ডুংশ্রী গ্রামের কাহিনী…

মারধর, গায়ের জামা খুলে গলায় জুতার মালা পরিয়ে সারা গ্রাম ঘুরিয়েছে বখাটে ও তাদের অভিভাবকরা। গত শুক্রবার দক্ষিণ সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের ডুংশ্রী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার পর থেকে মেয়ের বাবা মুজিবুর রহমান হাব্বান (৭০) নিখোঁজ রয়েছেন। বখাটেরা মুজিবুর রহমানকে অপমান করে শেষ পর্যন্ত খুন অথবা অপহরণ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন তাঁর পরিবারের সদস্যরা। তবে স্থানীয়দের ধারণা, অপমান সইতে না পেরে মুজিবুর রহমান হয়তো আত্মহত্যা করেছেন। মুজিবুর রহমানের স্ত্রী হাওয়ারুন নেছা বাদী হয়ে দক্ষিণ সুরমা থানায় একটি এজাহার দিয়েছেন। তবে পুলিশ গতকাল শনিবার রাত ৯টা পর্যন্ত নিখোঁজ ব্যক্তির সন্ধান পায়নি। ফলে ওই পরিবারটি এখন চরম দুশ্চিন্তা ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। মুজিবুর রহমানের স্ত্রীর দায়ের করা এজাহারে যাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হচ্ছে ডুংশ্রী গ্রামের মৃত আরছল আলীর ছেলে শাহাব উদ্দিন ও শামছুদ্দিন, মৃত মকরম আলীর ছেলে সাদিক, মৃত সোনাফর আলীর ছেলে সালেহ আহমদ সালিক, আকলু মিয়ার ছেলে সাজু, শাইস্তা মিয়ার ছেলে আলামীন, ছত্তার মিয়ার ছেলে লুৎফুর রহমান, মৃত শমছু মিয়ার ছেলে ফয়জুল, মৃত দুদু মিয়ার ছেলে নোমান, ইকরাম আলীর ছেলে মুকিত, মৃত তেরা মিয়ার ছেলে চেরাগ আলী। অভিযুক্তরা গ্রামের প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়।


Photobucket

৭০ বছর বয়সী বাবাকে নেংটা করে গলায় জুতার মালা পরিয়ে গ্রামে ঘুরানো হয়েছে কারণ বাবা তার মেয়েকে অপমান করায় প্রতিবাদ করেছিল। বখাটেদের হরেক রকম অপকর্মের সাথে আমরা কম বেশি সবাই পরিচিত। হত্যা, খুন, জখম, এসিড নিক্ষেপ, দোররা মারা এসব ঘটনা এখন গ্রাম বাংলার মহামারী। ক্ষমতাসীন দল এবং প্রশাসনের সহায়তায় বাংলাদেশে এখন গণহত্যা করেও রেহাই পাওয়ার রাস্তা খোলা। আসুন মুহূর্তের জন্যে ফিরে যাই সুরমা উপজেলার সিলাম ইউনিয়নের ডুংশ্রী গ্রামে। আলিম কোর্সের ছাত্রী তসলিমাকে পায়ে হেটে মাদ্রাসায় যেতে হয়। বাংলাদেশের কোটি কোটি ছাত্রীর মত এই তসলিমাকেও মোকাবেলা করতে হয় ভাসমান পতিতার মত রাস্তায় দাড়িয়া থাকা তথাকথিত বখাটেদের। আসলেই কি ওরা বখাটে? গ্রাম বাংলার সাদামাটা জীবনের সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের কাছে এই বখাটের পরিচয় কেবল বখাটে হিসাবেই নয়। ওরা সচ্ছল পরিবারের বখে যাওয়া প্রতিনিধি, যাদের মাথার উপর থাকে পরিবারিক আশির্বাদ। এলাকার মাতব্বর, ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বার চেয়ারম্যান, হঠাৎ করে গজিয়ে উঠা ব্যবসায়ীদের সন্তানেরাই নাম লেখায় ভাসমান পতিতার খাতায়। ভাসমান হলেও এদের ভাল করেই জানা থাকে তাদের খুঁটির জোড়। শাওনের মত খুনিদের উত্থান হয় এদের হাত ধরেই। কেউ এমপি, কেউ মন্ত্রী কেউবা আবার প্রধানমন্ত্রী হতে ওদের হাত ধরেই পাড়ি দেয় আমু দরিয়া। বখাটেদের তা ভাল করেই জানা থাকে। ওদের আরও জানা থাকে বাংলাদেশের থানা পুলিশকে কেনা যায় এক প্যাকেট আকিজ বিড়ি দিয়ে।

ডুংশ্রী গ্রামের একদল বিপদগামী তরুণদের শাস্তি দিলেই বৃদ্ধ মজিবর অপমানের বিচার হয়ে যাবে এমনটা যারা ভাবেন তারা নিশ্চয় বাংলাদেশের নষ্ট রাজনীতির গৃহপালিত টিয়া পাখি। বাংলাদেশ ক্যান্সারে আক্রান্ত একটা রুগি, এর মেজর সার্জারি প্রয়োজন, টিয়া পাখির শেখানো বুলি নয়। যতদিন এই সার্জারি না হচ্ছে let me have the privilege to zip off my pant and pee on local and national politics, on administration, on law & order agencies, and above all, on those who did this to a 70 year old father.

মিলিয়ন ডলার ব্যায় করে ১০১ জন চামচা নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী নিউ ইয়র্ক গেছেন ১০ মিনিটের ভাষণ দিতে। শুনছি তিনি নাকি গ্লোবাল জলবায়ু নিয়ে কথা বলবেন। জনবিচ্ছিন্ন এসব নেত্রীদের কি জানা আছে গ্লোবাল জলবায়ুর চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা আমাদের সমাজে বিদ্যমান? আমাদের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে দূরের দেশ নিউ ইয়র্ক যাওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। আমাদের সমস্যা সুরমা নদীর দেশ সিলেটে। কোথাও যদি যেতে হয় প্রধানমন্ত্রীর যাওয়া উচিৎ সিলাম ইউনিয়নের ডুংশ্রী গ্রামে।
http://www.dailykalerkantho.com/?view=details&type=gold&data=Forum&pub_n…

 


 


পেপ্পি কেভিনিয়ামির নিউ ইয়র্ক যাত্রা এবং ..

পাঠক, পেপ্পি কেভিনিয়ামি নামের একজন ভিনদেশি মহিলার কথা কি মনে আছে আপনাদের? নামটা যাদের কাছে অপরিচিত তাদের একটু ধৈর্য্য ধরার অনুরোধ করব। এই ফাঁকে একটা খবর বলে নেই, এ যাত্রায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছেন না এই মহিলা। তন্নতন্ন করে খুঁজলাম কিন্তু পেলাম না। ১০১ জনের তালিকায় ঠাঁই হয়নি এ যাত্রায়। কারণ ছাড়াই মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাংলায় একটা কথা আছে, বন্যরা বনে সুন্দর শিশুরা মাতৃ ক্রোড়ে। সদ্য জন্ম নেয়া শিশুকে যেমন মায়ের কোলে বেশি মানায় তেমনি পেপ্পিকেও চমৎকার মানায় দেশীয় মিছিলে। আফটার অল রাজতন্ত্রের তিনিও যে উত্তরাধিকারীনি! গভীর আগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে থাকব দেশের বিচার ব্যবস্থার দিকে। আশা করব অনেক কিছুর মত ভদ্রমহিলার প্রতি এই অকাল বৈষম্যও হাল্কাভাবে নেবেন না ’মহামান্য’ বিচারকগণ। এবার আসছি তাদের কাছে যারা কেভিনিয়ামি নাম নিয়ে ত্যানা প্যাঁচানো শুরু করে দিয়েছেন ইতিমধ্যে। জাতিতে ফিন, অর্থাৎ ফিনল্যান্ডের বাসিন্দা। প্রাসঙ্গিক ভাবে একটা কথা বলে রাখা ভাল, বাংলাদেশ যদি চুরি-চামারিতে পর পর চার বার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়ে জাতির মুখ ’উজ্বল’ করে থাকে, ফিনল্যান্ড নামের দেশটাও অচুরি-অচামারি প্রতিযোগীতায় অনাদিকাল ধরে চ্যাম্পিয়ন হয়ে ফিন জাতিকে গভীর হতাশায় ডোবাচ্ছে। যেভাবেই দেখি না কেন, তালিকার দুই মেরুতে অবস্থান আমাদের। ব্যাক্তিগত ও পারিবারিক পকেট পূর্তির টেকনোলজিতে আমাদের অবস্থান বিপরীত মেরুতে হলেও হৃদয়ঘটিত ব্যাপারে এসব যে খুব একটা সমস্যা তৈরী করেনা তার প্রমাণ এই পেপ্পি। হ্যা, পেপ্পি কেভিনিয়ামি ব্রিটেন প্রবাসি বাংলাদেশি নাগরিক (নাকি বৃটিশ!) রেদোয়ান সিদ্দিকের স্ত্রী। জনাব সিদ্দিকের আরও একটা পরিচয় আছে, উনি যেন তেন বাংলাদেশি নন, দেশীয় সিংহাসনের সেকেন্ড ইন কমান্ড জনাবা শেখ রেহানার সন্তান। রেহানার সন্তান ফিনিশ না নাইজেরিয়ান ললনা বিয়ে করবে এ নিয়ে আমার মত হাভাতে জনগণের মাথা ঘামানোর কথা নয়। আসছি সে প্রসংগে।

১০১ জন সহযাত্রী নিয়ে নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। উদ্দেশ্য জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ। ১০১ জনের মধ্যে যেমন আছেন কবি-সাহিত্যিক, রাজনীতিবিদ তেমনি আছেন প্রফেশনাল খুনি। তবে এদের সবাইকে যে জাতিসংঘ ভবনে যেতে হবে তার কোন বাধ্য বাধকতা নেই। নেত্রীর পূজার প্রতিদান, এভাবেই বর্ণনা করলেন পরিচিত এক আওয়ামী নেতা। ফ্লোরিডার এক বন্ধু ফোন করে জানাল তার শ্বশুর বাড়ির কেউ একজন আসছেন প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হয়ে। আমেরিকায় নাকি এই প্রথম, তাই যথাযোগ্য আয়োজনের অনুরোধ করেছেন। আমি নিশ্চিত যারা আসছেন তাদের সবারই কেউ না কেউ আছেন এ দেশে এবং অতিথি আপ্যায়নে ত্রুটি করবে না প্রবাসী বাংলাদেশিরা।

একই কাজে খালেদা জিয়া শেষবার যখন নিউ ইয়র্ক এসেছিলেন খুব কাছ হতে দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল নেত্রীর সফরসূচির কিয়দংশ। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর এক ক্যাপ্টেন ছিল আমার আত্মীয়। এখানে এসেই বায়না ধরল শহর দেখানোর জন্যে। কথা ছিল নেত্রীর ভাষণ পর্ব সমাপ্তির রাতে ঘুরতে বের হব। আরও দুই বন্ধু সহ নির্ধারিত সময়ে হাজির হলাম হোটেলে। হোটেল লবিতেই চোখে পরল দৃশ্যটা। শত শত স্বদেশি চীৎকার করছে, হাতাহাতি করছে, ঠেলাঠেলি করছে। স্থানীয় পুলিশ বাহিনীও ব্যর্থ হচ্ছে জনতার ঢল সামাল দিতে। সবার গন্তব্য নেত্রীর কক্ষ। কথা ছিল রাত ১১টার দিকে বেরিয়ে পরব আমরা। কিন্তু সকাল ১টার দিকেও লাইন কমার কোন লক্ষন দেখা গেলনা। নেত্রীর রুমের ঠিক ২টা রুম পর আমরা তিন জন অপেক্ষায় আছি, অপেক্ষা করছি আর মাথার চুল ছিঁড়ছি। আত্মীয় নিজেও বিব্রত। চীৎকার শুনে রুমের বাইরে আসতেই চোখে পরল দৃশ্যটা, নিরাপত্তা বাহিনীর সবাই মিলে বেধড়ক পেটাচ্ছে অপেক্ষমান জনতাকে। জনতাও কম যায়না, তারও প্রতিরোধ করছে এবং উচ্চস্বরে শ্লোগান দিচ্ছে। পাঁচতারা হোটলে মধ্যরাতে এমন এক দৃশ্যের অবতারণা হল যা ঠেকাতে কর্তৃপক্ষ NYPD তলব করতে বাধ্য হল। রাত একটার দিকে আত্মীয় এসে জানাল জনৈক ভিজিটর প্রধানমন্ত্রীর পা জড়িয়ে কান্নাকাটি করছে, কোনভাবেই সড়ানো যাচ্ছে না। রাত দুটার দিকে শেষ হল এ সার্কাস। আত্মীয় এসে জানাল প্রধানমন্ত্রী এখন ফ্রি, চাইলে আমরা দেখা করতে পারি। খালেদা জিয়াকে দেখা অথবা তার সাথে কথা বলার কারণ খুঁজে পেলাম না। আত্মীয়কে জানাতে সে একটু অবাক হল। শেষ পর্যন্ত তিনটার দিকে বের হলাম আমরা। পরদিন জ্যাকসন হাইটসে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বাহিনীর বিরুদ্ধে সভা হল, শ্লোগান দিল।

একটা ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী প্রশংসার দাবি রাখেন, ১২৪ জন সহযাত্রী নেন নি এ যাত্রায় যেমনটা নিয়েছিলেন ভারত সফরের সময়। এ হিসাবে বেশকিছু অর্থ বাচিয়ে অসীম যোগ্যতার প্রমান দিলেন তিনি। ঐতিহাসিক ভারত সফরে প্রধানমন্ত্রীর সংগী হয়েছিলেন যারা তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন বোন রেহানা, পুত্র জয় ওয়াজেদ, পুত্রবধু ক্রিষ্টিনা ওভেরমায়ের, নাতনি সুফিয়া জয়, ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক, ভাগ্নে রেদওয়ান সিদ্দিক এবং অবশ্যই ভাগ্নে বৌ পেপ্পি কেভিনিয়ামি। জাতিসংঘে বাংলাদেশের কেস তুলে ধরার জন্যে এ যাত্রায় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগী হয়েছেন শেখ রেহানা, জয় ওয়াজেদ, ক্রিস্টিনা জয়, খন্দকার মনসুর হোসেন (রাজাকারের দৌহিত্র), কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুল এবং ভাগ্নি আজমিনা সিদ্দিক সহ আরও ৯৫ জন। প্রধানমন্ত্রীর নাতনি নাবালিকা সুফিয়া এবং ভাগ্নে বৌ ফিনল্যান্ডের নাগরিক পেপ্পিকে কেন বাদ দেয়া হল তার কোন কারণ প্রকাশ করেনি প্রধানমন্ত্রীর দফতর। আওয়ামী ঘরানার জনৈক নেতার সাথে কথা বলে জানা গেল শেখ ডাইনাস্টির পরবর্তী নেতা হিসাবে প্রধানমন্ত্রী আপন কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সামনে আনতে চাইছেন। রাজাকার পরিবারের গৃহবধূ সায়মা ওয়াজেদ নাকি বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে বসবাসের চিন্তা করছেন এবং হাতে কলমে প্রধানমন্ত্রীত্বের তালিম নেয়ার জন্যে তৈরী হচ্ছেন।

প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাচ্ছি মার্কিন মুলুকে। আর যারা নেত্রী পুজার ঢালি সাজিয়ে ইতিমধ্যে ধ্যানে বসে গেছেন তাদের তলপেট বরাবর কষে একটা লাথি রইল। প্রধানমন্ত্রী আসছেন পরিবার নিয়ে বনভোজন করতে। এ ধরনের বনভোজনে অনাহূত অতিথির অত্যাচার কতটা বিরক্তিকর হতে পারে তা আশাকরি নিউ নিউইয়র্কবাসীদের নতুন করে বুঝাতে হবেনা। আফটার অল নিউ ইয়র্ক বনভোজনের শহর। আর যারা সুফিয়া জয় ও পেপ্পি কেভিনিয়ামিকে সহযাত্রী বহরে না দেখে আমার মত কষ্ট পেয়েছেন তাদের জন্যে খবর হল, এটা নিশ্চয় শেষ সফর নয়! ১০০ বছর পরে আছে সামনে।