বঙ্গবন্ধু এয়ারপোর্টের ফরিদপুর যাত্রা – ওয়াচডগ

ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্য হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা মাত্র যে বাস্তবতাটা প্রথম ধাক্কা দেয় তা হল আমাদের শ্রীহীন শূন্য এয়ারপোর্ট। অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়। ব্যাপারটা সবার কাছে একই রকম লাগবে এমনটা অবশ্য আশা করছি না । আভ্যন্তরীণ রুটের দুএকটা ফ্লাইট, বাংলাদেশি যাত্রী পরিবহনে নিয়োজিত বিদেশি কোম্পানীর দুএকটা সুপরিসর বিমান, এমনটাই হবে ঢাকা এয়ারপোর্টের গড়পরতা ট্রাফিক হিসাব। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আকাশ পরিবহন ব্যবস্থায় ঢাকার তেমন গুরুত্ব নেই বিশ্ব বাজারে। গলাবাজি আর চাপাবাজির মাধ্যমে এ বাস্তবতা বদলানো সম্ভব হবে বলেও মনে হয়না। ঢাকাকে ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করে এমন বিদেশি ক্যারিয়ারের সংখ্যা হিসাব করলেই বেরিয়ে আসবে বাস্তবতার আসল চিত্র। প্রসঙ্গটা টানছি সরকারী একটা সিদ্ধান্তের কারণে।

ময়মনসিংহের ত্রিশালে নতুন বিমান বন্দর নির্মানের পরিকল্পনা করছে বর্তমান সরকার। সরকারী হিসাব মতে প্রকল্প বাস্তবায়নে খরচ হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা এবং সময় লাগবে ৫ বছর। নাম পরিবর্তন বর্তমান সরকারের নির্বাচনী এজেন্ডা ছিল কিনা জানা নেই, তবে সরকার এ এজেন্ডার সফল বাস্তবায়ন প্রায় সম্পূর্ণ করে ফেলেছে বললে বোধহয় বাড়িয়ে বলা হবেনা। জিয়া বিমান বন্দর এখন শাহজালাল বিমান বন্দর, মিডিয়া সহ আমরা সাধারণ জনগণ অভ্যস্ত হয়ে যাচ্ছি এ পরিবর্তনে। এ নিয়ে কারও বিশেষ আক্ষেপ আছে বলেও মনে হচ্ছে না। বিমান বন্দরকে ধরা হয় একটা দেশের গেটওয়ে। শুধু বিদেশিরাই নয় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্যেও এয়ারপোর্ট জন্মভূমির প্রবেশ দুয়ার, এবং এখান হতেই শুরু হয় মাতৃভূমির পদচারণা। প্রাসঙ্গিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, জিয়া এয়ারপোর্টের নাম পরিবর্তন করতে গিয়ে সরকার কেন শেখ মুজিবের নাম ব্যবহার করলো না। গুরুত্ব বহন করেনা এমন অনেক স্থাপনার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে এই নেতার নামে। এয়ারপোর্টে বাধাটা ছিল কোথায়? আমার আপনার মত সরকারেরও জানা আছে ক্ষমতার পালা বদলের সাথে শুরু হবে নাম বদলের পালা। পীর আউলিয়া নামের উপর কাঁচি চালাতে আগত সরকারের অন্তরাত্মা কাঁপবে হয়ত এমনটাই ছিল সরকারের কৌশলগত বিশ্লেষণ। অনেকের কাছে সিদ্ধান্তটা সরকারের বুদ্ধিমত্তা হিসাবে বিবেচিত হয়েছে। কথায় কথায় সরকারকে নেংটা করতে অভ্যস্ত এমন আদমের সংখ্যা বাংলাদেশে কম নয়, এই যেমন আমি। জিয়াকে নির্বাসনে পাঠিয়ে হযরত শাহজালালকে সামনে আনার মাজেজায় যারা উল্লসিত হয়েছিলেন তাদের জন্যে আমার ম্যাসেজ ছিল, ’ধৈর্য্য ধরুন, ডাল মে কুছ কালা হ্যায়’। ডাল হতে কালা বের হতে অবশ্য বেশী সময় লাগেনি। ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে শেখ মুজিবের নামে নতুন বিমান বন্দর নির্মান। এক জনের নামে দুইটা এয়ারপোর্ট, কিছুটা হলেও চক্ষুলজ্জা কাজ করেছ এ ক্ষেত্রে। নাম পরিবর্তনের রিলে দৌড়ে নতুন নামে হাত দেওয়া হবে অনৈতিক, এবং জনগণকে এ পরিবর্তন গেলানো সহজ হবেনা, সরকারের থিংক ট্যাংকরা হয়ত এমনটাও ভেবে থাকবেন। তবে বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে যাদের পরিচয় আছে তাদের নিশ্চয় জানা আছে অনৈতিকতা বলে কোন শব্দ নেই রাজনীতিবিদদের অভিধানে।

নতুন এয়ারপোর্ট নির্মান নিয়ে ঘটনা এখানেই শেষ নয়। খবরে প্রকাশ সরকার এয়ারপোর্টের স্থান পরিবর্তন করতে যাচ্ছে। ময়মনসিংহের ত্রিশালে নয়, এয়ারপোর্ট হবে বৃহত্তর ফরিদপুরের কোন জেলায়। নেত্রী শেখ হাসিনাও নাকি একমত এ সিদ্ধান্তের সাথে। এমন সিদ্ধান্তের পক্ষে যুক্তি একটাই, যার নামে এ বিশাল আয়োজন তার খুব কাছাকাছি যাওয়া হবে। মাদারীপুরের রাজৈর নাকি প্রথম পছন্দ, দ্বিতীয় পছন্দ শরিয়তপুর। ৫০ হাজার কোটি টাকা খরচ করে নেতার খুব কাছাকাছি যাওয়া। মন্দ হবেনা নেতাভক্তির প্রাইস ট্যাগ! এ প্রসংগে একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার না করে পারলাম না। সৈয়দপুর যেতে হয়েছিল কাজ উপলক্ষে। ৬টার ফ্লাইট ৯টায় ছেড়ে সৈয়দপুর এয়ারপোর্ট পৌঁছলেও বিমান ল্যান্ড করতে পারিনি অভিনব কারণে। রানওয়েতে গরুর বহর! কতটা হেনস্তা হওয়ার পর বিমান অবতরণ করেছিল সে প্রসংগে না গিয়ে একটা কথা বলতে পারি, বাংলাদেশের গরুর দলেরও জানা আছে এয়ার ট্রাফিক জ্যাম। আমার বিশ্বাস ৫০ হাজার কোটি টাকার নির্মান প্রকল্প হয়ত শেষ পর্যন্ত গোপালগঞ্জেই ঠাঁই পাবে। এমন একটা জায়গায়ই হয়ত নিরাপদ যেখানে নাম বদল ঠেকাতে মানুষ রাস্তায় নামবে, মিছিল করবে, প্রতিরোধ গড়ে তুলবে। শুধু ফরিদপুরের মানুষ নয় আশাকরি এতদ্‌ অঞ্চলের গরু ছাগলের দলও আনন্দিত হবে সরকারের এই সিদ্ধান্তে।

দেশে কথা বললাম এই মাত্র। ১৫ ঘন্টা ধরে বিদ্যুৎ নেই একবিংশ শতাব্দীর পৃথিবীর এ অংশে। এবং এমনটা ঘটছে প্রায় প্রতিদিন। এলাকার আওয়ামী চেয়ারম্যান যাদের হাতে বাস্তবায়িত হবে ৫০ হাজার কোটি টাকার বঙ্গবন্ধু বিমান বন্দর প্রকল্প, পৌরসভার ১০০ ভাগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন নিজ স্ত্রীর নামে। এলাকার সাংসদ এবং চেয়ারম্যান এখন মুখোমুখি। যে কোন সময় শুরু হতে পারে রক্তারক্তি। কারণ? – চাঁদাবাজী, টেন্ডারবাজি, আধিপত্য, নিয়োগ বানিজ্য, বদলি বানিজ্য, যৌনাচার এবং ইত্যাদি। এক কথায় সাবেক তত্ত্ববধায়ক সরকার প্রধান এবং বিচারক হাবিবুর রহমান রাজনীতি নিয়ে গতকাল যা বলেছেন তার সফল বাস্তবায়ন। আওয়ামী বাস্তবায়ন।