৫০টি সংঘর্ষে হত ১ ॥ যুবদলের পাল্টাপাল্টি কমিটি

ধরে গত তিন মাসে প্রায় ৫০টি সংঘর্ষে একজন হত ও প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। এ তিন উপজেলায় ও পৌর সভায় যুবদলের পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ফলে দু’পক্ষের সমর্থকদের মধ্যে চলছে চরম উত্তেজনা। আবারো যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে প্রাণহানির আশংকা করছেন দলের সাধারন নেতা-কর্মীরা।  

দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি বরিশালের উজিরপুর উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে যুবদলের নেতা-কর্মীরা দুটি শিবিরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এস. সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর সমর্থিত কমিটির সভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহ আলম চুন্নুর কমিটি এলাকায় দলীয় কার্যক্রম চালায়। এ কমিটির বিরুদ্ধে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও বরিশাল-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের সমর্থক মোঃ বিপ্লব মোল্লাকে সভাপতি ও মোঃ রুহুল আমিনকে সাধারন সম্পাদক করে গত জুলাই মাসে একটি পাল্টা কমিটি ঘোষনা করা হয়। পাল্টাপাল্টি ওই দুটি কমিটিই দ্বিধা বিভক্ত হয়ে উজিরপুরে কার্যক্রম চালায়। আলাল সমর্থকদের ঘোষিত কমিটিকে পকেট কমিটি আখ্যায়িত করে উপজেলা যুবদলের বৈধ সভাপতি দাবিদার মোঃ শাহ আলম চুন্নু বাদী হয়ে প্রতিপক্ষ গ্রুপের কমিটির বিরুদ্ধে (জুলাই মাসের প্রথম দিকে) কমিটির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বরিশাল সাব জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। এরপর থেকেই উজিরপুরে যুবদলের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারন করে। উপজেলা যুবদল নেতা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, পাল্টা পাল্টি কমিটি করে কাজ করতে গিয়ে অসংখ্যবার দু’গ্রুপের সমর্থকরা সংঘাতে জড়িয়ে পরে। তিনি এ জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের দায়ী করেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের ইশরায় যুবদলের দুটি কমিটি গঠনের পর থেকে এলাকায় যুবদলের দু’গ্রুপের মধ্যে প্রায়ই সংঘাত ও সংঘর্ষের  ঘটনা ঘটে আসছে বলে দলীয় নেতা-কর্মীরা জানান।

 

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির নির্বাহী সদস্য এস.সরফুদ্দিন আহম্মেদ সান্টুর সমর্থক ও উপজেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহ আলম চুন্নু গত ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলার ভবানীপুর কলেজে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করেন। একইস্থানে একই সময় প্রতিপক্ষ পাল্টা কমিটির সভাপতি মোঃ বিপ্লব মোল্লা ইফতার মাহফিলের আহবান করে তার সমর্থকদের নিয়ে জড়ো হয়। এ সময় উভয় গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে হাতাহাতি ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রতিপক্ষ পাল্টা কমিটির সভাপতি ও আলাল সমর্থক মোঃ বিপ্লব মোল্লার নেতৃত্বে তার সহযোগী তার কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ রুহুল আমিন, সহসভাপতি মোঃ নুরুল হক, যুগ্ম সম্পাদক মোঃ মনির হোসেনসহ ৮/১০ জন প্রতিপক্ষ কমিটির সাধারন সম্পাদক মোঃ শাহ আলম চুন্নুর ওপর হামলা চালায়। এ সময় চুন্নু মাথায় রক্তাক্ত জখম হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১০ আগসাট মঙ্গলবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চুন্নু মারা যায়। চুন্নু গ্রুপের সভাপতি প্রভাষক সরদার মোঃ সিদ্দিকুর রহমান, যুবদল নেতা রোকনুজ্জামান টুলু জানান, উজিরপুর যুবদলের কমিটি গঠনের বিরোধকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন এলাকায় ২০টি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে প্রায় অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। উজিরপুর থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি সুকুমার রায় জানান, এ উপজেলায় যুবদলের  দলীয় কোন্দলের কারনে সংঘর্ষের ঘটনায় হত্যাসহ একাধিক মামলা হয়েছে।

এছাড়াও বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দু’গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরেছে। উভয় গ্রুপ শক্তি পরীক্ষায় মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে। গত তিন মাসে বিভিন্ন সময় ১৫টি সংঘর্ষের ঘটনায় ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন বলে দলের সাধারন নেতা-কর্মীরা জানান। সেপ্টেম্বর মাসে  বরিশাল জেলা উত্তর যুবদলের সভাপতি মোঃ কবির উদ্দিন আফসারী স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিঞ্জপ্তিতে আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক আরিফ হোসেন ফিরোজ ও যুগ্ম সম্পাদক মোঃ আবুল মোল্লাসহ ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদন করা হয়। গত ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলার পূর্ব সূজনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হলরুমে আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের একাংশের আহ্বায়ক আরিফ হোসেন ফিরোজের সভাপতিত্বে এক জরুরী সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায়  উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন ও ৪৫টি ওয়ার্ডের যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। ওই সভার সিদ্ধান্তকে অসাংগঠনিক বলে দাবি করছেন যুবদলের পাল্টা কমিটির সভাপতি আলী হোসেন ভূঁইয়া স্বপন। ২৫ সেপ্টেম্বর আগৈলঝাড়া উপজেলা যুবদলের একাংশের সভাপতি আলী হোসেন ভূঁইয়া স্বপনের সভাপতিত্বে উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি কবির হোসেন তালুকদারের বাড়িতে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। পাল্টা পাল্টি সভায় দু’গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। স্বপন বলেন, আরিফ হোসেন ফিরোজের উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটি অবৈধ। তার ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করাও অসাংগঠনিক, অবৈধ। স্বপনের এ বক্তব্যকে প্রত্যাখান করে আরিফ বলেন, আমাদের কমিটিই বৈধ।  

অপরদিকে বরিশালের গৌরনদী উপজেলা ও পৌর যুবদলের নবগঠিত ৪ আহবায়ক কমিটির পাল্টাপাল্টি প্রথম বর্ধিত সভা গত ২৯ জুলাই বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। উভয় কমিটির সভায়ই পূর্বের ইউনিয়ন ও পৌর ওয়ার্ড যুবদলের পূর্বের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করে নতুন কমিটি গঠনের ঘোষনা করা হয়। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌর যুবদলের একাংশের আহবায়ক যথাক্রমে সফিকুর রহমান শরীফ স্বপন ও মোঃ নান্না খান ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড যুবদলের কমিটি গঠন করে ঘোষনা করেছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, বরিশালের গৌরনদী উপজেলা যুবদলের মোঃ মাসুদ হাসান মিঠুকে আহবায়ক ও  গৌরনদী পৌরসভা যুবদলের মোঃ জাকির হোসেন শরীফকে আহবায়ক করে  দুটি কমিটি গঠন করা হয়। গত ২০ জুলাই বরিশাল সদর উত্তর জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোঃ বদিউজ্জামান মিন্টু কমিটি দুটি অনুমোদন প্রদান করে। এ কমিটি দুটি অনুমোদন দেয়ার দু’দিন পর বরিশাল সদর উত্তর জেলা যুবদলের সভাপতি কবিরউদ্দিন আফসারী লিখিতভাবে কমিটি দুটি স্থগিত করেন। গত ২৩ জুলাই তিনি (কবিরউদ্দিন আফসারী) মোঃ সফিকুর রহমান শরীফ স্বপনকে গৌরনদী উপজেলা আহবায়ক ও মোঃ নান্না খানকে গৌরনদী পৌর যুবদলের আহবায়ক করে পুনরায় দুটি কমিটি ঘোষনা করেন। এ নিয়ে গৌরনদী উপজেলা ও পৌর যুবদল দ্বিধাবিভক্ত হয়ে পরেন। এ ব্যাপারে বরিশাল সদর উত্তর জেলা যুবদলের সাধারন সম্পাদক মোঃ বদিউজ্জামান মিন্টর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পাল্টাপাল্টি কমিটির জন্য সভাপতি কবির উদ্দিন আফসারীকে দায়ী করেছেন। সভাপতি মোঃ কবির উদ্দিন আফসারী সাধারন সম্পাদক বদিউজ্জামান মিন্টুর অভিযোগ প্রত্যাখান করেন।

গৌরনদী উপজেলা যুবদল নেতা মোঃ জাকির হোসেন জানান, দলীয় অভ্যন্তরীন বিরোধে গত তিন মাসে প্রায় ১৫ বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে প্রায় ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। তিনি আরো জানান, উভয় গ্রুপের মধ্যে অব্যাহত উত্তেজনায় ফের যেকোন সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা রয়েছে। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, দলটির মধ্যে সৃষ্ট কোন্দলে বহুবার নিজেরা সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে। তবে  কোন গ্রুপই কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা দায়ের করেননি।