নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বরিশাল অঞ্চলে চলছে মা ইলিশ শিকার

ফলে বরিশালের বাজারে লক্ষ করা গেছে মা ইলিশের ছড়াছড়ি। ক্রেতারা বলছেন ডিমওয়ালা ছাড়া কোন ইলিশ এখন বাজারে চোখে পরছেনা। এদিকে কোস্ট গার্ড, নৌ-বাহীনির নজরদাড়ি এরিয়ে চলছে জেলেদের এ মাছ শিকার। তবে বরিশালের মৎস্য বিভাগ বলছে উল্টো কথা। তাদের মতে বাজারে আসা মা ইলিশ নিষিদ্ধ এলাকার নয় বাহির থেকে ধরা হয়েছে। প্রতিদিন বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলে ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার ইলিশ বাজারজাত হলেও নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকার বাহির থেকে মা ইলিশ শিকার হওয়ার অজুহাতে মৎস্য বিভাগের কিছু করনীয় নেই বলে তারা মন্তব্য করেন। পাশাপাশি বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলের বিভিন্নস্থানে প্রতিদিন জেলে ও মৎস্য ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রচুর পরিমান মাছ আটক করা হলেও অনেকস্থানে তা রহস্যজনক ভাবে উধাও হয়ে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে আটককৃত মাছ গোপনে আবারো বিক্রি করে দেয়া হয়।

ইলিশ প্রজনন সময় হিসেবে গবেষকদের পরামর্শ মোতাবেক প্রতিবছর ১৫ থেকে ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত দেশের ৪টি এলাকায় ইলিশ শিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এলাকাগুলি হলো উত্তর পূর্বের শাহেরখালী, হাইতকান্দী, মীরসরাই, উত্তর-পশ্চিমে উত্তর তজুমদ্দিন ও পশ্চিম সৈয়দ আওলিয়া পয়েন্ট, দক্ষিনপূর্বে উত্তর কুতুবদিয়া ও গন্ডামারা পয়েন্ট এবং দক্ষিন পশ্চিমে কলাপাড়া ও লতাচাপলি পয়েন্ট। উল্লেখিত ৪টি এলাকায় ৭ হাজার বর্গ কিঃ মিঃ জুড়ে ১৫ থেকে ২৪  অক্টোবর পর্যন্ত সাধারনত মা ইলিশ ডিম ছেড়ে থাকে। এ কারনে এ সময় এ এলাকায় ইলিশ শিকার পুরোপুরি নিষিদ্ধ। প্রতিবছর ঢাকঢোল পিটিয়ে ইলিশ শিকার নিষিদ্ধের বিষয়টি গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত প্রচার করা হলেও এবার তা করা হয়নি। অনেকটা নিশ্চুপ ভাবে কেটে যাচ্ছে মৎস্য শিকার বন্ধের ১০ দিন। ১৫ অক্টোবর থেকে ইলিশ শিকার বন্ধ হলেও তা অধিকাংশ এলাকায় মানা হচ্ছে না। প্রতিদিনই বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলের প্রায় সকল হাট-বাজার রাস্তাঘাটে বিক্রি হচ্ছে মা ইলিশ। কোথাও কোথাও মাছ আটক করা হলেও বন্ধ হচ্ছে না ইলিশ শিকার। নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকার বাহির থেকে এসব মাছ শিকার হচ্ছে বলে দাবী সংশ্লিষ্ট জেলেদের। তাদের অভিযোগ নিষিদ্ধ এলাকার বাহির থেকে মাছ শিকার করলেও কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগ হয়রানীমূলক ভাবে তাদের মাছ আটক করছে। কোথাও কোথাও অবৈধভাবে আদায় করা হচ্ছে অর্থ।

গতকাল শুক্রবার বরিশালের বাজারে ১ হাজার মন ইলিশের আমদানী হয়েছে। সংশ্লিষ্ট অনেকেই বাজারজাতকৃত মাছ ডিমওয়ালা নয় বলে দাবী করলেও সরেজমিনে তার চিত্র ছিল বিপরীত। বাজারে ওঠা ৯৯ ভাগ মাছই ডিমওয়ালা। মাছের আমদানী বৃদ্ধি থাকায় বাজার মূল্যও অনেকটা কম। গতকাল বরিশালের বাজারে বড় সাইজের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজি। মাঝারি ইলিশ ২৬০ টাকা ও ছোট সাইজের ইলিশ ২১০ টাকা দরে বিক্রি হয়। মৎস্য আড়তদার মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারন সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল বলেন, গতকাল বরিশাল মোকামে সহস্রাধিক মন ইলিশের আমদানী হয়। তার দাবী মতে এসব ইলিশ নিষিদ্ধ ঘোষিত এলাকার নয়। তিনি বলেন, মাছের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় চলতি মৌসুমে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ইলিশের আমদানী অনেক বেশি। এরপরও পূজার পূর্বে বরিশাল থেকে প্রায় ৩ হাজার মন ইলিশ ভারতে রপ্তানি হয়েছে। গতকালও বরিশাল থেকে ভারতে ৫’শ মন ইলিশ রপ্তানি হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ আজিজুল হক বলেন, ভোলা, পটুয়াখালী, চাঁদপুর ও কক্সবাজার এলাকার ৭ হাজার বর্গ কিঃ মিঃ এলাকা জুড়ে ইলিশের মূল প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই এলাকায় ১০ দিন মাছ শিকার নিষিদ্ধ। ফলে অন্যান্য এলাকা থেকে মা ইলিশ শিকার হলেও আইনগত ভাবে তাদের কিছু করার নেই। দেদারছে মা ইলিশ শিকার হলেও আগামী মৌসুমে ইলিশ সংকটের কোন কারন নেই বলে দাবী করে তিনি বলেন, যেসব এলাকা থেকে মা ইলিশ শিকার হচ্ছে এসব এলাকায় সাধারনত ইলিশের প্রজনন হয় না। তার মতে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়া এবং মাছের গতিপথ পরিবর্তন হওয়ায় বাংলাদেশে প্রতিনিয়ত ইলিশের উৎপাদন কমে যাচ্ছে।

এদিকে নিষিদ্ধ ঘোষিত ৪টি এলাকার মধ্যে বরিশাল বিভাগের ভোলা জেলা অন্যতম। এ জেলার লালমোহন, চরফ্যাশন, তজুমদ্দিন এলাকায় দেদারছে মা ইলিশ শিকার চলছে। বিভিন্ন এলাকায় শত শত নৌকা ও ট্রলারযোগে ইলিশ শিকার চললেও অভিযান চলছে লোক দেখানো। সোমবার লালমোহনে ১১টি মৎস্য শিকারে থাকা নৌকা আটক করা হলেও উৎকোচ নিয়ে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ ওঠে অভিযান পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে। আটককৃত নৌকা থেকে অনেক গুলি মাছ নিয়ে আসেন মৎস্য কর্মকর্তারা। যা কেড়ে নেয় স্থানীয় যুবকরা। তবে মৎস্য কর্মকর্তা স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে এ ধরনের অভিযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।