ক্যারিয়ার হিসেবে ফ্রিলান্স – মাহমুদ আহসান

কেউ ফ্রিলান্স ফুল টাইম অথবা পার্ট টাইম ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে পারে। ফ্রিলান্সাররা ঘণ্টা, দিন অথবা প্রযেক্ট এর ভিত্তিতে কাজ করে।এখনকার দিনে ফ্রিলান্সার বলতে মুলত লেখক, ডিজাইনার এবং প্রোগ্রামার দেরকেই বুঝায়। ফ্রিলান্সারদের কোন অফিস নাই। তারা ঘরে, পার্কে যেকোন যায়গায় কাজ করতে পারে।

যেভাবে ফ্রিলান্সার হওয়া যায়

ফ্রিলান্সারদেরকে নিজে নিজেয় কাজ যোগার করতে হয়। এটা ফ্রিলান্স ক্যারিয়ারের শুরুতে কঠিন মনে হতে পারে। কিন্তু আমি আলোচনা করব কিভাবে এই কঠিন কাজটা সহজে করা যায়। আমার এই আর্টিকেল লেখার প্রধান উদ্দেশ্য আমার দেশের মানুষ যেন ফিলান্স করতে উৎসাহী হয় এবং বিভিন্ন ফ্রিলান্স সাইটে বাংলাদেশের নাম উজ্জল করে।

ফ্রিলান্সার হতে হলে একজন ব্যক্তির যে গুনাবলী দরকার:

১. নিজেকে জানা
২. অন্যকে বুঝতে পারা
৩. সততা
৪. যা পাওয়া যায় তার চেয়ে কিছু বেশি দেওয়া
৫. ভালভাবে যোগাযোগ করা

১. নিজেকে জানা: মনিষীরা বলেছেন নিজেকে জান তবেই তুমি জীবনে বড় হতে পারবে। সুতরাং আপনি যদি ডিজাইনার হন অথবা প্রোগ্রামার হন তাহলে নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন যে আপনি কি ভাল পারেন বা কিসে আপনার আগ্রহ আছে।যদি আপনি  ওয়েব প্রোগ্রামার হন তাহলে আপনার পিএইচপি, জাভাস্ক্রিপ্ট, এইচটিএমএল, সিএসএস ভাল জানতে হবে অথবা জানার আগ্রহ থাকতে হবে। যদি আপনার ডিজাইনে আগ্রহ থাকে তাহলে ফটোশপ, ইলাসট্রেটর ভাল জানতে হবে। কেই মায়ের পেট থেকে কোন কিছু শিখে আসেনা। যদি আপনার শেখার আগ্রহ থাকে এবং নিজেকে উপরে ওঠানার প্রচন্ড আকাংখা থাকে আপনি অবশ্যই ভাল করবেন এবং ফ্রিলান্স ক্যারিয়ারে অনেক  ভাল করবেন। নিচের চার্ট এ দেখুন কিসে আপনার আগ্রহ আছে। এই চার্টটা ওডেক্স থেকে নেওয়া হয়েছে।

২. অন্যকে বুঝতে পারা : এখানে অন্যকে বুঝতে পারা বলতে আমি মুলত ক্লায়েন্টকেই বুঝতে পারাটাকেই বোঝাতে চেয়েছি। যদিও বাস্তব জীবনে অন্যকে বুঝতে পারাটা খুবই গুরত্বপূর্ণ। ফ্রিলান্সিংয়ে ক্লায়েন্ট কি চায় এটা বুঝতে হবে, যদি আপনার কোন বিষয়ে সন্দেহ থাকে তবে কখনই ক্লায়েন্টকে জিজ্ঞাসা করতে দ্বিধা করবেন না। তাকে ইমেইল করুন অথবা চ্যাটিংয়ের সময় তাকে ব্যাপারটা জিজ্ঞাসা করুন। আর একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন যদি ক্লায়েন্ট এমন কিছু আপনাকে দিয়ে করাতে চায় যা আপনি পারেন না বা জানেন না তখন ক্লায়েন্টকে সরাসরি না বলবেন না। বলবেন আমি এটা চেষ্টা করে দেখব এবং করে ফেলতে পারব ।আর যদি মনে করেন কাজটা আপনি পারবেনই না তাহলে তাকে বলে দিয়েন যে পারব না ।

আমার একজন ক্লায়েন্ট আমাকে এইভাবে রিভিউ করেছিল

৩. সততা: যা পারেন বা পারবেন সেটার জন্য আবেদন করবেন এবং ক্লায়েন্টকে বোঝাবেন আপনি একাজের জন্য সবচেয়ে ভাল ব্যক্তি। আপনার সততাই সেই ক্লায়েন্টকে বারবার আপনার কাছে নিয়ে আসবে। ক্লায়েন্টের সাথে কখনই ধোকাবাজি করবেন না। এতে শুধু আপনারই না পুরো দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে।

৪. যা পাওয়া যায় তার চেয়ে কিছু বেশি দেওয়া: যদি 300$ এর কাজ পান এবং যদি মনে করেন ২/৩ টা ফিচার বেশি দিলে প্রযেক্ট টা আরো ভালো হবে তবে তা করে দিয়েন। এতে ক্লায়েন্ট খুশি হবে। আর একটা ব্যাপার খেয়াল রাখবেন, প্রযেক্ট শেষ হওয়ার পর যদি কোন বাগ/প্রবলেম অথবা ছোট ফিচার যোগ করতে হয় তাও করে দিবেন। এতে আপনার সাময়িকভাবে মনে হবে কোন লাভ নেই কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী অনেক লাভ হয়। ক্লায়েন্ট আপনাকে অনেক বেশী নিভর্রযোগ্য মনে করবে, ভাল রেটিং দিবে এবং অনেক সময় বোনাস্ দিতে পারে। আমি একবার এক ক্লায়েন্ট এর কাজ থেকে 400$ বোনাস্ পেয়েছিলাম যা মূল প্রযেক্ট  সহ ছিল 700+400 = 1100$

৫. ভালভাবে যোগাযোগ করা: এটা খুবই গুরত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। আপনি চিন্তা করেন ক্লায়েন্ট আপনাকে বাস্তবে দেখতে পাচ্ছে না। তার সাথে শুধু আপনার ইমেইল অথবা চ্যাটে কথা হয়। সুতরাং একটা প্রযেক্ট এর কি অবস্থা তা যদি নিয়মিতভাবে তাকে না বোঝাতে পারেন তবে অনেক সময় ক্লায়েন্ট অখুশি হয়। সুতরাং একটা প্রযেক্ট নেওয়ার পর খেকে ডেডলাইনের আগ পর্যন্ত বিস্তারিত রিপোর্ট/কাজের অবস্থা ক্লায়েন্ট কে জানাবেন।

কিভাবে কাজ যোগাড় করবেন:

নিচের ফ্রিলান্স ওয়েব সাইটগুলো ভিজিট করুন এবং অ্যাকাউন্ট খুলে ফেলুন। যদি পারেন সবগুলো সাইটেই কাজের জন্য আবেদন করবেন।কেননা আপনার ভাগ্য কোন সাইটে বেশি আনুকুল্য হবে সেটা তো বলা যায় না। আর তাছাড়া দেখা যায় এক এক সাইটে এক এক ধরনের কাজ বেশি পাওয়া যায়।

১. ফ্রিলান্সার.কম
২. ওডেক্স.কম
৩. স্ক্রিপটলান্স.কম
৪. গেটএকোডার.কম
৫. ইলান্স.কম
৬. রেন্টএকোডার.কম
৭. ফ্রিলান্সর.কো.ইউকে
৮. গুরু.কম

সবগুলো সাইটেই কাজের জন্য আবেদন করার পদ্ধতিটা এবং টাকা দেশে নিয়ে আনার পদ্ধতিটা প্রায় একইরকম। আমার ইচ্ছা আছে টাকা দেশে আনার পদ্ধতিগুলো নিয়ে আর একটা পোষ্ট লেখা।

আমার যে সাইটগুলো বেশি পছন্দ সেগুলো হল:

১. ফ্রিলান্সার.কম
২. ওডেক্স.কম
৩. স্ক্রিপটলান্স.কম

কাজে আবেদন করার পূর্ব প্রস্তুতি:

১. ভাল একটা পোর্টফলিও/পূর্ব কাজের লিস্ট তৈরি করে ফেলুন।
২. বেশিরভাগ ফ্রিলান্স সাইটে ফ্রি পোর্টফলিও তৈরি করা যায়, সেগুলেতেও পোর্টফলিও তৈরি করে ফেলুন
৩. যদি কোন কাজ NDA হয় অর্থাৎ আপনি সে কাজের লিংক কোথাও প্রকাশ করতে পারবেন না, তাহলে তা পোর্টফলিওতে প্রকাশ করবেন না
৪. পোর্টফলিওতে আপনার দক্ষতা ঠিকমত ফোকাস করুন
৫. যে কাজে আপনার দক্ষতা নেই, সেটা পোর্টফলিওতে দিবেন না।
৬. একটা ভালো কাভার লেটার তৈরি করুন, যেটা কাজে আবেদন করার সময় ক্লায়েন্টের কাছে পাঠাবেন

আবেদন করার সময় যা করা জরুরী:

যদি ওয়ার্ডপ্রেস এর কাজের জন্য আবেদন করতে হয় তাহলে জুমলার বেশি পোর্টফলিও দেওয়ার দরকার নাই। বিশাল লিষ্ট দেখালেই যে ক্লায়েন্ট আপনাকে কাজ দিবে এটা ভাবার কোন কারন নাই। সবসময় চেষ্টা করবেন কিভাবে অল্প কথায় বেশি বলা যায়। কাজের ধরন যদি ঘন্টা অনুযায়ী হয় তাহলে আপনার আগে হিসাব করতে হবে কাজটা করতে কত ঘন্টা লাগতে পারে। ঘন্টা হিসাব করার জন্য এই সাইটটা দেখতে পারেন। http://estimator.astuteo.com/

ঘন্টা হিসেব করে আপনি কাজটা করতে কত $ নিবেন তা হিসেব করুন। কাজটার জন্য আবেদন করার সময় এইগুলো মাথায় রেখে আবেদন করুন। শুরুর দিকে কাজ পাওয়ার জন্য অল্প $ এ আবেদন করা বুদ্ধিমানের কাজ। আরো কিছু ব্যাপার খেয়াল রাখা জরুরী তা হল, ক্লায়েন্টের পূর্ব কোন রিভিউ আছে কিনা। অনেক সময় ক্লায়েন্ট প্রতারক হতে পারে, কাজ করে টাকা না দেওয়া এই ধরনের ক্লায়েন্টও আছে।

গুরত্বপূর্ণ কিছু ওয়েব সাইট:

ফ্রিলান্সি এর ব্যাপারে জানতে এই ওয়েব সাইট গুলো ভিজিট করুন:

১. http://freelancefolder.com
২. http://freelancefolder.com/35-online-tools-to-make-your-freelance-career-easier/
৩.http://www.allfreelance.com/freelancing_blog/

৪. http://www.freelancermagazine.com/
৫. http://www.odesk.com/community/

আশা করি আপনাকে ফ্রিলান্সার হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী করে তুলবে। সামনে ফ্রিলান্সিয়ের ব্যাপারে আরো পোষ্ট লেখার ইচ্ছা আছে। ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

 


প্রকাশ করার জন্য অনুমোদিত : মাহমুদ আহসান

 

Source : http://thinkbd.net/freelance/career-as-freelance/