আগাম আমন ধান কাটা শুরু ॥ কৃষকের মুখে হাসি

চলতি মৌসুমে আগাম আমন কাটা শুরু হওয়ায় কৃষকরা এখন মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। একটানা খড়ার পরেও চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে এখন হাসি ফুটে উঠেছে। ধান মাড়াই থেকে শুরু করে শুকানোর কাজে চাষী পরিবারের গৃহবধূরা এখন দম ফেলারও সুযোগ পাচ্ছেন না। আমন ধানের মৌ-মৌ গন্ধে গৌরনদীর অজপাড়া গ্রাম এখন মুখরিত হয়ে উঠেছে।

গতকাল শুক্রবার সকালে গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী ব্লকের চাষী দুলাল আকনের সাথে তার জমিতে বসে কথা হলে তিনি জানান, তার ৬০ শতক জমিতে তিনি স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তরের দেয়া ‘চাষী পর্যায়ে উন্নত বীজ উৎপাদন ব্রিধান-৩৩’ রোপন করেছেন। উপজেলা উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস সালামের পরামর্শে তিনি ধানের সঠিক পরিচর্যা করায় তার আমন ধানের জমিতে আশানুরূপ ফলন ফলেছে। তিনি আরো জানান, ধান পাকা শুরু হওয়ার পর হঠাৎ করে জমিতে ইঁদুরের উৎপাত শুরু হওয়ায় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে তিনি কীটনাশক, আলোর ফাঁদসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে ধানের বাম্পার ফলন ফলিয়েছেন। গত বুধবার থেকে তিনি কৃষান নিয়ে ধান কাটা শুরু করেছেন। উপজেলার গেরাকুল গ্রামের চাষী হানিফ বেপারী জানান, তার ১’শ শতক জমিতে তিনি বি,আর-১১, ব্রিধান-৩৩৪১ ও ৪০ রোপন করেছেন। স্থানীয় কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিক পদ্ধতিতে জমির পরিচর্যা করায় তার জমিতে বাম্পার ফলন ফলেছে। গত রবিবার থেকে তিনি তার জমির ধানকাটার কাজ শুরু করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন। উপজেলার পশ্চিম বেজহার গ্রামের চাষী আব্দুল খালেক সিকদার, শাহজাহান চোকদার, মনিরুজ্জামান সরদার, জুয়েল সরদারসহ একাধিক চাষীরা বলেন, “আল্লার পর মোগো একমাত্র ভরসা সিরাজ ভাই (উপজেলার উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সিরাজুল ইসলাম)। হ্যার পরমর্শে এই তিন-চার বছর পর্যন্ত জমিতে ইরি-বোরো ও আমন ধান লাগাইয়া মোরা বাম্পার ফলন পেয়েছি”।

স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সঠিক পরার্মশ, মাটি ও আবহাওয়া এ অঞ্চলের অনুকূলে থাকায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ আমন ধানের বাম্পার ফলন ফলেছে। উপজেলার চাষীদের সাথে আলাপকরে জানা গেছে, অল্প খরচে এক একর জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের প্রায় ১০-১২ মন ধান পাওয়া যায়। বিক্রির জন্য বাজারেও এর দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকেরা এবার মহাখুশী। গেরাকুল গ্রামের চাষী শাহানুর বেপারী জানান, কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের সঠিক পরামর্শ ও চাষীদের অধিক পরিশ্রমের ফলে উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে আমন ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে।
গৌরনদী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রতন কুমার মন্ডল জানান, চলতি মৌসুমে পৌরসভাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে উচ্চ ফলনশীল ও সুগন্ধী জাতের ৬ হাজার ১’শ ২০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের রোপা চারা লাগানো হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন দেশি জাতের আমন ধান আবাদ হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮’শ১০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় চলতি আমন মৌসুমে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।