গৌরনদীতে মুসলমানদের আগমন ও ইসলাম প্রচার

আগমন ঘটে। ঐ সময়ে সূদুর মধ্যপ্রাচ্য থেকে কয়েকটি মুসলিম পরিবারের লোক ব্যবসায়ের উদ্দেশ্যে গৌরনদী আসেন এবং বসতি শুরু করেন। সূত্রমতে ১৫শ শতকের মধ্যবর্তী সময়ে ইসলাম প্রচারের জন্য এখানে আসেন হযরত খানজাহান আলী। তিনি তাঁর সহযোগিদের নিয়ে গৌরনদীর খাঞ্জাপুরে বসতি স্থাপন করে ধর্ম প্রচার শুরু করেন। একই সময় তিনি বাগেরহাট, খুলনা, যশোর ও ফরিদপুর অঞ্চলে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। তারই নামানুসারে গৌরনদী একটি গ্রামের নাম খাঞ্জাপুর হয়েছে। বর্তমানে ওই নামে রয়েছে একটি ইউনিয়ন। তখন তিনি অত্র এলাকায় একাধিক মসজিদ ও দীঘি খনন করেন। ঐতিহাসিক কসবার আল্লার মসজিদ, পশ্চিম বাউরগাতির মসজিদ, কমলাপুরের মসজিদ তার সময় নির্মিত হয়েছে বলে এলাকাবাসী দাবী করেন। নয় গম্বুজ বিশিষ্ট কসবার আল্লার মসজিদে রয়েছে মূল্যবান শ্বেত পাথরের তৈরী ৪টি স্তম্ভ এবং ১২টি ব্র“জ, দেয়ালগুলো ৬ফুট পুরু। ঐতিহাসিক আল্লার মসজিদ বরিশাল জেলার বৃহত্তম মসজিদ। খানজাহান আলী ওইসময় ৩৬৫ খানা মসজিদ ও ৩৬৫ টি দীঘি খনন করেন। কসবার আল্লার মসজিদ কুড়ের ন্যায়। বিভিন্ন মসজিদে বসেই ইসলাম প্রচারের কাজ চালাতেন খানজাহান আলী। সাঁতুরিয়ার মিয়াদের পূর্ব পূরুষ শাহ সাজেন্দ তার সফর সঙ্গী ছিলেন। ওই সময় হাজার হাজার অমুসলিম খানজাহান আলী ও তার সফর সঙ্গীদের হাতে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করেন। (১৬০৬-২৭) সম্রাট জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে গৌরনদীতে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন হযরত দুধকুমারমল্লিক শাহ। মোগল আমলের পীর আউলিয়াদের মধ্যে তিনি অন্যতম ছিলেন। তিনি ইয়েমেনের বাদশাহর ২য় পুত্র ছিলেন। তারা একই সাথে ৭ ভাই ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যে ভারতবর্ষে এসেছিলেন বলে জানা গেছে। সম্রাট জাহাঙ্গীর তার শাসনামলে গৌরনদী এসে দুধ কুমারের সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাকে ১৬ দরুন ১৩ কানী সম্পত্তি নিষ্কর হিসাবে প্রদান করেন। এজন্য কসবার নাম লাখেরাজ কসবা হয়েছে। সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রদত্ত লাখেরাজের তাম্রলিপি কসবার কাজীদের নিকট আছে। দুধ কুমার দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল ও ফরিদপুর অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন। ওই সময় তিনি পদ্মবুনিয়া, বোয়ালিয়া, মালি, মাসোর আন্ধি খনন করেন। দুধ কুমারের সাথে শাহ বংশের বহুলোক কসবায়এসেছিলেন। বর্তমানে তাদের ১৩ পুরুষ চলছে। মৃত্যুর পরে কসবার গোহাটের পার্শ্বেই তাকে সমাহিত করা হয়। পরে সেখানে মাজার তৈরী করা হয়। শাহ বংশ উক্ত মাজারের রক্ষণাবেক্ষণ করছে। ১৭’শ শতকের দিকে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য এসেছিলেন সৈয়দ কুতুব শাহ। তিনি সম্রাট জাহাঙ্গীরের প্রধান উজির উলফৎ গাজীর পুত্র ছিলেন। সর্বপ্রথমে তিনি মুলাদীর তেরচরে বসতি স্থাপন করেন। তেরচর নদী ভাঙ্গনের মুখোমুখি হলে কুতুব শাহগৌরনদীর নলচিড়া গ্রামে পুনরায় বসতি শুরু করেন। জানা গেছে, সমাজসেবী ছাবি খাঁ মীর কুতুব শাহের জ্ঞানে মুগ্ধ হয়ে তাকে লাখেরাজ সম্পত্তি প্রদান করেন। কথিত আছে কুতুব শাহ জীবন্ত কবর নিয়েছিলেন। তিনি নলচিড়া মিয়া বাড়ীতে মসজিদ নির্মান ও দীঘি খনন করেন। তিনি কৃষ্ণ পাথরের ওপর হযরত মুহম্মদ (সঃ) পায়ের ছাপ বা কদম রসুল রেখে গেছেন। তার সময়ের পাথরের খোদাইকৃত কলেমা তৈয়েবা ও হাতের লেখা একখানা কোরান শরীফ মিয়া বাড়ীতে আছে। ওই বাড়ীতে তার সফরসঙ্গী বার আওলিয়ার মাজার রয়েছে। প্রতিবছর ফাল্গুনের পূর্নিমায় মাজারে মেলা ও ওরস অনুষ্ঠিত হয়। পরবর্তী সময়ে হাজী শরিয়ত উল্লাহ, মাওলানা কাশেমসহ বিভিন্ন ইসলাম প্রচারকগণ এতদাঞ্চলে ইসলাম প্রচারের জন্য অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।