গৌরনদীতে কৃষি বিভাগের চার কোটি টাকার সম্পত্তি বেদখল

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়দের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, গৌরনদী উপজেলার কৃষি বিভাগের ইউনিয়ন ব্লক সুপারভাইজারদের (উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের) জন্য কার্যালয়, আবাসিক ভবন ও সার বীজ সংরক্ষনের গুদাম ঘর নির্মান করা হয়। প্রথম দিকে সরকারি ভাবে নির্মিত এসব ভবনে কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বসবাস করলেও বর্তমানে কয়েকটি ভবন বসবাসের অযোগ্য হয়ে পরেছে। বার্থী ইউনিয়নের ব্লক সুপারভাইজারদের অফিসটি গৌরনদীর টরকী বন্দর পুলিশ ক্যাম্পের পাশে অবস্থিত। ভবনটির একাংশ ক্যাম্পের পুলিশ দখল করে নিয়েছে। অফিসের বাকি অংশটি বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরা দখল করে বার্থী ইউনিয়ন বিএনপির কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর সাইনবোর্ডটি খুলে নেয়া হলেও ভবনটি তাদের দখলে রয়েছে বলে স্থানীয়রা জানান। সরিকল ইউনিয়নের সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের অফিস ও আবাসিক ভবন সরিকল বন্দর এলাকায় নির্মান করা হয়। সরিকল পুলিশ ক্যাম্পের লোকজন এ ভবনটি বর্তমানে দখল করে বসবাস করছেন। এছাড়া গৌরনদীর বৃহৎ বান্যিজিক বন্দর সরিকল হাট সংলগ্ন প্রায় ১৫ শতক জমি দখল করেছে স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি। মাহিলাড়া ইউনিয়ন কৃষি অফিস কাছেমাবাদ আলিয়া ছিদ্দিকিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকায় নিজস্ব জমিতে নির্মান করা হয়। সেখানে দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা অফিস না করায় কয়েক বছর ধরে স্থানীয় প্রভাবশালী গৌরনদী উপজেলা ওলামালীগের সাবেক সভাপতি মাওলানা আ.ফ.ম ফরিদ ৮ শতক জমি দখল করেছেন বলে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান।

সূত্রমতে, ভূমি জরিপের সময় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা অবৈধ পন্থায় মাঠ পর্চায় নিজেদের নামে রেকর্ড করে নেন। উপজেলা কৃষি অফিসের অভিযোগ, তারা শুধু কৃষি বিভাগের জমিই দখল করেননি একটি ভবনও দখল করে তা সংস্কার করে বৈঠকখানা করেছেন। অভিযোগের ব্যাপারে মাওলানা আ.ফ.ম ফরিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি নিজেকে জমির বৈধ মালিক দাবি করে বলেন, কৃষি বিভাগের কোন সম্পত্তি নেই। ভূমি জরিপের সময় কৃষি বিভাগের নামে যে তিন শতক জমি রেকর্ড হয়েছে প্রয়োজনে তা কর্তন করে নেয়া হবে। ভবন দখল প্রসংঙ্গে তিনি বলেন, ভবনটি তার পিতা নির্মান করেছেন। ওই ভবনের বৈধ মালিক আমরাই।

বাটাজোর ইউনিয়নের কৃষি কর্মকর্তাদের কোয়াটারের অবস্থা খুবই নাজুক। ঝুকি নিয়ে এখানে বসবাস করছেন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন ও হাসান হোসেন। সোহরাব হোসেন অভিযোগ করেন, কোয়াটার সংলগ্ন কৃষি বিভাগের ২১ শতক জমি বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামচুল হক হাওলাদার ও তার পরিবারের সদস্যরা ভোগ দখল করছেন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা। অভিযোগের ব্যাপারে বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শামচুল হক হাওলাদার বলেন, আমার বাবার নামে কাগজপত্র থাকায় আমার ভাইয়েরা ওই জমি ভোগ দখল করছে। আমি ওই সম্পত্তি ভোগ দখল করিনা। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সঠিক নয়।

খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের কৃষি অফিসের ভবনটি অবৈধভাবে ভেঙ্গে তা বিক্রি করেছেন ইউপি চেয়ারম্যান। সেখানকার  ১০ শতক জমি দখল করে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বি.এন.পির সভাপতি আকন সিদ্দিকুর রহমান ইউনিয়ন পরিষদের ভবন নির্মান করেছেন। এ ব্যাপারে খাঞ্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান আকন সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা পরিষদের জমি থেকে কৃষি অফিসের অবৈধ ভবন অপসারন করে বৈধ ভাবে পরিষদের ভবন নির্মান করেছি। কারো জমি দখল করিনি। খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের ভূরঘাটা বন্দরের পান বাজারের ১০ শতক জমি স্থানীয় কতিপয় ব্যাক্তি দখল করেছে। নলচিড়া ইউনিয়নের বি.এস (ব্লক সুপারভাইজার) কোয়াটারটি রক্ষনা বেক্ষনের অভাবে পরিত্যক্ত ভবনে পরিনত হয়েছে। যা স্থানীয় একটি মহল জবর দখলের পায়তারা চালাচ্ছে বলে স্থানীয় একাধিক ব্যাক্তি অভিযোগ করেন। গৌরনদী উপজেলা সদরের চাঁদশী ইউনিয়নের বি.এস কোয়াটার ভবনটি অবস্থিত। এ ভবনটির আংশিক ব্যবহারের অযোগ্য। বাকি অংশ চাঁদশী ইউনিয়ন চেয়ারম্যান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। পাশেই পৌর কাঁচা বাজার সংলগ্ন ১২ শতক জমি স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তি দখল করে নিয়েছেন। যার আনুমানিক মূল্য ৪০ লক্ষ টাকা। চাঁদশী ইউপি চেয়ারম্যান তাইফুর রহমান কচি বলেন, পরিষদের নিজস্ব ভবন নির্মিত হলে আমরা দখল ছেড়ে দিব। গৌরনদী পৌর সদরে দক্ষিন পালরদীর এক একর ৫ শতক জমি ও পুকুর অধিকাংশই কৃষি বিভাগের হাত ছাড়া। স্থানীয়রা জানান, এ জমির আনুমানিক মূল্য কোটি টাকার অধিক। ওই গ্রামের জনৈক শংকর চন্দ্র ঘোষ উক্ত জমির একটি অংশ জোর পূর্বক দখল করে নিয়েছেন। শংকর নিজেকে বৈধ মালিক দাবি করেন। পরে কৃষি বিভাগ সম্পত্তি উদ্ধারে মামলা করেছে।

গৌরনদী কৃষি বিভাগের সম্পত্তি রক্ষনা বেক্ষনের দায়িত্বে নিয়োজিত ও গৌরনদী উপজেলা কৃষি সম্প্রসারন কর্মকর্তা মোঃ আক্কেল আলী এ প্রসংঙ্গে বলেন, খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আকন সিদ্দিকুর রহমান শুধু আমাদের জমিই দখল করেননি, তিনি আমাদের ভবনটি ভেঙ্গে বিক্রি করে দিয়েছেন। গৌরনদী সদরে কৃষি বিভাগের জমিতে পাম্প হাউজ করার জন্য পৌরসভা ভাড়া নিয়ে পড়ে ওই সম্পত্তি দখল করে নেয়। বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কর্তৃক জমি দখলের কথা স্বীকার করে তিনি আরো বলেন, গৌরনদী কৃষি দপ্তরের প্রায় চার কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত হয়ে গেছে। রাজনৈতিক ভাবে প্রভাবশালীদের কারনে এসব সম্পত্তি উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তাছাড়া কৃষি বিভাগের সম্পত্তি রক্ষা করতে আর্থিক কোন বরাদ্ধ নেই। অনেক অর্থের প্রয়োজন। নিজেদের পকেটের অর্থ ব্যয় করে একাধিক মামলা পরিচালনা করেছি। সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য বরাদ্ধ না থাকার সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে প্রভাবশালী দখলদাররা। গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার মন্ডল বলেন, বিভিন্ন সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এসব সম্পত্তি প্রভাবশালীরা দখল করে নিয়েছ। সম্পত্তি রক্ষনাবেক্ষনের জন্য কর্তপক্ষ সরকারীভাবে যদি প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা না নেন তাহলে এগুলো বেহাতই থাকবে। বিষয়টি বরিশাল জেলা প্রশাসকসহ উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এ প্রসংঙ্গে উপজেলা কর্মকর্তা মোঃ জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত নই। সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা সহয়তা চাইলে বেহাত হওয়া সরকারি সম্পত্তি উদ্ধার করা হবে।