‘মোগো মুড়ি সেরা মুড়ি’

 

বিশেষ কদর। বরিশাল সদর উপজেলা থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার একটি গ্রাম তিমিরকাঠি। সেখানে প্রায় প্রতি পরিবারই মুড়ি ভাজা ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া উপজেলার দক্ষিণ তিমিরকাঠি, ভরতকাঠি, দপদপিয়া, কুমারখালী ও খেজুরতলা এবং বরিশালের বাকেরগঞ্জ উপজেলার জুরকাঠি, সোহাগকাঠি, বীর নারায়ণ, কয়ার চর, বাখরকাঠি, চৌদ্দপুরা ও বুড়ির হাটের মানুষ মুড়ি উত্পাদনের সঙ্গে কমবেশি জড়িত। এই শিল্পকে কেন্দ্র করে ওই অঞ্চলে গড়ে উঠেছে মুড়ির হাট, আড়তদারি প্রতিষ্ঠান, ধান মাড়াই ও চাল ছাঁটাইয়ের কলসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। তিমিরকাঠিতে মুড়ি উত্পাদনে সংশ্লিষ্ট নির্মল চন্দ্র দাস বলেন, রোজার মাসে বেশি চললেও ১২ মাসই মুড়ি ভাজার সঙ্গে জড়িত তাঁরা। হাতে ভাজা হওয়ায় তাঁদের মুড়ির চাহিদা বেশি। স্বাদে-গন্ধে এই মুড়ি বাজারের অন্যান্য মুড়ির চেয়ে আলাদা। তাই রমজান মাসজুড়ে মুড়ি বেচা-কেনার ধুম পড়ে তিমিরকাঠিতে। তিমিরকাঠির আশরাফ আলী হাওলাদার (৮৫) ও ফাতেমা বেগম (৫০) বলেন, ‘এই মুড়ি সারা দ্যাশে নামকরা। মোগো মুড়ি সেরা মুড়ি। এই মুড়ি খাইলে কোনো রোগ হইবে না। আমরা লবণ, পানি, বালি দিয়া মুড়ি ভাজি। কোনো সার দেই না। হেইলইগ্যা মোগো মুড়ি মজা লাগে।’ প্রতিদিন বিকেলে তিমিরকাঠিতে বসে মুড়ির হাট। রোজার সময় এ হাট জমে ওঠে সবচেয়ে বেশি। বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, ফরিদপুর, বাগেরহাটসহ বিভিন্ন স্থান থেকে পাইকারেরা এসে এখান থেকে মুড়ি নিয়ে বরিশাল, মাদারীপুর, ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করে। পাইকারি বিক্রেতা রবসানজানি মিরাজ বলেন, ‘এখানকার মুড়িতে ইউরিয়া না দেওয়ায় সারা দেশেই এর ব্যাপক চাহিদা।’ মেসার্স খান ব্রাদার্সের কর্মচারি জব্বার হাওলাদার বলেন, ৭০-৮০ বছর ধরে এই অঞ্চলে মুড়ি ভাজাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে এই হাট ও বিভিন্ন আড়তদার প্রতিষ্ঠান। প্রতিদিন এখান থেকে গড়ে ৫০-৬০ জন পাইকার মুড়ি কিনে নিয়ে যান। মুড়িশিল্পের সঙ্গে জড়িত নূরজাহান বেগম (৬৫) বলেন, মুড়ি ভাজার জন্য দুই চুলা ও চার চুলা পদ্ধতি চালু আছে। দ্রুত ভাজার জন্য এখানে প্রায় সবাই চার চুলা ব্যবহার করে। চার চুলার দুটিতে বালু ও দুটিতে চাল দিতে হয়। নির্দিষ্ট সময় পর উত্তপ্ত বালুর ভেতর চাল ঢেলে নাড়তে থাকলে চাল থেকে মুড়ি তৈরি হয়। বালুসহ ওই মুড়ি থেকে বালু আলাদা করলেই সুস্বাদু মুড়ি পাওয়া যায়। একত্রে চার চুলায় ভাজলে দিনে গড়ে ১০০ কেজিরও বেশি ভাজা সম্ভব। রোজার মাসে তাঁদের গড়ে ১০০ কেজি মুড়ি ভাজতে হয়।

Source : Sumon