আগৈলঝাড়ার আত্মপ্রত্যয়ী শচি রানীর জীবন সংগ্রাম

স্কুলের সময় পেড়িয়ে যাওয়ার পর শচি রানী স্থানীয় জোবারপাড় বাজারে মুদি দোকান পরিচালনা করছেন। শচি রানীর এ কঠোর পরিশ্রম ও মহতি উদ্যোগে এলাকার লোকজনের কাছে এখন তিনি রিতীমতো শ্রদ্ধার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন। মাষ্টার শচি রানী নামেই এলাকার লোকজন তাকে চেনেন। ওই গ্রামের স্বর্গীয় নরেন্দ্রনাথ হালদারের স্ত্রী শচি রানী জানান, নবম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত অবস্থায় পিতা-মাতা তাকে বিয়ের পিড়িতে বসায়। বিয়ের পর আর লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তার।

 

১৯৭১ সালে দেশে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর স্ব-পরিবারে তারা ভারতে পারি জমান। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফিরে আসেন গ্রামের বাড়িতে। তার মা একই উপজেলার বারপাইকা গ্রামের আমদিনী বাড়ৈ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পাঠশালার মাধ্যমে এলাকার শিশু-কিশোরদের শিক্ষাদান করে গেছেন। মায়ের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য ১৯৭৯ সালে স্বামীর বাড়িতেই পাঠশালা খোলেন তিনি। প্রথমযাত্রায় স্বামীর বাড়িতে একনাগারে ৫ বছর ও পরবর্তীতে এলাকার শিশু-কিশোরদের যাতায়াতের সুবিধার্থে পাশ্ববর্তী রামদেবেরপাড় দূর্গা মন্দিরের পাশে ১০ বছর পাঠশালা পরিচালনা করেন। সেখান থেকে একই গ্রামের মজুমদার বাড়িতে ৬ বছর, বৈরাগী বাড়িতে ২ বছর, বড়মাগরা গ্রামে ৪ বছর, বর্তমানে বাকাল ইউনিয়নের সরবাড়ি এলাকার হরিঠাকুরের মন্দির সংলগ্ন একটি পরিত্যক্ত ঘরে ৩ বছর ধরে পাঠশালা পরিচালনা করছেন তিনি। তালপাতা ও কয়লার কালিতে প্রথমে শিশু শ্রেনী থেকে চতুর্থ শ্রেনী পর্যন্ত পাঠদান করালেও বর্তমানে বয়স বেড়ে যাওয়ায় শিশু শ্রেনী থেকে দ্বিতীয় শ্রেনী পর্যন্তই পাঠদানে সীমাবদ্ধ তিনি।

 

উপজেলা প্রাইমারি শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দের সহযোগীতায় প্রাইমারি স্কুলের ন্যায় বৎসরে তিনটি পরীক্ষার মাধ্যমে পাঠশালার শিক্ষার্থীদের শ্রেনী উত্তরন করা হয়। একেক এলাকায় শিক্ষার্থী সংকট দেখা দিলে এলাকাবাসীর অনুরোধে অন্যকোন স্থানে পাঠশালা পরিচালনা করানো হচ্ছে। শচি রানীর পাঠশালা থেকে শিক্ষা নিয়ে পরবর্তীতে প্রাইমারি স্কুলে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করছে ওই এলাকার শত শত শিক্ষার্থী। শচি রানী গর্ব করে বলেন, আমার অনেক ছাত্র-ছাত্রীরা আজ দেশের বিভিন্নস্থানে উচ্চ পদস্থ অফিসার হিসেবে চাকুরি করছে। সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা পর্যন্ত একনাগারে ক্লাশ চলে শচি রানীর পাঠশালায়।

 

এরপর জোবারপাড় বাজারে তার পুত্র নির্মল হালদারের মুদি দোকান পরিচালনা করছেন শচি। ওই গ্রামের গৃহিনী সবিতা রানী হালদার (৪৫) জানান, শচি রানীর পাঠশালায় শিক্ষা নিয়েছে তার কন্যা ময়না ও পুত্র অপু। তারা পাঠশালায় শিক্ষাগ্রহন শেষে এখন হাইস্কুলে পড়াশুনা করছে। তিনিসহ জোবারপাড় এলাকাবাসী, তাদের এলাকার উজ্জল নক্ষত্র শচি রানীর নামে জোবারপাড় এলাকায় একটি পাঠশালা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সমাজের বিত্তশালী ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।