আগৈলঝাড়ার দারিদ্রতা জয়ী একজন শেফালী

পুত্র সন্তানকে নিয়ে স্বামীর সামান্য উপার্জনেই অভাবের সংসারে কোন একমতে অর্ধাহারে অনাহারে কেটেছিলো শেফালীর সংসার। সেই অভাবের সংসারেই শেফালী স্বপ্ন দেখেন ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করে গড়ে তোলার। এক পর্যায়ে ছেলে-মেয়েদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে তিনি বেসরকারি হস্তশিল্পের সংস্থা বাগধা মেনোনাইট সেন্টাল কমিটি (এমসিসি)’তে দিনমজুরের কাজ শুরু করেন। সংসার পরিচালনার পাশাপাশি প্রতিদিন আট ঘন্টা করে কাজ করেন শেফালী। তার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের উপার্জিত অর্থ দিয়েই বড় পুত্র অমৃত লাল হালদার, কন্যা অলকা, অর্পনা ও লিপিকার পড়াশুনা চলতো। দীর্ঘ ১৭ বছর এমসিসি’তে হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করে শেফালী হালদার তার বড়পুত্রকে এমবিবিএস পাশ করিয়েছেন। বর্তমানে তার বড়পুত্র ঢাকার বারডেম হাসপাতালের শিশু মেডিসিন বিশেষষ্ণ ডাঃ অমৃত লাল হালদার। কন্যা অলকা হালদার এইচ.এস.সি, অর্পনা হালদার বরিশাল বজ্রমোহন (বিএম) বিশ্ববিদ্যালয় এন্ড কলেজে দ্বাদশ শ্রেনীতে অধ্যায়নরত ও লিপিকা হালদার এস.এস.সি পাশ করেন। দারিদ্র জয়ী শেফালী জানান, ছেলে-মেয়েকে শিক্ষিত করতে পেরেছেন এটাই তার পরম পাওয়া। তার পুত্র আজ সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন এটাই তার হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফসল। তিনি আরো জানান, তিন বছর পূর্বে তার একমাত্র পুত্র অমৃত লাল হালদার এমবিবিএস-আইএফসিপিএস পাশ করেন। ১৯৯২ সালে শেফালী হালদার প্রথম যখন এমসিসিতে কাজ শুরু করেন তখন তিনি প্রতিদিন আট ঘন্টা পরিশ্রম করে মাসে আট’শ টাকা আয় করতেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই হস্তশিল্পের এমসিসি প্রকল্পের প্রায় সকল কাজই আয়ত্ব করে নেন শেফালী। ফলশ্র“তিতে তড়িঘড়ি করে তার বেতন বৃদ্ধি পায়। সে সময় তার বড় পুত্র অমৃত লাল হালদার ছিলো সপ্তম শ্রেনীর ছাত্র। অমৃত চাকুরী নেয়ার পর পরই শেফালীর এককালের অভাবের সংসারে ক্রমেই আলো ছড়াতে থাকে। গত তিনমাস পূর্বে মায়ের সেই দুঃখ কষ্ট ঘুচাতে ডাঃ অমৃত লাল হালদার মায়ের পূর্বের এমসিসি’র কাজ বন্ধ করে দেন। শেফালীর স্বামী অনন্ত কুমার হালদার জানান, তার স্ত্রী শেফালীর হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রমের ফলে ছেলে-মেয়েদের শিক্ষিত করা সম্ভব হয়েছে। আর সে কারনেই এক সময়ের দুঃখ কষ্টকে এখন পিছনে ঠেলে বর্তমানে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ সুখে স্বাচ্ছন্দেই বসবাস করছেন শেফালী ও তার পরিবার।