২৪৫ টি প্রকল্প দেখিয়ে ৩৪৩ মে. টন টিআর লুটপাটের অভিযোগ

লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর অধিকাশংই ধর্ম প্রতিষ্ঠানের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল। ট্যাক কর্মকর্তারা তদন্ত করে কাজ না পেয়ে পূনঃরায় কাজ বা টাকা চেয়ে চিঠি দিয়েছে সিপিসিদের। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিস সূত্র জানাগেছে, ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরের আগৈলঝাড়া উপজেলা পরিষদের আওতায় (সাধারণ) ১৭৮ মে.টন ও স্থানীয় এমপি বিশেষ বরাদ্দ ১৫৬ মে. টন টি.আর বরাদ্দ পায়। উলে¬খিত টি.আর এর অনুকূলে উপজেলার ৫টি ইউনিয়নে ২৪৫টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। গত জুন মাসে এ সব প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত টি.আর উত্তোলন করা হয়। প্রকল্পের কাজ সুষ্ঠ ও সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রত্যেক ইউনিয়নে ২ জন করে সরকারী কর্মকর্তা তদারকির জন ট্যাক কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দেন। কাজ শেষের ৪ মাসের পরেও প্রকল্পের মাস্টার রোল এখন পর্যন্ত জমা দেয়নি সিপিসিরা। যারাও দিয়েছেন তারাও কোন কাজ করেননি বলে তদারকি কর্মকর্তাদের রিপোর্টে উলেখ করেছেন।

কাজ না করে টি.আর প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের গুঞ্জনে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস গত ১৫ জুলাই এক পত্রে সংশি¬ষ্ট ইউনিয়নের তদারকি কর্মকর্তা (ট্যাক কর্মকর্তা) দের সরেজমিন পরিদর্শন শেষে ২৫ জুলাইয়ের মধ্যে কাজের রিপোর্ট দেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। ওই তারিখের মধ্যে কোন কর্মকর্তাই রিপোর্ট জমা না দেয়ায় দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৫ আগষ্টের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দিলেও নির্ধারিত তারিখকে ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে বাকাল ইউনিয়ন ছাড়া ৪টি ইউনিয়নের রিপোর্ট কর্মকর্তারা জমা দেননি। বাকাল ইউনিয়নের ট্যাক অফিসার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আশ্রাফুজ্জামান ও উপজেলা রিসোর্স সেন্টার ইনসটেক্টর মাহাবুব আলম বাকাল ইউনিয়নে গৃহীত ৪১টি প্রকল্প ঘুরে তাদের রিপোর্ট জমা দেন।

ওই রিপোর্টে তারা উলে¬খ করেন, ২২টি প্রকল্পের কোন কাজ হয়নি। ৩টি প্রকল্পে তারা কোন মন্তব্য করেনি। প্রকল্প ৩টি হচ্ছে আগৈলঝাড়া বিএইচপি একাডেমী সংস্কার, আমবাড়ী শ্রী গনেশ পাগলের মন্দির সংস্কার ও পশ্চিম পয়সা দীঘির উত্তরপাড় কালী মন্দির সংস্কার। রিপোর্টে ১০০ ভাগ কাজ দেখিয়েছেন ৫টি প্রতিষ্ঠানের। তবে ১০০ ভাগ কাজের মধ্যে রয়েছে অফিসার্স ক্লাব সংস্কার, উপজেলা মহিলা ক্লাব সংস্কার, ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী ক্লাব সংস্কার ও পয়সা মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংস্কার। ৩টি সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠানে জন্য সরকারী বরাদ্দ ১০০ভাগ দেখিয়েছে সরকারের ওই ২ তদন্ত কর্মকর্তা। বাকাল ইউনিয়নের যে সকল প্রতিষ্ঠানে টি.আর এর কাজ করেনি ওই সকল প্রতিষ্ঠানের সিপিসিদের সরকারের বরাদ্দকৃত টি.আর বা সরকারী মূল্য জমা দেয়ার জন্য ২৯ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে। নির্বাহী কর্মকর্তার চিঠি পেয়ে ৬/৭জন সিপিসি তাদের প্রকল্প পূনঃরায় তদন্তের আবেদন করেছেন। পাশাপাশি স্থানীয় পর্যায় থেকে প্রকল্পের টি.আর আত্মসাতের অভিযোগে প্রকল্প কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ পত্রও জমা দিয়েছে।

স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান ও জন প্রতিনিধিরা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, স্কুল-মাদ্রাসাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে তাতে বরাদ্দ দেন। তবে ইউনিয়ন পর্যায়ের ক্ষমতাসীন দলের নেতারা কাজ না করে এবং ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে বরাদ্দকৃত টি.আর বিক্রি করে সম্পূর্ন টাকা আত্মসাত করেছে অভিযোগ উঠেছে। সব ইউনিয়নেই ভূয়া প্রকল্প দেখিয়ে টি.আর আত্মসাত করেছে  প্রকল্পের সিপিসিরা। এব্যাপারে উপজেলা চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা খান সাংবাদিকদের বলেন, ট্যাক অফিসাররা রিপোর্ট দেয়ার পরে প্রকল্প ভূয়া প্রমানিত হলে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, সরকারী বরাদ্দ নিয়ে কাজ না করায় সিপিসিদের দ্বিগুন মূল্যে অর্থ ফেরত দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়েছে। ভূয়া প্রকল্পের সিপিসিদের বিরুদ্দে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা শচীন্দ্র নাথ বৈদ্য সাংবাদিকদের বলেন, সকল তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পরেই ভূয়া প্রকল্প ও আত্মসাত করা প্রকল্পের সিপিসিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। স্থানীয় এমপির প্রতিনিধি ও উপজেলা আওয়ামীলীগের আহ্বায়ক ইউসুফ মোলা বলেন, মন্দির, মসজিদে ধর্ম প্রানদের নিয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের কাজ করার কথা। এতে আওয়ামীলীগ-বিএনপি দেখে সিপিসি করা হয়নি। ভূয়া প্রকল্প সম্পর্কে তিনি বলেন, এজন্য দায়ী ওই ইউনিয়নের আওয়ামীলীগ সভাপতি ও সম্পাদক তবে কাজ না করে সরকারী অর্থ আত্মসাত করলে বিধি অনুযায়ী সরকার ব্যবস্থা নেবে।