স্বাক্ষরতা প্রকল্পে পুকুর চুরি ॥ মুখ থুবড়ে পড়েছে কার্যক্রম

ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-২’ (পিএলসিইএইচডি-২) বাস্তবায়নে দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর অধীনে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্প বাস্তবায়নকারী এনজিও বাংলাদেশ রুরাল ইন্টিং গ্রোটেড ডেভেলমেন্ট ফর গ্লাব স্ট্রিট ইকোনামি (ব্রিজ)’র এ পুকুর চুরির ঘটনায় জড়িত রয়েছে। উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর পরিচালক, উপ-পরিচালক একাধিকবার গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়। নির্দেশ পাওয়ার পাঁচ মাস পরেও নির্বাহী অফিসার কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। উপজেলার ৩৪টি শিখন কেন্দ্রের কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও এনজিও কর্তৃপক্ষ বলছে তাদের কার্যক্রম যথা নিয়মে চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ব্যুরোর আওতায় দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মানবসম্পদে রুপান্তরিত করার জন্য দেশের ২৯টি জেলায় এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ৬০১ কোটি ৪০ লাখ টাকা। যার মধ্যে ৪৯৫ কোটি ৪০ লাখ টাকাই বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান।
মানব উন্নয়নের জন্য সাক্ষরতা উত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-২
বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পায় এনজিও ব্রিজ। কর্মসূচির আওতায় উপজেলার বার্থী, বাটাজোর, মাহিলাড়া, নলচিড়া ইউনিয়নে ৩৪টি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। প্রকল্পের প্রথম পর্বে ১২ মাস করে মোট তিনটি ব্যাচে এই প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। গত বছরের ১৫ নভেম্বর এসব শিক্ষা কেন্দ্রের কাজ শুরু হয়। কেন্দ্রগুলোতে প্রথম ব্যাচে ১৪ থেকে ২৫ বছর বয়সী নিরক্ষর, নব্যসাক্ষর ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গণ্ডি পেরোতে না পারা ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি বিভিন্ন ট্রেডে দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নের শুরুতে শিখন কেন্দ্রের জন্য সহায়ক, সহায়িকা ও প্রশিক্ষণের জন্য ট্রেইনার নিয়োগ থেকে শুরু করে দূর্নীতি শুরু হয়। এরপর ধাপে ধাপে কেন্দ্রের জন্য ঘর তৈরি, আসবাবপত্র তৈরি, শিখন ও প্রশিক্ষণ সামগ্রী প্রদানসহ সব ক্ষেত্রে লাগামহীন দূর্নীতির কারণে বর্তমানে মুখ থুবড়ে পড়েছে প্রকল্পের কার্যক্রম।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, কাঁঠাল অথবা শিল কড়ই কাঠের চেয়ার, বেঞ্চ, ও টেবিল দেওয়ার কথা থাকলেও কম দামের আম ও শুকাতি জাতীয় কাঠ দিয়ে এসব আসবাবপত্র তাড়াহুড়া করে সরবরাহ করে এ খাত থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে।

উপজেলার কটকস্থল শিখন কেন্দ্রের সহায়ক মোঃ শাহীন মিয়া জানান, ঘর তৈরির জন্য ২৫ হাজার টাকা বরাদ্দ থাকলেও তাকে ব্রিজ কর্তৃপক্ষ ১৪ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। যা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুলনীয়। হরহর শিখন কেন্দ্রের ট্রেইনার মায়া রানী সিকদার জানান, সরবরাহকৃত আসবারপত্র খুবই নিন্মমানের।

শিখন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কেন্দ্রে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে। দুপুর ৪টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত নারী এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুরুষরা এসব শিখন কেন্দ্রে লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণ নেওয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে এর কোনো প্রতিফলন পাওয়া যায়নি। তাঁরাকুপি গ্রামের শাহ আলম হাওলাদার বলেন, ব্রিজ এনজিওর পুকুর চুরির কারনে তারা উপজেলা সদরে অফিস না নিয়ে সদর থেকে ১৫ কিলোমিটার দুরে প্রত্যন্ত অঞ্চলে অফিস নিয়েছেন। যা অধিকাংশ সময় বন্ধ থাকে।

বাটাজোর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এইচ, এম শামচুল হক বলেন, ব্রিজের কার্যক্রম আসলেই দৃষ্টি কটুর। শিখন কেন্দ্রের নিজস্ব ঘর তৈরীর কথা থাকলেও ব্রিজের লোকজন নামে মাত্র দু’একটি ঘর নির্মান করলেও বাকী কেন্দ্রগুলো কারো কারো বসত ঘরের বারান্দায় ও উঠানে কার্যক্রম চালিয়েছিল। গত দু’মাস যাবত তাদের কার্যক্রম দেখা যাচ্ছে না। তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে লিখিতভাবে একাধিকবার জানতে চাইলেও কর্তৃপক্ষ আমাকে কিছুই জানাননি। এ বিষয়ে আমি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করেছিলাম। তিনি দাবি করেন, এনজিও ব্রিজের কারনে পুরো কর্মসূচীটিই মুখ থুবড়ে পড়েছে। এছাড়াও সরকারের বিপুল অঙ্কের টাকা অপচয় হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সাক্ষরতা প্রকল্পে বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে ব্রিজের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ খায়রুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এসব বিষয়ে তদারকি করেন। এরবেশি কিছু বলতে তিনি অপরাগতা প্রকাশ করেন। ব্রিজের আঞ্চলিক ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে এ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারের নিয়মানুযায়ী কার্যক্রম চলছে। মন্ত্রনালয়ের একাধিক প্রজ্ঞাপন প্রাপ্তির কথা স্বীকার করে গৌরনদী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, বিষয়টির তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য একাধিকবার উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলামকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। গৌরনদী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শহিদুল ইসলাম বলেন, একাধিকবার এনজিও ব্রিজের কার্যালয় বাটাজোরে গিয়ে তাদের কাউকে অফিসে পাওয়া যায়নি। শিখন কেন্দ্রের অবস্থান ও তালিকা না পাওয়ার কারনে তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বিলম্ব হচ্ছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।