বরাদ্ধের গম বিক্রিত টাকা আ.লীগ নেতাদের পকেটে – উজিরপুরে টি আর প্রকল্পে অনিয়ম দূর্নীতির অভিযোগ

এ সব নেতা কর্মীরা  কাজ না  করে কোথাও নামে মাত্র কাজ করে বরাদ্বকৃত গম বিক্রি করে উক্ত অর্থ আত্মসাত  করেছে  বলে আভিযোগ রয়েছে। অনিয়ম দূর্নীতির মাধ্যমে অধিকাংশ  প্রকল্প চেয়ারম্যানরা প্রকল্পের অনূকুলে বরাদ্বকৃত গমের (ডিও)র বিক্রি করে অর্থ পকেটস্থ করেছে   ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা। সরকারী দর অনুযায়ী  বরাদ্বকৃত গমের মূল্য ৬৭ লক্ষ ৮ হাজার ১ শত বিশ টাকা।

উজিরপুর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ত্রান ও পূর্নবাসন মন্ত্রনালয়ের অধীনে ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে গ্রামীণ অবকাঠামো রক্ষনা বেক্ষনের সংস্কারের আওতায় এ উপজেলার জন্য  ৬ জুন মন্ত্রনালয় থেকে বিশেষ বরাদ্ব ৭৩টি প্রকল্পের বিপরীতে ১৭৫ মেট্রিক টন ও সাধারন ১৯২ টি প্রকল্পের বিপরীতে ২৭২.২০৮ মেঃ টন  টেষ্ট রিলিফ(টি আর)র গম  বরাদ্দ দেওয়া হয়।  ৩০ জুন প্রকল্প বাস্থবায়নের সময় নির্ধারন করা হয়।  গত ২২ জুন ২৬৫ টি প্রকল্পের অনূকুলে উক্ত গমের ডিউ  ছাড় করা হয়। মোট বরাদ্দের শতভাগ  ডিও প্রকল্প চেয়ারম্যানদের ইস্যু করা হয়েছে । প্রকল্প চেয়ারম্যানরা স্থানীয় সরকারি গুদাম থেকে প্রকল্প বাস্থবায়নের জন্য বরাদ্দকৃত  গম উত্তোলন  করে নিয়েছেন  বলে সংশ্লিষ্ঠ সূত্র জানায়।

সরেজমিনে  বিভিন্ন প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে ও  স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্বকৃত টি আর এর প্রকল্পে  প্রতিষ্ঠান প্রধানদের প্রকল্প চেয়ারম্যান করার কথা থাকলেও  অনিয়ম ও দূর্নীতি মাধ্যমে আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের দলীয় নেতা কর্মীদের প্রকল্প চেয়ারম্যান করা হয়েছে। অধিকাংশ প্রকল্প চেয়ারম্যানরা কোন কাজ না করে কোথও কোথাও নামে মাত্র কাজ করে প্রকল্পের নামে বরাদ্বকৃত গম বিক্রি করে তা আত্মসাত করেছে বলে স্থানীয় লোকজন ও প্রতিষ্ঠান প্রধানরা অভিযোগ করেন। আওয়ামীলীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীরা উজিরপুর উপজেলার মাদ্রাসা, মসজিদ, মন্দির, ক্লাব, স্কুলসহ বিভিন্ন প্রতষ্ঠানের নামে প্রকল্প দাখিল করে নিজেরা প্রকল্প চেয়ারম্যান হিসেবে গম উত্তোলন করে বিক্রি করে দিয়েছে। যে সব প্রতিষ্ঠানের নামে প্রকল্প অনুমোদন করে গম বরাদ্ব করা হয় ওই সব  প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পরিচালনা কমিটি কিছুই জানেন না। কোথাও কোথাও অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের নামেও বরাদ্ব করা হয়। গত বুধবার (৪ আগস্ট) উপজেলার উজিরপু ইউনিয়নের জয়শ্রী হাফেজিয়া নূরানী কওমিয়া মসজিদ ও মাদ্রাসায় গিয়ে কথা হয়  ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুহতামিম মোঃ জহিরুল ইসলামের সাথে। তিনি অভিযোগ করেন, উজিরপুর  উপজেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক  মোঃ লিটন র্মৃধা এ প্রতিষ্ঠানের নামে একটি প্রকল্প দাখিল করেন। তিনি নিজেই প্রকল্প কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে কমিটি জমা দিয়ে বরাদ্বকৃত ৫ টন গম উত্তোলন করেন ।

প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্ব করা হলেও আমরা কিছুই জানিা না । পরে বিষয়টি জানান পর  লিটন মৃধা আমাদেরকে মাত্র ১০ হাজার টাকা প্রদান করে যা আমরা তাকে ফেরত দিয়েছি। এ প্রসংগে শিকারপুর ডিগ্রী কলেজ ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক সাকিল মাহমুদ আউয়ার অভিযোগ করেন, মাদ্রাসার প্রকল্প চেয়ারম্যান  প্রকল্পের সম্পূর্ন বরাদ্বই আত্মসাত করেছে। অভিযোগের ব্যাপারে ছাত্রলীগ নেতা লিটনকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিক্রিত গমের পুরো টাকাই মাদ্রাসার কাজে ব্যায় করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক আওয়ামীলীগ নেতা অভিযোগ করেন,  সাতলা ইউনিয়নের পূর্ব রাজাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার করার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা অরুন বল্লভ স্কুলের নামে প্রকল্প জমা দিয়ে  বরাদ্বকৃত ৪ মেঃ টন গম বিক্রি করে তা পকেটস্থ করেন।

অরুন বল্লভ অভিযোগ অন্বীকার করেন। উজিরপুর উপজেলা যুবলীগের অর্থ বিষয়ক সম্পাদক খাইরুল বাসার লিটন অভিযোগ করেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি খালেক আজাদ উত্তর সাতলা আলো শিখা প্রি স্কুল সংস্কার করার জন্য প্রকল্প জমা দিয়ে ৪ টন গম উত্তোলন করে তা আত্মসাত করেন। অভিযোগের ব্যাপারে আওয়ামীলীগ সভাপতি খালেক আজাদ বলেন , আমি কোন প্রকল্পের সিপিসি হিসেবে গম উত্তোলন করিনি এবং এ রকম প্রকল্প আছে কিনা তা আমার জানা নাই ।  শিকারপুর প্রভাতি কিন্ডার গার্ডেনের সংস্কার করার জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মোঃ হারুন অর রশিদ মৃধা প্রকল্প কমিটি দাখিল করে ২ টন গম উত্তোলন করেন। প্রতিষ্ঠানের প্রধান মোঃ ফিরোজ সিকদার জানান, বিষয়টি তার জানা নেই। এবং  আমার প্রতিষ্ঠানের কোন কাজ করা হয়নি। হারতা দক্ষিন নাতার কান্দি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির জনৈক সদস্য অভিযোগ করেন, হারতা দক্ষিন নাতার কান্দি রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয় সংস্কার করার জন্য হারতা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক অমল চন্দ্র প্রকল্প জমা দিয়ে ৪ টন গম উত্তোলন করেন। সরকারী বাজার দর অনুযায়ী উক্ত গমের মূল্য ৬০ হাজার টাকা।  তিনি ৭/৮ হাজার টাকার নামে মাত্র কাজ করে তা আত্মসাত করেন । অভিযোক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ সত্য নয়। আমি গম বিক্রিত সম্পূর্ন টাকা দিয়ে উন্নয়ন কাজ করেছি। উজিরপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি ও সানুহার দাখিল মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সদস্য স্কুল শিক্ষক মোঃ সোলায়মান সেলিম অভিযোগ করেন, তার মাদ্রাসার নামে জনৈক ছাত্রলীগ নেতা শাহিন প্রকল্প দাখিল করে ২ মেঃ টন গম উত্তোলন করে তা আত্মসাত করেছে। এ বরাদ্বের ব্যাপারে মাদ্রাসার কতৃপক্ষ কিছুই জানেন না। অভিযোগোর ব্যাপারে শহিনের বক্তব্য নেয়ার চেস্টা করে তাকে মোবাইল ফোনে পাওয়া যায়নি।

পূর্ব ধামসর জাগ্রতী যুব সংঘের  সংস্কারের জন্য স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মো: এনায়েত হাওলাদারকে ৫টন, পশ্চিম মুন্ডপাশা জামে মসজিদ উন্নয়নের জন্য আ. লীগ নেতা মোজাম্মেল মোলাকে ৩টন, বাহেরঘাট দাখিল মাদ্রাসা ও জামে মসজিদ উন্নয়নের জন্য আ. লীগ নেতা আলী হায়দার নান্নুকে ৩টন গম বরাদ্দ দেয়া হয়। ওই প্রকল্পের প্রকল্প চেয়ারম্যান (সিপিসি) আ’লীগ নেতারা কাজ না করে বরাদ্বের গম বিক্রি করে তা আত্মসাত করেছে  বলে একাধিক আওয়ামীলী নেতা ও স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। তারা বলেন,  ক্ষমতার প্রভাব বিস্তার করে প্রকল্প চেয়ারম্যানরা  প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নের নামে তারা   কাগুজে কলমে প্রকল্প কমিটি জমা দিয়ে  অসত্য বিল ভাউচার দাখিল করে বিক্রিত গমের টাকা   আত্মাসাত করে নিজেদের উন্নয়ন করেছে।  এ অভিযোগের ব্যাপারে বাহেরঘাট দাখিল মাদ্রাসা ও জামে মসজিদের সিপিসি ও জল্লা ইউনিয়ন আ’লীগ সাধারন সম্পাদক আলী হায়দার নান্নুসহ অন্যান্য সি পি সি ও আ’লীগ নেতাদের কাছে জানতে চাইলে তারাও   অভিযোগ অস্বীকার করেন ।

গ্রামীন অবকাঠামো রক্ষনা বেক্ষনের  জন্য টেষ্ট রিলিফ (টিআর)র প্রকল্প বাস্থবায়নে অনিয়ম ও দূর্নীতির অভিযোগ  প্রসঙ্গে  উজিরপুর উপজেলা ত্রান ও পূর্নবাসন কর্মকর্তা (পি আই ও) সুমন চন্দ্র দেবনাথের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অভিযোগ পরোপুরি সত্য নয়। অনেক জায়গায় ভাল কাজ হয়েছে অনেক জায়গায় খারাপ কাজের অভিযোগ আছে । যারা কাজ করেনি তাতের কাজ করার জন্য বলা হয়েছে ,ঠিক মত কাজ না করলে তাদের বিরুদ্বে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। ভূয়া প্রকল্পের নামে বরাদ্ব নেয়া প্রসংঙ্গে তিনি বলেন,  ভূয়া প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্ব নিয়েছে এ রকম তথ্য আমার জানা নেই। অভিযোগ পেলে এ ব্যাপারেও প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা নেয়া হবে। এ ব্যাপারে  উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রিয়সিন্ধু তালুকদারের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন , আমাদের কাছেও এ রকম অভিযোগ এসেছে । সরেজমিনে গিয়ে বিষয়গুলো তদন্ত করা হচ্ছে। যেখানে অভিযোাগর সত্যতা পাওয়া যায় তাদের পুনরায় কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যদি এর পরেও কাজ করা না হয় তাহলে তাদের বিরুদ্বে টি আর প্রকল্পের নীতিমালা অনুযায়ী আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

তথ্য সহযোগীতায়ঃ জহুরুল ইসলাম জহির (প্রথম অলো, গৌরনদী প্রতিনিধি)