আঁড়িয়াল খা ও সন্ধ্যা নদীতে ইলিসের আকাল – গৌরনদী – উজিরপুরের ১০ হাজার জেলে পরিবারের মানবেতর জীবন যাপন

এত কইলাম মোরা আর ছোট মাছ ধরমু না কিন্তু কেউই হোনে না । বেশী লোভ কইররা  হগলডি এহন না খাইয়া মরতাছি।  হতাসার শুরে কথাগুলো বলছিল বরিশালের গৌরনদী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামের জেলে মোঃ আলাউদ্দিন(৫০)। এ কথা শুধু আলাউদ্দিনের না একইভাবে জানালেন দক্ষিন হোসনাবাদ গ্রামের আঃ জলিল(৩৫) মোঃ মোতালেব মিয়া (৩৬) বাবুগঞ্জ উপজেলার রহিমগঞ্জ গ্রামের কেরামত আলী (৪৮) উজিরপুর উপজেলার সিকদারপাড়া গ্রামের মোঃ মাহে আলম (৪০) মোঃ সোহাগ (২৫) সহ অনেকেই।

স্থানীয় মৎস্য অফিস ও জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে বরিশালের গৌরনদী ও উজিরপুর উপজেলার প্রায় ১০ হাজার জেলে পরিবার রয়েছে। এরা আড়িয়াল খার শাখা নদী গৌরনদীর পালরদী ও উজিরপুরের সন্ধ্যা নদীতে মাছ ধরে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে । ইলিসের মৌসুম প্রায় শেষ । চলতি মৌসুমের শুরু থেকে ভরা মৌসুমেও পালরদী ও সন্ধ্যা নদীতে ইলিসের আকাল দেখা দিয়েছ্।জেলেরা অলস সময় কাটাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ওই ভাবে ইলিস ধরা পড়ছে না , জেলেদের জালে মাঝে মধ্যে দু একটি ইলিস দেখা যায়। স্থানীয় জেলেরা  জানান, নদীতে মাছের আকাল দেখা দেয়ায় মড়ার উপর যেন খাঁড়ার ঘ্। একে তো পেট চালানো দায়, তার উপর  মহাজনের দেনা । এ দুই উপজেলার প্রায় ১০ হাজার ইলিস জেলে এখন অভাব অনাটনের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পরিবার পরিজন নিয়ে তারা মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। উজিরপুর সিকদার পাড়া গ্রামের মাহে আলম জানান, এক সময় মাছের বিশাল বাজার ছিল উজিরপুর । বর্তমানে মাছশুন্য বন্দর উজিরপুর । গৌরনদীর হোসনাবাদ গ্রামের কেরামত আলী জানান , সারা দিন নদীতে সময় কাটানোর পরেও ইলিসের দেখা নাই।   পালরদী ও সন্ধা নদীতে গত দু তিন বছর ধরে মাছ কমে গেছে। তবে এ বছর যেন মাছের আকাল  পড়েছ্ ে। একই গ্রামের আঃ সাত্তার (৫২) বলেন, এহন সংসার চালাতে পারছিনা । পোলাপান লইয়া ডাল ভাত খাবারও জোগার হয় না। মাছ ধইরা পোষাইতে পারি না ।

নদীতে যাইয়া কি করমু  তাই অলস সময় কাটাই। সাহেবরামপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন , মহাজনের কাছ থেইক্কা ২৫ হাজার টাকা দাদন নিয়েছিলাম , মনে করছি মাছ ধইরা সংসার চালাইয়া মহাজনের দেনা দিমু কিন্তু মাছ পাইতাছি না । সংসার চালানোর লাইগ্যা প্রত্যেক দিন মহাজনের কাছ থাইক্যা ধার দেনা কইরা  পোলা পান লইয়া কোন রকম অর্ধাহারে অনাহারে বাইচা আছি। উজিরপুরের আড়ৎদার  আঃ হাকিম জানান, উজিরপুর হইতে বানরিপাড়া পর্যন্ত  সন্ধ্যা  নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত বর্তমানে মাছ নাই। প্রতি বছর বৈশাখ থেকে আষাড় মাস পর্যন্ত জেলেরা বেপরোয়াভাবে ঝাটকা ধরায় আজ এ অবস্থার সৃস্টি হয়েছে বলে তিনি জানান। স্থানীয়  সাধারন জেলেসহ মৎস্য ব্যাবসার সাথে  জড়িত সবার অবস্থাই এখন বেগতিক।

গৌরনদী  উজিরপুর এলাকার ইলিস জেলেরা আরো জানান, নদীতে জাল ফেলে তাদের ইলিস শুন্যভাবে  বাড়ি ফিরতে হয়।  হোসনাবাত বন্দরের আড়ৎদার মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, আগে এই বাজারে প্রতিদিন লক্ষ লক্ষ টাকার ইলিস বেচাকেনা হত বর্তমানে ১০/১২ হাজার টাকার ইলিস বেচাকেনা হওয়া কস্টকর। সরেজমিনে মাছ বাজারে  গিয়ে দেখা যায়, বাজারগুলো ঝাটকায় ছয়লাব। প্রতিটি বাজারেই ৬/৭টায় কেজি ওজনের মাছ তিনশত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অবৈধ ঝাটকা কেন বিক্রি করা হচ্ছে জানতে চাইলে গৌরনদী পৌর কাচা বাজারের মাছ ব্যাবসায়ী মুনসুর আলী(৫৫) উজিরপুর বন্দরের জানে আলম জানান, আমারা কিনে বিক্রি করি । জেলেরা ঝাটকা না  ধরলেই পারে তাহলে আমরা বিক্রি করবো না।

এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত মৎস কর্মকর্তা মোঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, জেলেরা যাতে ঝাটকা না ধরে সে জন্য তাদের পূর্নবাসনের জন্য উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এ উপজেলার ৩৭২ জন জেলেকে ৪ মাসের জন্য প্রতি মাসে  ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে । ঝাটকা নিধন বন্ধ করা হলেই জেলেদের জালে ইলিস ধরা পড়বে এবং জেলেদের দূর্দিন কেটে যাবে । ঝাটকা নিধনকারীদের বিরুদ্বে ব্যাবস্থা নেয়া হবে। গৌরনদী উপজেলা মৎস্য অফিসার প্রনব কুমার জানান, এ অঞ্চলে ইলিসের  পুরানো জায়গায় ফিরে যেতে হলে ঝাটকা নিধন বন্ধ করতে হবে।
তথ্য সহযোগিতায়ঃ জহুরুল ইসলাম জহির (প্রথম আলো গৌরনদী প্রতিনিধি)