১০ লক্ষ টাকার গাছ কেটে নিয়েছে আওয়ামীলীগ-যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতারা

উপজেলা বন বিভাগের সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের অধীনে উপজেলার রত্নপুর ইউনিয়নের মিশ্রিপাড়া বাজার হইতে পয়সারহাট অংশের তিনটি স্থান থেকে প্রায় দশ লক্ষ টাকার গাছ কেটে নিয়েছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। এ ঘটনায় উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা জড়িত রয়েছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ওই প্রভাবশালীদের ভয়ে এলাকার কেহ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেন না। প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়দের মতে প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রায় ১০ লক্ষ টাকার গাছ কেটে নিলেও গাছ কেটে নেয়ার ঘটনায় বন বিভাগ অজ্ঞাতনামা ব্যাক্তিদের নামে থানায় একটি সাধারন ডায়েরী করেই দায়িত্ব শেষ করেছেন।

সরেজমিনে গিয়ে উপকারভোগী, স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিস্ট সূত্রে জানা গেছে, বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডে সাতলা-বাগধা ভেরীবাঁধ প্রকল্পের ২০ কিলোমিটার বাঁধ নির্মান করেন। এ বাঁধের তিনটি স্থানের ৬ কিলোমিটার অংশের দু’পাশের জায়গায় ১৯৯০ সালে আগৈলঝাড়া উপজেলা বন বিভাগ সবুজ বেষ্টনী প্রকল্পের অধীনে বনায়ন কর্মসূচী গ্রহণ করেন। বন বিভাগের এ প্রকল্পটি স্থানীয়ভাবে তদারকি করার জন্য উপকারভোগীদের নিয়ে একটি বনায়ন কমিটি গঠন করা হয়। উপকারভোগী বেলুহার গ্রামের মোঃ আলমগীর হোসেন (৪৫), মিশ্রিপাড়া গ্রামের মশিউর রহমান (৩০) সহ এলাকার অনেকেই অভিযোগ করেন, রত্নপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য ও সাবেক ইউপি সদস্য মোঃ আশরাফ  মীর (৪০), রত্নপুর ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মোঃ খায়ের শরীফ (৩৮), রতœপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সোহাগ আহম্মেদের (২৮) নেতৃত্বে সোহরাব ভূইয়া, সুমন মৃধাসহ স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা বাঁধের সবুজ বেষ্টনি প্রকল্পের তিনটি অংশ থেকে প্রায় দশ লক্ষ টাকার গাছ কেটে নিয়ে বিক্রি করেছে।

উপজেলা বন বিভাগের কর্মকর্তা কে.বি.এম ফেরদৌস জানান, গত ১২ ও ১৩ অক্টোবর বাঁধের সেরাল স্কুল কাজিরহাট সড়কের কাজিরহাটের পশ্চিম পাশের ১২টি, কাজিরহাট নুরমোহাম্মদ মেম্বারের বাড়ি সংলগ্ন এলাকা থেকে ৪টি, মিশ্রিপাড়া থেকে কাজিরহাট অংশের সিদ্দিক কাজীর বাড়ির পাশের এলাকা থেকে ৫টি গাছ রাতের আঁধারে কে বা কারা কেটে নেয়। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় লক্ষাধিক টাকা।

স্থানীয়দের অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে দফায় দফায় বন কর্মকর্তা কে.বি.এম ফেরদৌসের যোগসাজসে এলাকার প্রভাবশালী আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে দিবালোকে প্রায় দশ লক্ষ টাকার মূল্যের প্রায় ৭০/৮০টি গাছ কেটে জনসম্মুখে সবার সম্মুখ দিয়ে ট্রলার ভর্তি করে নিয়ে গেছে। বেলুহার গ্রামের মোঃ জালাল ভূইয়া জানান, তিনি বন কর্মকর্তাকে গাছ কাটার বিষয়টি অবহিত করলেও কর্মকর্তা রহস্যজনক ভূমিকা পালন করেন। এ অভিযোগ অস্বীকার করে বন কর্মকর্তা ফেরদৌস বলেন, সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে গাছ চুরির সত্যতা নিশ্চিত হয়ে থানায় জিডি করা হয়েছে। তবে কে বা কারা এর সাথে জড়িত তা জানা যায়নি। 

সবুজ বেষ্টনি প্রকল্পের উপকারভোগী ও বনায়ন কমিটির সভাপতি মোঃ কালাম কাজী জানান, বনায়ন প্রকল্পের অধিক উপকারভোগীরা নিরহ সাধারন মানুষ। তারা গাছ কেটে নেয়ার বিষয়টি দেখার পরেও প্রভাবশালীদের ভয়ে কেহ মুখ খুলতে সাহস পায় না। রতœপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সোহাগের কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি গাছ কেটে নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এর সাথে আমি জড়িত নই। রাজনৈতিক প্রতিপক্ষরা আমার ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। এ ব্যাপারে আওয়ামীলীগ নেতা আশরাফের সাথে যোগাযোগের চেস্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। অন্যান্য আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীরা অভিযোগ অস্বীকার করেন। আগৈলঝাড়া থানার এস.আই মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন গাছ কেটে নেয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ঘটনাস্থলে গেলে এলাকার কেহই মুখ খুলতে চায় না। সু-নিদৃষ্ট অভিযোগ না পাওয়ায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যায়নি। রতœপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হোসনে আরা বেগম এ প্রসংঙ্গে বলেন, সরকারি গাছ কেটে নেয়ার বিষয়টি আমি বন কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি। এমনকি উপজেলা উন্নয়ন সমন্বয় পরিষদের সভায়ও উত্থাপন করেছি। আমি একজন নারী হিসেবে এর বেশি কিছু করার নাই। ঘটনার সাথে জড়িত প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় তিনি প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আগৈলঝাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপংকর বিশ্বাসের  কাছে এ ব্যাপারে জানতে চাইলে গাছ কাটার সত্যতা স্বীকার করে তিনি বলেন, গাছ কাটা বন্ধ করতে এ সড়কে উপকারভোগীদের নিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং  পুলিশ টহল জোরদার করা হয়েছে।