উদোর পিন্ডি বুধোর ঘারে–ডেট লাইন বিল্লগ্রাম

তৎকালীন সময়ে বিভিন্ন দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ ও ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্যে জানা গেছে, ২০০১ সালের নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে গৌরনদীর বিল্লগ্রামের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন এমনকি আওয়ামীলীগ সমর্থিতরাও ছিলো ওই এলাকার কতিপয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদল ক্যাডারদের হাতে জিম্মি। ওই ক্যাডারদের হাত থেকে সেদিন রেহাই পায়নি আওয়ামীলীগ সমর্থক ওই এলাকার খেটে খাওয়া দিনমজুর ভ্যানচালকও। তৎকালীন সময় ওই এলাকার মুর্তিমান আতংক ছিলো বিএনপি নেতা আনোয়ারা সাদাত তোতা, যুবদল নেতা কাজী জসিম, মিরন গোমস্তা ও কিবরিয়া বেপারী। আর তাদের ছিলো নিজস্ব পেটোয়া বাহিনী।

সূত্রমতে, নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার অপরাধে ২০০১ সালের ৪ অক্টোবর বিএনপির ওই ক্যাডাররা জঙ্গলপট্টি গ্রামের আওয়ামীলীগ সমর্থক দুলাল সোম, কৃষ্ণ মিস্ত্রি, গোবিন্দ দে, বিমল নন্দি, প্রিয়লাল নন্দি, জয়দেব পালের বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে।-(সূত্র: দৈনিক আজকের কাগজ)। ২ সেপ্টেম্বর বিকেলে ওই ক্যাডাররা বিল্লগ্রাম বাজারে বসে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে কাসেমাবাদ গ্রামের ছাত্রলীগ কর্মী আমিনুল ইসলাম রিপন সরদারকে মারধর করে তার সাথে থাকা নগদ অর্থ, মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। তাদের অপরাধ ছিলো নৌকা মার্কায় ভোট দেয়া। ১ লা ফেব্র“য়ারি কোরবানির ঈদের আগেরদিন আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌর কমিশনার বাবুল খানের মোটর সাইকেল ছিনিয়ে নেয় উল্লেখিত ক্যাডাররা।-(সূত্র: দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল)।

২০০৪ সালের ১০ মার্চ ওই ক্যাডাররা বিল্লগ্রামের তুলসী পালের কাছে মোটা অংকের টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদার টাকা দিতে অপরাগতা প্রকাশ করায় ১১ মার্চ তুলশী পালকে অবরুদ্ধ করে রাখে ওই চাঁদাবাজরা। চাঁদাবাজির প্রতিবাদ করেন স্থানীয় ভ্যানচালক আকবর আলী খন্দকার। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওই সন্ত্রাসীরা ভ্যানচালক আকবর আলীর ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে। আহত আকবর আলীকে হাসপাতালে যেতে বাঁধা প্রদান করে ওই চাঁদাবাজরা। উপায়অন্তুর না পেয়ে ওইদিন রাতে আওয়ামীলীগ সমর্থক তুলশী পাল চাঁদাবাজদের ৫ হাজার টাকা দিয়ে রেহাই পান।-(সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক/দৈনিক আজকের বার্তা)।

২০০৫ সালের ৯ সেপ্টেম্বর দাবিকৃত চাঁদা না পেয়ে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা জঙ্গলপট্টি গ্রামের তিনজন নিরিহ ব্যক্তির ওপর হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করে। সূত্রে আরো জানা গেছে, বরিশাল এলজিইডির তত্বাবধানে জঙ্গলপট্টি গ্রামে একটি স্লুইজ গেট নির্মানের কাজ চলছিলো। স্লুইজগেট নির্মানের স্থানের জমির মালিক স্থানীয় সমির দে, কালিপদ দেকে সরকার ক্ষতিপূরনের নগদ অর্থ দিয়ে কাজ শুরু করে। ওই টাকার ওপর লোলুপ দৃষ্টি পরে উল্লেখিত সন্ত্রাসীদের। তারা ২৫ হাজার টাকা চাঁদাদাবি করে সমির ও কালিপদ দের কাছে। দাবিকৃত চাঁদার টাকা পরিশোধ না করায় ওই সন্ত্রাসীরা ৯ সেপ্টেম্বর সকাল আটটার দিকে সমীর ও কালিপদ দের ওপর অর্তকিত ভাবে হামলা চালিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় হামলাকারীদের বাঁধা দিতে গিয়ে গুরুতর আহত হন স্থানীয় নিরঞ্জন কর ও সুভাষ দত্ত। সন্ত্রাসী হামলায় ওইদিন সুভাষ দত্তের একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। (সূত্র: দৈনিক খবরপত্র/দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল)।

ওই বছরের ৮ সেপ্টেম্বর গভীর রাতে উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা বিল্লগ্রামের অনুপ পালের গৃহে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে তার পরিবারকে জিম্মি করে। এক পর্যায়ে ওই সন্ত্রাসীরা অনুপ পালের বসতঘর থেকে একটি মোবাইল ফোন, স্বর্ণালংকার, নগদ অর্থসহ ৫০ হাজার টাকার মালামাল লুট করে নেয়।-(সূত্র: দৈনিক দক্ষিণাঞ্চল)। ওই বছরের ১১ অক্টোবর রাতে হিন্দু ধর্মাবোলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দূর্গাপূজা চলাকালীন সময় উল্লেখিত সন্ত্রাসীরা জঙ্গলপট্টি গ্রামের ননী গোপাল গোস্বামীর বাড়ির সার্বজনীন শীতলা মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর করে। (সূত্র: দৈনিক যুগান্তর)। এছাড়াও ২০০১ সালের নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে ওই সন্ত্রাসীরা বিল্লগ্রামের (হা) নামের প্রথম অক্ষরকে গণধর্ষন করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।

বিগত চারদলীয় জোট সরকারের বিদায় ঘন্টা বাজার পর ওইসব সন্ত্রাসীরা দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকলেও বর্তমানে পূর্ণরায় আবার সংগঠিত হচ্ছে বলে ভূক্তভোগীরা জানান। ওইসব সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সঠিক তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভুক্তভোগীরা প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে জোড় দাবি জানিয়েছেন।