢেউ মনের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সংকোচ ঝেড়ে ফেলে শাìতা।
ফোন করে ওর কোচিং ব্যাচের এক ফেন্সণ্ডের বাসায়।
ফোন ধরে সানি, শাìতার ফেন্সণ্ড।
শোন সানি, রুহলকে আমার ভালো লাগছে। ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কীভাবে ওকে জানাবো বুদ্ধি দাও,
সরাসরি বলে ফেল, দেখা যাক কি হয়। সানি জবাব দেয়।
সরাসরি বলবো? যদি না করে দেয়?
সরাসরি প্রপোজাল দেয়াই ভালো। যা হবার হবে। সানি আবারু একই পরামর্শ দেয়।
থ্যাংকস সানি। থ্যাংকস। আজ কোচিং শেষে কথা হবে।
রিসিভার রেখেই ঘুরে বসে সে। চোখ যায় দরজার পর্দার আড়ালে।
মা দাঁড়িয়ে আছে।
মা কি আঁড়ি পেতে সব শুনে ফেলেছে? ভয়ে কুঁকড়ে যায় শাìতা।
কার সাথে কথা বলছিলে? কঠিন স্বরে মা জানতে চাইলেন ।
এক বান্ধবীর সাথে। শাìত্মভাবেই জবাব দেয় শাìতা।
কানে শুনলাম ছেলের সাথে ডেটিং করছ? মুখে বলছো বান্ধবীর কথা, ব্যাপার কি? মিথ্যা বলছো কেন?
মিথ্যা বলছি না মা। আমার এক বান্ধবীর সাথে কথা বলেছি এখন।
আমি শুনলাম তুমি সানির সাথে কথা বলছো।
জি মা, সানি আমার ফেন্সন্ড। ওর সাথেই কথা বলছিলাম।
কাল তোমার কোচিং-এ যাওয়া বন্ধ।
কেন মা?
ছেলের সাথে ডেটিং করবে কোচিং-এর নাম দিয়ে সেটি হবে না। মা টেলিফোন সংলাপের শেষ লাইনটিই কেবল শুনেছিলেন।
সানি আমার বান্ধবী, ও ছেলে না মা, মেয়ে।
মা ক্ষুব্ধ চোখে তাকিয়ে আছেন শাìতার দিকে। মেয়ের কথা বিশ্বাস করছেন না। মেয়েকে সন্দেহ করছেন। ঝাঁজালো স্বরেই বললেন, কোচিং বন্ধ। আর মিথ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন নেই।
শাìতার কোচিং বন্ধ হয়ে গেছে। বাবার কানেও গিয়েছে কথাটি। শাìতা টেলিফোনে ছেলেবন্ধুর সাথে ডেটিং করছে এ সংবাদে রক্ষণশীল পরিবারের বিধি-নিষেধের পরিধি আরো বেড়ে গেছে।
সানি প্রতিদিনই কোচিং-এ শাìতাকে খোঁজ করে। খোঁজ না পেয়ে অস্খির হয়ে উঠে। বাসার ঠিকানা জোগাড় করে শাìতার বাসায় আসে ও।
শাìতার মা দরজা খোলে।
এটা কি শাìতাদের বাসা? সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করে সানি।
হ্যাঁ। তুমি কে? মা প্রশ্ন করেন।
আমি শাìতার ফেন্সণ্ড। আমার নাম সানি। ওকি বাসায় আছে?
কি নাম বললে?
সানি।
ঠিক বলছো তো? সানি কি মেয়েদের নাম?
জি, ঠিক বলছি। আমার নাম সানি। আমি শাìতার কোচিংমেট, ফেন্সণ্ড।
মা নরু হলেন না। তবুও সানিকে ভেতরে ঢুকতে দিলেন। সানির কাছ থেকে বাসার নাম্বার নিলেন। ওদের বাসায় ফোন করলেন তিনি। তিনি সন্দেহ করছেন নাম নিয়ে।
নিশ্চয় এটা ওদের কারসাজি। মেয়েটিকে সানি নাম সাজিয়ে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
সন্দেহ দূর করার জন্য সানিদের বাসায় রিং করেন। ফোন ধরে সানির মা।
আপনার মেয়ের নাম কি সানি? সরাসরি শাìতার মা জিজ্ঞাসা করেন।
জি, আমার সেজো মেয়ের নাম ফারহানা রহমান, ডাক নাম সানি। রহমান ওর বাবার টাইটেল। আপনি কে বলছেন প্লিজ।
শাìতার মা’র রাগ কমে গেছে।
সানির মা’র সাথে আলাপে মেতে উঠেছেন তিনি। সানি ভেতরের রুমে চলে এসেছে। শাìতাকে ওই রুমে বন্দী জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। সন্দেহ এতো ভয়াবহ হতে পারে সানির অভিজ্ঞতা ছিল না। নিজের মোবাইল ফোনটি শাìতার হাতে দেয়। রুহেলের মোবাইলে লাইন কানেক্ট করে ধরিয়ে দেয়।
বল শাìতা, রুহেলকে তোর মনের কথা বলে দে।
শাìতার সংকোচ উধাও হয়ে গেছে। সাহসী শাìতা জেগে উঠেছে। সাহসের সাথে উচ্চারণ করে।
আমি শাìতা, তোমার কোচিংমেট। চিনতে পেরেছ?
হ্যাঁ। চিনেছি। কেুন আছ তুমি। রুলর স্বাভাবিক জিজ্ঞাসা। ভালো নেই। গৃহবন্দী আছি। কয়েকদিন কোচিং-এ যেতে পারিনি।
কেন গৃহবন্দী কেন?
সেটি পরে বলবো। আগে আমার মনের কথা শোন রুহেল। আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া আর কিছু এখন আমার মাথায় নেই।
আচমকা ভালোবাসার কথা শুনে রুহেলের কথা আটকে গেছে।
রুহেল কথা বলছো না কেন? তুমি রাজি?
রুহেল ভয় পেয়ে যায়। এমন বেপরোয়াভাবে কি কেউ কাউকে ভালোবাসার কথা বলতে পারে? শাìতা স্বাভাবিক তো? মনে প্রশ্ন আসে। তবুও ধীরে সুস্খে উত্তর দেয়।
পরে কথা বলবো। আমাকে ফোন করার জন্য ধন্যবাদ। লাইন কেটে দেয় রুহেল।
রুহেলের কথায় ইতিবাচক সাড়া নেই। তবুও শাìতা স্বþিত্ম পায়, টেলিফোনে রুহেলের কথা শুনেছে। এটুকুই স্বþিত। আরু কথা বলতে ইচ্ছে করেছিল, মন ভরেনি। অতৃপ্তি থেকেই গেল। তবুও শাìতা যেন অনেক কিছু পেয়েছে। সানির প্রতি কৃতজ্ঞতা বেড়ে যায়। কথা বলার সুযোগ তৈরি করে দেয়ার জন্য সানিকে সে বুকে জড়িয়ে ধরে।
শাìতার মা স্বাভাবিক ব্যবহার করছেন এখন। নিজের ভুল বুঝেছেন। মেয়ের প্রতি অন্যায় করেছেন বুঝতে পেরে অনুতাপ তার বেড়ে যায়। মায়ের সহনশীল আচরণের কারণে শাìতার ওপর থেকে পারিবারিক চাপ কমে আসে।
পরেরদিন কোচিং-এ আসে শাìতা।
নিজের দায়িত্ববোধ লোপ পেয়ে যায়। পড়ার ইচ্ছে বা ক্লাসের প্রতি মনোযোগের টানে নয়, রুহেলের প্রতি তীব্র টানে সে প্রায় এক ঘন্টা পূর্বে ক্যাম্পাসে চলে আসে। রুহেলকে খোঁজে। রুল নেই। যে পথে সবাই আসে সেখানে দাঁড়িয়ে থাকে। কে কি ভাবছে সেটি তাকে বিচলিত করছে না। আগ্রহ নিয়েই অপেক্ষাতে থাকে।
না, রুহেল আসেনি। সবাই এসেছে রুহেল আসেনি। কেন আসেনি। দুশ্চিìতায় শংকিত হয় শাìতা। ফিরে আসে ক্লাসে। বিস্ময় নিয়ে দেখে ক্লাসের ডান দিকের প্রথম সারিতে বসে আছে রুহেল।
কোন পথে এসেছে সে?
রুহেলকে দেখে দুশ্চিìত্মা কেটে যায়। আনন্দে চমকিত হয় শাìতা।
স্যার পড়াচ্ছেন। জটিল বিষয়গুলো উপস্খাপন করছেন সহজ করে। সবাই মনোযোগী শ্রোতা। সবাই ভালো ছাত্র-ছাত্রী। শাìতাও ভালো ছাত্রী। কিì’ শাìতার মন ক্লাসে বসছে না। বার বার মন ছুটে যাচ্ছে রুহেলের দিকে, চোখ ঘুরে-ফিরে রুহেলের ওপর আছড়ে পড়ছে। তারুণ্যদীপ্ত রুহেলের মায়াবী মুখে কিসের আকর্ষণ! দেহ ভঙ্গিমায় কিসের টান! জানে না শাìতা!
বার বার চোখ ফিরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। স্যারের দিকে তাকানোর চেষ্টা করছে। মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে লেকচারের দিকে। পারছে না। মন বসছে না। একটা অস্খিরতা গোপনে গোপনে নিরìত্মর বহমান। বুকের মধ্যে চাপা কষ্টবোধ ঠেসে আছে। এমন লাগছে কেন? একবারু রুহেল তার দিকে তাকাচ্ছে না কেন?
এই যে, তুমি দাঁড়াও। স্যার শাìতার দিকে আঙুল তুলে বললেন।
সামনের বেঞ্চির মেয়েটি বললো, আমি দাঁড়াবো?
না, না। পেছনের নীল ওড়না, কী যেন নাম তোমার। হ্যাঁ, দাঁড়াও।
শাìতা আচমকা ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়ায়।
কি নাম তোমার। টিচার জানতে চাইলেন আবারু।
শাìতা। শাìত্মভাবে মাথা নিচু করে জবাব দিলো ও।
তোমাকে একটু অস্খির মনে হয়। বার বার ডানদিকে তাকাচ্ছ। পড়ায় মন বসছে না? অসুস্খতা ফীল করছো?
শাìতা একবার স্যারের দিকে চোখ তুলে তাকালো। চোখে করুণ এক কষ্টের রাগিনী সে মুহূর্তে বিমূর্ত হয়ে উঠেছে।
নিরীহ এই অভিব্যক্তি দেখে অনেকে হেসে উঠেছে।
টিচার বিরক্ত হলেন। ওকে মোটেও অপমান করার ইচ্ছে তাঁর মধ্যে নেই। কেবল মনোযোগের ঘাটতি টের পেয়েই দাঁড় করিয়েছেন। সমস্যার কথা শুনতে চেয়েছেন।
ছাত্র-ছাত্রীরা না বুঝে হেসে উঠেছে। শাìতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।
বসো শাìতা। বসো।
টিচার কিছুটা গম্ভীর হয়ে শাìতাকে বসতে বললেন।
শাìতা চুপচাপ বসে গেছে। এবার কোনো দিকে তাকাচ্ছে না। মাথা একটু নিচের দিকে বেশি নামানো।
কাউকে কষ্ট দেয়া এক ধরনের সেডিস্টিক আচরণ। ওকে দাঁড়াতে বললাম। মনে হচ্ছিল ওর মনে কিসের যেন ঝড় বইছে, মনোযোগ দিতে পারছে না সে পড়ায়। ওকে মনোযোগী করাই ছিল আমার উদ্দেশ্য। অথচ তোমরা হেসে উঠলে। কেন? স্যার শাìতার দিকে তাকিয়ে সরি বললেন সবার ভুলের জন্য। পুরো ক্লাস চুপ হয়ে গেছে।
নিজের ভুল নিজে দেখে না মানুষ। অন্যের ভুল নিয়ে হাসাহাসি করে। আজ স্যারের লেকচারের পর সবাই সবার ভুল বুঝতে পেরেছে।
সবাই শাìতার জন্য মমতা বোধ করছে। ওকে কষ্ট দেয়ার জন্য অনেকে লজ্জিত হয়েছে। ক্লাস শেষে সবাই এসে শাìতার সাথে কথা বলতে চাইছে। শাìতা কারো কথায় মনোযোগ দিতে পারছে না। চোখ ঘুরেফিরে কেবল রুহেলকে খোঁজে। রুহেল একবারের জন্যও এলো না। চলে গেছে কি?
ব্যাকুল চোখ সবার দিকে ঘুরে-ফিরে তাকায়। না। রুহেল নেই।
রুহেলের চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছে না শাìতা। ব্যাকুলভাবে সে করিডর থেকে বেরিয়ে আসে। ‘লাইফ এণ্ড লাইট’ হসপিটালের সামনে দাঁড়ায়। এখানে রুহেলের গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকে। নেই। গাড়ি নেই। রুহেল নেই।
বুকে হাহা শূন্যতা জেগে ওঠে। ব্যþত্ম লোকালয়ে যেন নির্জনতা। এতো মানুষের ভিড়ে সে নিজেকে একাকী ভাবে। কারুর প্রতি তার চোখ নেই। চোখে যেন আঁধার। ঘনঘটা আঁধারে ডুবে গেছে বর্তমান।
সামনে গাড়ি। রিকসা। জনস্রোত। অথচ শাìতার জীবন যেন স্রোতহীন। স্খবির।
আচমকা ঘাড়ে হাত টের পেয়ে পেছনে তাকায় শাìতা।
সানি দাঁড়িয়ে আছে।
চল। কথা আছে। সানি বললো।
শাìতা জবাব দিল না। সানির পেছনে হেঁটে ‘লাইফ এণ্ড লাইট’ হসপিটালের নিচের করিডরে মিউজিক সেন্টারের সামনে এসে দাঁড়ালো।
মন খারাপ করেছিস? সানি সহমর্মিতা নিয়ে জানতে চাইলো।
শাìতা জবাব দিলো না। চোখ টলমল করে উঠেছে।
কেউ আর কোন কথা বলতে পারলো না।
অনেকক্ষণ পর সানি বললো, রুহেলের কথা ভুলে যা। ও একটা রোবটের মতো পড় য়া ছাত্র। ভুলে যা ওকে। সবাই তোর জন্য ইন্টারেস্টেড। দেখবি অন্য কাউকে ভালো লেগে যাবে। চল।
হেঁটে দু’জনে নির্জন সিঁড়ির গোড়ায় এসে দাঁড়ায়। সিঁড়ি দিয়ে কেউ চলাফেরা করে না। লিফটে উঠে যায় সবাই। ওরা সিঁড়ির ধাপে পাশাপাশি বসে।
এক সময় শাìতা হুহু করে কেঁদে ফেলে।
মনোবিশেস্নষণ:
রক্ষণশীল পরিবারে বেড়ে উঠেছে শাìতা। কখনো পুরুষ মানুষের সাথে মেশার সুযোগ হয়নি। বিধি- নিষেধের কড়াকড়িই ছিল ওর জীবনের মূলধারা।
আচমকা বড় পরিসরে আসে। অনেক তারুণ্যের সংস্পর্শে এসে নতুন জগৎ তার সামনে খুলে যায়।
ধীরে ধীরে একটি পরিবেশ মানিয়ে নেয়ার যে অìত্মর্গত শিক্ষা মানুষকে আলোড়িত করে, সেটি থেকে বঞ্চিত ছিল শাìতা। ধীরে ধীরে মানুষের সংবেদনশীলতা জাগে। এই সংবেদনশীলতা অর্জনের জন্য প্রয়োজন নির্দিষ্ট পরিসরে বৃহত্তর প্রেক্ষাপট মোকাবিলার রিহার্সেল। এই জীবনের এই রিহার্সেলটি ঘটেনি শাìতার জীবনে।
এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে আলোড়িত হয় শাìতার মন, ব্রেইন। প্রথম দেখা বা চকিত চাহনির চুম্বকীয় টানে তীব্র নাড়া খেয়েছে শাìতা। রুহেলের তারুণ্যদীপ্ত চুল, মুখ, দেহভঙ্গিমা চোখ দিয়ে চলে যায় শাìতার ব্রেইনে। এমন মুখের মুখোমুখি এর আগে কখনো ঘটেনি। অনেক বিধি-নিষেধের জালে জড়ানো শাìতার অভিজ্ঞতায় এমন মুখের তথ্য ব্রেইন পূর্বে আর পায়নি, পাওয়ার সুযোগ ঘটেনি। রুহেলের কথা বলার ধরনটি সুন্দর। কান দিয়ে শাìতার ব্রেইনে পৌঁছে গেছে বাচনভঙিময়ার সৌন্দর্যছটা। ব্রেইন আলোড়িত ঝড়ের দোলায় বেসামাল, তাই মþিত্মষ্কে নি:সরণ ঘটেছে ফিনাইলইথাইলামিন বা পী পদার্থের। ঢেউ উঠেছে মনে। ভালোবাসার ঢেউ। তীব্র ও দানবীয় এই ঢেউ-এর কারণে আকুলতা জেগেছে শাìতার মনে। ব্যাকুল মন শাìত্ম হয়নি। টেলিফোনে নিজের ইচ্ছের কথা জানান দিয়ে শাìত হয়েছে সাময়িক। পুরোপুরি তৃপ্ত হয়নি।
তারুণ্যের ভালোবাসায় এই বেগবান গতিই মূল প্রাণ। মূল স্রোত। মায়ের অযাচিত সন্দেহের চাপে দিশেহারা ছিল শাìতা। অবরুদ্ধ ছিল নিজ গৃহে। নিরপরাধ শাìতার শৃঙ্খলিত এ জীবনধারায় শেকল ভাঙে, সানির প্রকৃত পরিচয় তাকে সন্দেহের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে।
বাধভাঙা জোয়ারের ঢলের আচমকা ধারার মতোই শাìতা তাই নিজের ব্যাকুলতা, ভালোবাসার কথা বলতে পেরেছে শাìতা, রুহেল এই বেগবান কথার ধারায় অভ্যþত্ম নয়। ভালোবাসার এই সহজ-সরল উপস্খাপনা তাই তার মনে ভয় ঢুকিয়ে দিয়েছে। ভীতু প্রকৃতির রুহেল তাই গুঁটিয়ে গেছে। শাìতার মনের দোলা দোলনা থেকে ছিটকে পড়েছে। বিপর্যþত্ম হয়েছে সে। হতাশা তাকে চেপে ধরেছে। কষ্টে কেঁদেছে। আলোচ্য প্রেক্ষাপটে রুহেলকে এখনও পায়নি শাìতা।
পাবে না এমন কথা বলা যায় না। পেতেও পারে। শাìতার ভালোবাসা এক ধরনের ইতিবাচক আবেগ। ইতিবাচক আবেগের শক্তি প্রলয়ঙ্করি হতে পারে। সেই বেগবান ধারার সহজ-সচ্ছন্দ গতি রুহেলকে জয়ও করে নিতে পারে। এমনি আশা করা যায় যদি নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে শাìতা। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ কখনও জয় সুনিশ্চিত করতে পারে না। অনিয়ন্ত্রিত আবেগ তৈরি করতে পারে জটিলতা, জীবন-যন্ত্রণা।
অভিজ্ঞতাই জীবনের জটিলতা মোকাবিলা করার শক্তি জোগায়। শাìতা অনভিজ্ঞ। অনভিজ্ঞতার কারণে ভরাডুবি ঘটতে পারে। কারুর সাপোর্ট না পেলে বিষাদ রোগে ডুবে যেতে পারে শাìতা। সাপোর্ট পেলে সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারবে সে। আবার জীবনযুদ্ধে নিজেকে ফিট করতে পারবে। এখানে সানির ভূমিকাটি যথার্থই বলা চলে।
কেন মেয়ে হয়েও শাìতা ভালোবাসার কথা প্রথম প্রকাশ করেছে? কেন এতো তাড়াহুড়ো? কেন এতো সরাসরি? যথাযথ পরিচয়ের পূর্বেই মমত্ব রুহেলের মনোজগতে আসন পায়নি। মেয়েটিকে সে নির্লজ্জ ভেবেছে। সানি তার কষ্ট লাঘব করতে যে উদ্যোগ নিয়েছিল, কথা বলার সে সুযোগ তৈরি করেছিল সেটি সঠিক বলা চলে। তবে প্রথমেই ভালোবাসার কথা প্রকাশ করে দেয়াটা আমাদের আর্থ-সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক জীবন ধারার আলোকে এখনো সহজ নয়। এখনো মেনে নেয়ার মত নয়। তাই রুহেল মানতে পারেনি। যদিও এই জেনারেশনে ইদানীং মেয়েরা ছেলেদের প্রপোজাল প্রথম দিচ্ছে, কু হলেও সংখ্যা নগণ্য নয়। এক্ষেত্রে আমরা শাìতার ভালোবাসার একটি অনিয়ন্ত্রিত ঝড়ের সন্ধান পাই। এই ঝড়ের তাণ্ডব সে সইতে পারেনি। ফলে আপাতত তাকে হতাশায় পড়তে হয়েছে।
আবেগ সংযত করতে হবে। সংযত আবেগের জন্য প্রয়োজন সহনশীল, স্বাভাবিক পরিবেশ। পারিবারিক প্রেক্ষাপটও গুরুত্বপূর্ণ।
রক্ষণশীল শাìতার পারিবারিক প্রেক্ষাপটকে কি আমরা স্বাভাবিক বলতে পারি?
ধর্মীয় জীবনধারায় যে রক্ষণশীলতার কথা বলা হয়, শাìতার জীবনে তা কি অতিমাত্রায় প্রকট নয়?
এ কারণেই প্রকট যে, সে সবসময় একই ধারায় বড় হয়নি। আচমকা বৃহত্তর পরিসরে তাকে আসতে হয়েছে। জীবনের অনিবার্য উত্তরণের জন্য বৃহত্তর পরিসরে আসার প্রþ’তি সে পায়নি। তাই বাধভাঙা জোয়ারের মতো মনের গতিময় বৈজ্ঞানিক ধারা তাকে দ্রম্নত বদলে দেয়।
সময়ের দাবি অনস্বীকার্য। ধর্মীয় মূল্যবোধেও গুরুত্বপূর্ণ। মূল্যবোধ নৈতিকশক্তি সুসংহত করে। মূল্যবোধ শাণিত করার জন্য মিথ্যা সন্দেহ তারুণ্যের মনে বিদ্রোহের বীজ রোপণ করে দিতে পারে। বিদ্রোহের প্রকাশভঙ্গি নানাভাবে ঘটতে পারে­ অনিবার্য ধ্বংস ডেকে আনতে পারে।
শাìতার যে বেপরোয়া প্রকাশভঙি দেখেছি আমরা সেটিও বিদ্রোহী মনের অìত্মর্গত উন্মোচন বলা যেতে পারে। এটি একটি বিশেস্নষণ মাত্র। তবে মনে রাখতে হবে মানুষের যে কোন আচরণ নির্ধারিত হয় একক কোনো কারণে নয়। বায়োলজিক্যাল, সাইকোলজিক্যাল এবং সামাজিক কারণসমূহের মিথûিক্রয়ায় আচরণটি আদল পেয়ে যায়। আচরণের বহি:প্রকাশ ঘটে।