স্বাধীনতার ৩৮ বছর পরও স্বীকৃতি মেলেনি গৌরনদীর ২০ মুক্তিযোদ্ধার

এসব মুক্তিযোদ্ধার নাম তালিকাভুক্ত করা হয়নি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তালিকাভুক্তির জন্য ওইসব মুক্তিযোদ্ধারা একাধিকবার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তৎকালীন আহবায়ক ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এইচ.এম আলমগীর হোসেনের কাছে ধর্ণা দিয়েও ব্যর্থ হয়েছেন।    
১৯৭১ সালে পাক হানাদারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে বীরত্বের ভূমিকা পালনকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রান কৃষ্ণ সরকারের লিখিত অভিযোগে জানা গেছে, স্বাধীনতা যুদ্ধের উত্তাল মুহুর্তে পাক সেনারা বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলে সড়কপথে ২৫ এপ্রিল প্রবেশ করে। পাক সেনারা সরকারি গৌরনদী কলেজে স্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করার পর (১৯৭১ সালের ১৩ মে) হিন্দু অধ্যুষিত বাকাল, দোনারকান্দি, কালকিনির শশিকর ও নবগ্রামে প্রবেশ করে নারী নির্যাতনসহ নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালায়। জ্বালিয়ে দেয় অসংখ্য ঘরবাড়ি। ওইদিন পাক সেনারা দোনারকান্দি বাজার সংলগ্নস্থানে নির্মম ভাবে গুলি করে হত্যা করে নবগ্রামের জগবন্ধু মল্লিকের পুত্র অনিল মল্লি¬ককে (২২)। এ খবর মুহুর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে ওইসব এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষ মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে একত্রিত হয়ে ঢাল, সুরকী, ল্যাজা, তির, রামদাসহ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পাকসেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। এক পর্যায়ে চারজন পাক সেনাকে আটক করে কুপিয়ে হত্যা করে তাদের অস্ত্র ছিনিয়ে নেয়া হয়। পরবর্তীতে ওই চার পাক সেনার আগ্রেয়াস্ত্র দিয়েই গঠন করা মুক্তিযোদ্ধা হেমায়েত বাহিনী।
অপর বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ইউপি সদস্য সঞ্জিব কুমার হালদার ওরফে সুধীর মেম্বার অভিযোগ করে বলেন, আমরা সংখ্যালঘূ সম্প্রদায়ের লোক, তাই আওয়ামীলীগের সমর্থক। আর এ জন্যই ইচ্ছে করে আমাদের কারো নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় উঠানো হয়নি। নাম       অন্তভূক্তির জন্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তৎকালীন আহবায়ক ও প্রভাবশালী বিএনপি নেতা এইচ.এম আলমগীর হোসেনের কাছে একাধিকবার আবেদন করার পরেও আমাদের নাম তালিকাভূক্ত করা হয়নি।
তালিকায় যে সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উঠেনি তারা হচ্ছেন-দোনারকান্দি গ্রামের সিদ্ধিশ্বর সরকার, প্রান কৃষ্ণ সরকার, দেবেন্দ্র নাথ সরকার, রমনী কান্ত সরকার, কালিপদ মল্লি¬ক, সুধীর মল্লিক, রাজেন্দ্র নাথ চৌধুরী, নরেন্দ্র নাথ চৌধুরী, নারায়ন চন্দ্র সরকার, পুলিন সরকার, জীতেন্দ্র নাথ সরকার, বাকাই গ্রামের সঞ্জীব কুমার হালদার ওরফে সুধীর মেম্বার, ইছাকুরি বাকাই গ্রামের নিরঞ্জন হালদার, বিল¬ধর সরকার, নবগ্রামের প্রফুল্ল¬ হালদার, কুমুদ রঞ্জন মল্লি¬ক, গোকুল চন্দ্র মন্ডল, অনিল সরকার, কৌশিক চক্রবর্তী ও বিভূতি ভূষন মন্ডল।    
মুক্তিযোদ্ধা নারায়ন চন্দ্র সরকার জানান, ২০০৫ সালে এলাকাবাসির সহায়তায় দোনারকান্দি মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি সংসদ নির্মান করা হয়। ওই সংসদের ব্যানারে গত ১৩ মে তাদের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা শহীদ অনিল মল্লিকের “স্মৃতি ভাস্কর্য” উদ্বোধন করা হয়েছে। দোনারকান্দি গ্রামে সরকারি উদ্যোগে মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি ভাস্কর্য নির্মান ও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার স্বীকার হয়ে বাদপড়া মুক্তিযোদ্ধাদের নাম তালিকাভূক্ত করার জন্য এলাকাবাসি প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রনালয়ের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
গৌরনদী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের তৎকালীন আহবায়ক এইচ.এম আলমগীর হোসেনের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর দীর্ঘসময় আমার দায়িত্ব পালনকালে কেউ এরকম কোন বিষয় নিয়ে আমার কাছে আসেননি। যদি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের সনদপত্র নিয়ে যোগাযোগ রক্ষা করতো তাহলে অবশ্যই তাকে তালিকাভূক্ত করা হত। রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ সঠিক নয়।