পায়ে শিকল

গেছি। হেইয়ার লাই মোর ছোট্ট মায় মানু (লোকজন) লইয়া মোর পায়ে শিকল বাইন্দা দেছে। হেইয়ার পর থেইক্কাই মুই পায়ে শিকল বাঁন্দা অস্থায় বাইচ্চা আছি। ভাই আমনে মোর পার শিকলটা খুইলা দ্যান। মুই হ্যামনেগো লাহান ঘুইরা ঘুইরা বাঁচতে চাই।” শিশু কান্নার মতো বিলাপ করে কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার কালনা গ্রামের মৃত ভাষাই হাওলাদারের পুত্র আব্দুল হাকিম হাওলাদার (৪০)।
সরেজমিনে গিয়ে এলাকাবাসি ও পারিবারের লোকজনের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, ৫ বছর বয়সে হাকিমের মা জরিনা বেগম মারা যায়। পরবর্তীতে তার পিতা ভাষাই হাওলাদার দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করে আমিরোন নেছাকে ঘরে আনেন। শিশুকালে হাকিম ঘুমের ঘোরে কি যেন স্বপ্ন দেখে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। সেই থেকে হাকিম পাগল হয়ে গেছে বলে তার ছোট মা আমিরোন নেছা এলাকায় রটিয়ে দেয়। লোকদেখানো ভাবে তিনি হাকিমকে বিভিন্ন ফকিরের কাছে নিয়ে যায়। তারা (কতিথ ফকিররা) হাকিমকে ভাল করার কথা বলে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। এক পর্যায়ে হাকিম আরো অসুস্থ হয়ে পরে। পরিবারের লোকজন হাকিমকে বিয়ে করালে তার ঘরে একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্মগ্রহন করে। পরবর্তীতে হাকিমের স্ত্রী রহিমা বেগম শাশুড়ির নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে হাকিমকে ফেলে চলে যান।
হাকিম হাওলাদার আরো বলেন, ভাই মুই পাগল না, মোরে পাগল কইরা রাখা হইছে। মুই অন্য দশজনের মতো বাঁচতে চাই। কিন্তু মোরে কেন জানি পাগল কইরা রাখছে। হাকিম তার সৎ মাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, দশ বছর ধইরা উনি মোর পা শিকল দিয়া বাইন্দা রাখছে। একটা সুস্থ মানুষরে পাগল বইল¬া তার পায়েও যদি দশ বছর ধইরা শিকল বাইন্দা রাখা হয় হেলে হেওতো পাগল হইয়া যায়। মুই বাঁচতে চাই। মোর কতা কেউ বিশ্বাস করেনা যে মুই পাগল না। মুই এই বন্দি দশা থেকে বাঁচতে চাই।
এ প্রসঙ্গে আমিরোন নেছা বলেন, হাকিম মানষিক ভারসাম্যহীন, তাই তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।