গৃহনির্মাণের জমাকৃত টাকা আজো ফেরৎ পায়নি ১৭৬ টি পরিবার!

১৫নভেম্বর রাতে থাবা মেরেছিল দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলবর্তী এলাকাগুলোতে। বাদ পড়েনি মাদারীপুর জেলার একটি গ্রামও। এ গ্রাম থেকে ও গ্রাম চারিদিকে লঙ্কাকান্ড। কালকিনি উপজেলায় ১০জন মানুষের মৃত্যু হয় ও শ’শ’ পরিবারের বাড়িঘর হারানোসহ ব্যাপক ক্ষতি সাধন ঘটে। কেউ হারালো বাবা, মা, ভাই-বোন ও কেউবা বাড়িঘর, বাদ যায়নি কেউ। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সকলেই। উচ্চ ও মধ্যবিত্তরা কয়েকদিনে ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারলেও নিম্নবিত্ত অসহায় সম্বলহীন পরিবারগুলোকে দীর্ঘদিন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবন-যাপন করতে হয়। এসব মানুষের দুরাবস্থাকে পুঁজি করে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে গৃহনির্মানের জন্য ৫০হাজার টাকা করে ঋণ দেয়ার কথা বলে উপজেলার ফাসিয়াতলা, এনায়েতনগর, লক্ষীপুর ও বাশগাড়ি এলাকার ১৭৬টি পরিবারের কাছ থেকে ৫হাজার টাকা করে ৮লক্ষ ৮০হাজার টাকা নেয় উক্ত এলাকার প্রভাবশালীদের দ্বারা গঠিত ‘এডভিক ফাউন্ডেশন’ নামের একটি এনজিও। গরীব মানুষের এই টাকা গুলো আজো ঐ ধনী লোকদের পকেটে। টাকা উদ্ধারে এই গরীব মানুষের পাশেও এখন কেউ নেই। থানায় অভিযোগ, আদালতে মামলা ও পত্রপত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশ করেও লাভ হয়নি। টাকা উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনও মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ। তাহলে কি সিডরে বাড়িঘর হারানো ১৭৬টি পরিবার শেষ প্রর্যন্ত গৃহনির্মাণের জমাকৃত টাকা ফেরৎ পাবে না ? এমন প্রশ্ন সচেতন বিবেকবান মানুষের।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে উক্ত এনজিও প্রতিষ্ঠান গৃহনির্মাণ ঋণ আনতে ব্যর্থ হলে এলাকাবাসী তাদের জমাকৃত টাকা ফেরৎ চায়। আজকাল ফেরৎ দেই বলে আশ্বাস দেয় এবং প্রভাবশালীবিধায় প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন গ্রাহকদের ঘুরাতে থাকে। পরবর্তীতে উক্ত জমাকৃত টাকা এনজিও সংশ্লিষ্টরা আত্মসাৎ করে গ্রাহকদের ফেরৎ না দেয়ার কৌশল আঁকে। হঠাৎ করে ২০০৯সালের জুন মাসে চেয়ারম্যান, নির্বাহী পরিচালক ও হিসাবরক্ষকসহ কর্মকর্তারা এনজিও কার্যালয়ে রাতের আঁধারে তালা ঝুলিয়ে আত্মগোপন করে। কিছুদিন পরে তারা (পলাতকরা) বাড়িতে ফিরলে এলাকাবাসী টাকা ফেরতের জন্য চাপ দিলে মাইক্রোক্রেডিট বিভাগের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বেপারী গ্রাহকের টাকা আত্মাসাতের নাম করে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলম মোল্লা, হিসাবরক্ষক কবির মোল্লা ও শাখা ব্যবস্থাপক জান্নাতুল ফেরদাউসের বিরুদ্ধে মাদারীপুর আদালতে একটি মামলা দায়ের করে। কালকিনি থানা পুলিশ ও সহকারী পুলিশ সুপার সরেজমিনে গেলে  মামলার বাদীই উক্ত টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে আসে। পরে পুলিশ বাদী হয়ে কালকিনি থানায় আবুল হোসেন বেপারীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে এবং গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠায়। মামলাটি এখনো বিচারাধীণ। এদিকে আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে আবুল হোসেন কালকিনি থানায় একটি অভিযোগ দেন। পুলিশ এনজিও’র সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাসহ এলাকাবাসীদের থানায় হাজির হওয়ার জন্য নোটিশ দিলেও তা পরবর্তীতে অজানা কারনে স্থগিত করে দেয় বলে জানা যায়। টাকা ফেরৎ পেতে প্রশাসন ও প্রভাবশালীদের কাছে ধরনা দিতে দিতে গ্রাহকরা আজ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। একাধিক গ্রাহক জানায়, তাদের জমাকৃত টাকা দিয়ে তৈরিকৃত কার্যালয় ও ক্রয়কৃত জমি পড়ে আছে। প্রশাসন উদ্যোগ নিয়ে এগুলো বিক্রি করে কিছু গরীব মানুষের টাকা ফেরৎ দিতে পারে।