“মোগো সব শ্যাষ হইয়া গ্যাছে-পোলা পান লইয়া এ্যাহন কেমনে বাঁচমু”

কন্ঠে কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার বার্থী ইউনিয়নের প্রত্যন্ত দক্ষিণ বাউরগাতি গ্রামের মজিবর হাওলাদার (৪৫)। একথা শুধু মজিবরেরই নয়। একইভাবে জানালেন একই গ্রামের গণি সিকদার, সাহেদ আলী, আলাউদ্দিন মীর, হালিম সিকদার, এচাহাক আলী, আবু ফকির, ওহাব আলী খান, মোশারেফ ঘরামী, খলিল সিকদার, শাহাবুদ্দিন সাহেব আলী সরদার, সবুজ খানসহ অনেকেই।

নদীর পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হওয়ায় আড়িয়াল খাঁর শাখা পালরদী নদীর তীরবর্তী দক্ষিণ বাউরগাতি গ্রামের নিন্মাঞ্চল গত এক সপ্তাহ আগেই তলিয়ে যায়। এরইমধ্যে গতকাল রবিবারের প্রবল বৃষ্টিতে ওই এলাকার প্রায় শতাধিক পান চাষীর প্রায় দশ হাজার পানবরজ এখন পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। গতকাল রবিবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, তলিয়ে যাওয়া পান বরজের চারিপার্শ্বে মাটি দিয়ে কাঁচা বেঁধে পান চাষীরা ডিজেলচালিত শ্যালো ইঞ্জিন মেশিন বসিয়ে পানবরজের মধ্যের পানি নিস্কাশনের আপ্রান চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই নতুন শ্যালো ইঞ্জিন মেশিন ক্রয় করে নিয়ে পানি নিস্কাশনের ব্যর্থ চেষ্ঠা করছেন।

দক্ষিণ বাউরগাতি গ্রামের দিনমজুর মজিবর হাওলাদার গত এক মাস পূর্বে বিভিন্ন এনজিও থেকে ঋণ উত্তোলন করে দুই’শ খানা পানবরজ গড়েছিলেন। গতকাল রবিবার সকালের প্রবল বর্ষনে তার শেষ সম্বলটুকু শেষ হয়ে গেছে। কান্নাজড়ির কন্ঠে মজিবর হাওলাদার বলেন, ৫ সদস্যর সোংসারে মোর একমাত্র আয়ের উৎস ছিলো এই পানবরজ। মোর সব শ্যাষ হইয়া গ্যাছে, এ্যাহোন মুই পোলাপান লইয়া ক্যামনে বাঁচমু। বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পরেন মজিবর।

পান চাষী খলির সিকদার জানান, তার দেড়’শ খানা পান বরজ গতকাল রবিবারের প্রবল বর্ষনে তলিয়ে যায়। তিনি নতুন শ্যালো ইঞ্জিন মেশিন বসিয়ে পানি নিস্কাশনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকেই পানি নিস্কাশনের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে পানবরজ অদূরে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। শুধু দক্ষিণ বাউরগাতিই নয় একইদৃশ্য দেখা গেছে, কটকস্থল, খাঞ্জাপুর, কমলাপুর ও গোরক্ষডোবা গ্রামে।

গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার মন্ডল জানান, আড়িয়াল খাঁ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে শাখা পালরদী নদীর পানি বেড়ে গৌরনদী উপজেলার বার্থী ও খাঞ্জাপুর ইউনিয়নের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ফলে ওইসব এলাকার পান বরজ, মাছের ঘের ও ফসলি জমি তলিয়ে গেছে। পান চাষীদের এ অপূরনীয় ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে তিনি সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে সাহায্যের দাবি জানিয়েছেন।