ফতোয়াবাজদের চাপের মুখে ৩৩ ঘন্টা পর দিনমজুরের লাশের সৎকার সম্পন্ন

ওই গ্রামের দিনমজুর পুলিন হালদারের একমাত্র পুত্র কীত্তর্নীয়া দলের বংশিবাদক বিপ্লব চন্দ্র হালদার (২৮) জানান, একই গ্রামের হরিচাঁদ হালদারের কন্যা ও তার দুরসম্পর্কের ফুফাতো বোন শিল্পী হালদারকে (২২) প্রেমের সম্পর্কে গত ২১ জুলাই সে বিবাহ করেন। বিয়ের পর থেকে তারা দুজনেই নিরুদ্দেশ ছিলেন। শুক্রবার (৬ আগস্ট) সকাল ৭ টায় তার (বিপ্লবের) পিতা পুলিন হালদার (৬৫) দুরারোগ্যব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। বাবার মৃত্যুর খবর শুনে বিপ্লব ওইদিন (শুক্রবার) বেলা এগারোটার দিকে বাড়িতে যান। স্ত্রী শিল্পী হালদারকে নিয়ে বাড়ির সম্মুখে পৌঁছলে গ্রাম্য মোড়ল রেনুপদ হালদার, ডাঃ হরেকৃষ্ণ হালদার, সুধীর মল্লিক, ধীরেন্দ্র নাথ বৈদ্ধ, রমেশ হালদার, মনতোষ হালদার, মোনাই হালদার ও তাদের সহযোগীরা বিপ্লকে বাড়িতে প্রবেশ করতে বাঁধা সৃষ্টি করে। বিপ্লব আরো জানায়, এসময় তারা ফতোয়াজারি করে বলেন, হিন্দু ধর্মের রিতী অনুযায়ী নিকট কোন আত্মীয়কে বিয়ে করা যাবে না। সেক্ষেত্রে সামাজিক ভাবে বিয়ে না করায় বিপ্লব তার মৃত পিতার সৎকারে অংশগ্রহন করতে পারবে না বলে জানিয়ে দেয়। এনিয়ে ফতোয়াবাজদের সাথে বিপ্লবের বাকবিতন্ডার এক পর্যায়ে ফতোয়াবাজরা তাকে (বিপ্লবকে) একঘোরে করে রাখার হুমকি দেয়। উপায়অন্তুর না পেয়ে শুক্রবার বিকেলে অসহায় বিপ্লব আগৈলঝাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অশোক কুমার নন্দির সরনাপন্ন হন। ওসি অশোক কুমার নন্দি জানান, বিপ্লবের কাছে তিনি বিস্তারিত বিষয়টি শুনে গ্রাম্য মোড়ল রেনুপদ হালদারের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপ করে বিপ্লবকে দিয়ে সৎকার করানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
বিপ্লব হালদার আরো জানান, থানা পুলিশের কথা অমান্য করে ফতোয়াবাজরা পূর্ণরায় নতুন করে ফতোয়াজারি করে বলেন, সমাজের লোকজনের সম্মুখে তার নববিবাহিতা স্ত্রীর শাখা ভেঙ্গে ও সিদুঁর মুছে ফেললে তার (বিপ্লবের) বাবার লাশ সৎকার করতে দেয়া হবে। এ নিয়ে দিনমজুর পুলিন হালদারের মৃত্যুর পর লাশ নিয়ে দীর্ঘ ৩৩ ঘন্টা চলে নানা তেলেছমাতি কান্ড। এক পর্যায়ে ফতোয়াবাজদের চাপের মুখে গতকাল শনিবার বিকেল চারটায় বিপ্লব হালদার ফতোয়াবাজদের কাছে মুচলেকা দিয়ে তার নববিবাহিতা স্ত্রী শিল্পী হালদারকে তার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেন। এরপর ওইদিন (গতকাল শনিবার) বিকেল চারটায় দিনমজুর পুলিন হালদারের লাশের সৎকার করা হয়।
ফতোয়ার ব্যাপারে ওসি অশোক কুমার নন্দি জানান, ফতোয়ার ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ পেলে ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে ফতোয়াবাজ গ্রাম্য মোড়ল ধীরেন্দ্র নাথ বৈদ্ধর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যাহা কিছু করা হয়েছে হিন্দু ধর্মের রিতীঅনুযায়ীই করা হয়েছে। বিপ্লব ও শিল্পীর বিয়ে নিয়ে পরবর্তীতে সামাজিক ভাবে বৈঠকের আয়োজন করা হবে। বিপ্লব তাদের কাছে এমনই মুচলেকা দিয়েছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, বিপ্লবের কাছ থেকে তার নববিবাহিতা স্ত্রী শিল্পীকে বিতারিত করার জন্যই ফতোয়াবাজরা নানা ষড়যন্ত্র করছে।