বীরঙ্গনা আমেনা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেইখ্যা মরতে চায়

গ্রামের বীরঙ্গনা আমেনা বিবি (৮০) দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় শষ্যাশয়ী রয়েছেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও বিধবা আমেনা বিবির খোঁজ নেয়নি কেউ। অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় শষ্যাশয়ী আমেনা বিবিকে বাঁচাতে সমাজের মহানুভব ব্যক্তি ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কাছে হাত পেতেছেন তার অসহায় পরিবার।

শষ্যাশয়ী আমেনা বেগমের কাছে যুদ্ধাপরাধী রাজাকারদের বিচার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি চেঁচিয়ে উঠে বলেন-“অগো ছাইরেন না। মরার আগে যদি অগো (যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার) বিচার দেইখা যাইতে পারতাম হ্যালে মইরাও শান্তি পাইতাম। মোর সব কিছু শ্যাষ কইরাও আইজ পোরযন্ত (পর্যন্ত) সরকার মোরে কিছুই দ্যায়নায়। আর কিছু পাওয়ারও ইচ্ছা নাই। সরকারের ধারে মোর খালি (শুধু) এট্টাই দাবি-ওইসব খুনীগো ফাঁসি দ্যান” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন বীরাঙ্গনা আমেনা বিবি।

বিধবা আমেনা বিবি ও তার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় দক্ষিণ পালরদী গ্রামের সোবহান হাওলাদারের পুত্র মুজাফ্ফর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করার খবর পেয়ে স্থানীয় রাজাকারদের ইশারায় পাক সেনারা মুজাফ্ফরের বাড়িতে হানা দেয়। হানাদাররা মুজাফ্ফর মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করায় তার মা আমেনা বেগম ও বাবা সোবহান হাওলাদারকে ধরে নিয়ে যায় গৌরনদী কলেজের পাক বাহিনীর ক্যাম্পে। ওই ক্যাম্পে বসে সোবাহানের ওপর চালানো হয় ষ্টীম রোলার। নির্মম নির্যাতনের পর সোবহানকে ছেড়ে দেয়া হলেও আমেনাকে ক্যাম্পের একটি কক্ষে আটক করে রাখা হয়। ওইদিন রাতেই ৭/৮ জন পাকবীরঙ্গনা আমেনা যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দেইখ্যা মরতে চায়সেনা আমেনা বেগমের ওপর চালায় পাশবিক নির্যাতন। পর্যায়ক্রমে তিনদিন আটক করে আমেনা বেগমের ওপর চালানো হয় পাশবিক নির্যাতন। একপর্যায়ে আমেনার শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরন হওয়ায় তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় ছেড়ে দেয়া হয়। ছাড়া পাওয়ার পর আমেনা বেগম কোন রকম হামাগুরি দিয়ে বাড়িতে ফেরেন। সেখানে গিয়ে দেখতে পান তাদের বসত ঘরটি হানাদাররা পুড়িয়ে দিয়েছে। তার স্বামী নির্যাতনের অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে উঠানে পড়ে কাতরাচ্ছেন। আমেনা অনেক কষ্ট করে কলাপাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে অসুস্থ স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা চালায় কিন্তু কয়েকদিন পরেই তার স্বামী মারা যায়। যুদ্ধ চলাকালীন অবস্থায় দ্বিতীয়বার কয়েকজন রাজাকার আবার আমেনার ওপর পাশবিক নির্যাতন চালায়। এসময় আমেনা আত্মহত্যার প্রস্তুতি নেয়। হঠাৎ করে জানতে পারেন তার একমাত্র ছেলে মুজাফ্ফর বেঁচে আছে এবং সে গোপালগঞ্জের হেমায়েত বাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেছে। তখন আমেনা আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে একমাত্র ছেলেকে একনজর দেখার জন্য জনমানব শূন্য স্বামীর পরিত্যক্ত ভিটার ওপর অপেক্ষা করতে থাকেন। যুদ্ধ জয়ের বিজয় পতাকা নিয়ে তার একমাত্র পুত্র মুজাফ্ফর বাড়িতে ফিরে দেখতে পান তার বাবা নেই, শুনতে পান মায়ের করুন কাহিনী।

স্বাধীনতা যুদ্ধের ৩৮ বছর পেরিয়ে গেলেও আজও আমেনার ভাগ্যে জোটেনি কোন সহানুভুতি। একমাত্র ছেলে বর্তমানে মাছ বিক্রি করে কোন একমতে তার সংসার চালাচ্ছেন। অভাবের সংসারে আমেনার খোঁজ খবর নিতে পারেন না। রোগাক্রান্ত শরীর নিয়ে আমেনা বিবি দীর্ঘদিন ভিক্ষা করে জীবন চালিয়েছেন। বর্তমানে দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে অর্থাভাবে বিনাচিকিৎসায় শষ্যাশয়ী হয়ে পরে রয়েছেন।