ভিক্ষুকের মনবাসনা পূরন ॥ আগৈলঝাড়ায় নয়নাভিরাম লোকনাথ মন্দির প্রতিষ্ঠিত

সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় সেই ভিক্ষুক শতীশ মনের বাসনা পুরনের জন্য তার গ্রামের বাড়ি কাঠিরায় শ্রী শ্রী বাবা লোকনাথ বহ্মচারীর নামে প্রতিষ্ঠিত করেছেন মন্দির ও আশ্রম। নয়নাভিরাম মন্দিরটি দেখতে প্রতিদিন শত শত মানুষ ভীড় জমাচ্ছেন শতীশের বাড়িতে।

একান্ত আলাপকালে শতীশ অধিকারি জানান তার করুন কাহিনী, ওই গ্রামের দিনমজুর অক্ষয় কুমার অধিকারির পুত্র শতীশ অধিকারি। মাত্র আট বছর বয়সে তার বাবা পরলোকগমন করেন। মা, তিন ভাই ও এক বোনের সংসারের সকল দায় দায়িত্ব পরে তার কাঁধে। এক পর্যায়ে আট বছরের শিশু শতীশ দিশেহারা হয়ে পরেন। মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে শিশু শতীশ তার বাবা অক্ষয় কুমারকে বলেছিলেন বাবা আমাদের জন্য তুমি কি রেখে গেলে। বাবা বলেছিলো তোমার জন্য একটি ঘটি রেখে গেলাম, বাবা লোকনাথকে স্মরন করে তুমি দশ বাড়ির দশ দুয়ার ঘুরে সংসার রক্ষা করবে। একদিন সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় ও বাবা লোকনাথের আর্শীবাদে তোমার সব কিছুই হবে। পরক্ষনেই তার বাবা ইহলোক ত্যাগ করেন। বাবার কথানুযায়ী ও মায়ের আর্শীবাদে শিশু শতীশ ভিক্ষার পেশাকেই বেঁছে নেন। প্রতিদিন এ বাড়ি ও বাড়ির দশ দুয়ার ঘুরে ভিক্ষা করে যা পান তা দিয়েই সংসারের হাল ধরেন।

শতীশ অধিকারি বলেন, “ভিক্ষা করার সময় আমার মনে শুধু একটি বাসনা ছিল হে ভগবান তুমি আমাকে একটি কুল ধরিয়ে দ্যাও। আমি যেন আমার মা, ভাই, বোনের মুখে একমুঠ অন্য তুলে দিতে পারি। তিনি আরো বলেন, বাবা লোকনাথের নামে প্রতিদিন ভিক্ষা করে উপর্জিত অর্থের সামান্য একটি অংশ পুঁজি হিসেবে রেখে দিতাম। পিতার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ভিক্ষা করতে করতে শতীশ ঢাকার শহরে যান। সারাদিন ভিক্ষা করে রাতে পার্কে রাত্রি যাপন করতেন। একদিন ভোরে এক ভদ্রলোক এসে শতীশকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলেন। বলেন, ছোকরা কাজ করবি। অমনি শতীশ তার কথায় রাজি হয়ে যান। ভদ্রলোক ঢাকার তাঁতী বাজার এলাকায় তার জুয়েলারী দোকানের কর্মচারী হিসেবে শতীশকে কাজে লাগিয়ে দেন। সেই থেকে ভিক্ষা পেশা ছেড়ে দিয়ে কাজে মনোনিবেশ করেন শতীশ। কয়েক বছর যেতে না যেতেই স্বর্ণের অলংকার তৈরির সকল প্রকার কাজ নিজ আয়ত্বে নেন। এক পর্যায়ে জুয়েলারী দোকানের কর্মচারী থেকে নিজেই জুয়েলারী দোকানের মালিক হয়ে যান। বাবাকে দেয়া কথা রাখতে গিয়ে ভাইদের ও বোনকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। মায়ের ইচ্ছেমত বিয়ের পিড়িতে বসেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই সহধর্মীনি কনক রানী অধিকারী শতীশের সকল কাহিনী শুনে বাবা লোকনাথের নামে গ্রামের বাড়িতে মন্দির ও আশ্রম করার জন্য উৎসাহিত করেন। লোকনাথের নামে সেই ভিক্ষার উর্পাজিত অর্থ নিয়ে শতীশ ও তার স্ত্রী কনক রানীর আপ্রাণ চেষ্ঠায় বাংলা ১৪১৪ সালের ১৯ জৈষ্ঠ গ্রামের বাড়ি কাঠীরায় প্রতিষ্ঠিত করেন নয়নাভিরাম “শ্রী শ্রী লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম ও মন্দির”। মন্দিরের পূজা অর্চনার জন্য শতীশ একজন পুরোহিত নিয়োগ করেছেন।

পুরোহিত নির্মল ব্যানার্জি জানান, প্রতিদিন সন্ধ্যায় ও প্রতি শুক্রবার সাপ্তাহিত ধর্মীয় নানা অনুষ্ঠানে ভক্তদের উপস্থিতিতে মন্দির প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে ওঠে। মন্দিরের সেবাইত হিসেবে রয়েছেন খোকন বিশ্বাস, জীবন কৃষ্ণ গাইন। এছাড়াও নিঃস্বার্থ ভাবে এলাকার লোকজন মন্দিরের সকল প্রকার অনুষ্ঠানে নিয়োজিত রয়েছেন।
ওই গ্রামের ৮০ বছরের বৃদ্ধ যতীন্দ্রনাথ বৈরাগী বলেন, মোগো গ্রামের পোলা শতীশ এক সোমায় ভিক্ষা কইরা মা, ভাই, বোনগো লইয়া সংসার চালাইতো। অর (শতীশের) বাপেও আছিল বাবা লোকনাথে ভক্ত। অর বাবার মতো শতীশও বাবা লোকনাথের ভক্ত। সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমায় ও বাবা লোকনাথের আর্শীবাদে শতীশের মোনের বাসনা পূরন হইছে। মেগো এই অঞ্চলে এতবড় লোকনাথ মন্দির আর কোত্তাও নাই। মোরা দোয়া করি ভগবান জানি অরে আরো অনেক বড় করে।
সৃষ্টিকর্তার অপার মহিমা ও বাবা লোকনাথের আর্শিবাদে বর্তমানে স্ত্রী কনক রানী অধিকারি, কন্যা হীরা, মুক্তা, মনিকে নিয়ে শতীশের সুখের সংসার।