সিডরের রাতে জন্ম নেয়া তুফান নানারোগে আক্রান্ত

আল্লার উপর ভরসা কইরা আছি। আল্লায় মোর কপালেই সুখ ল্যাহেনায় অর (তুফানের) কপালে সুখ হইবে কেমনে। নানি ফুলজান বিবি (৬৮) খরাত (ভিক্ষা) কইরা ও মা সানু বেগম (৩৮)  অন্যের বাড়িতে কাম কইরা য্যা পায় হেইয়া দিয়াই কোনমতে খাইয়া না খাইয়া বাইচ্চা আছি। তুফানরে ভালো ডাক্তার দ্যাহামু কোতাদিয়া” বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে মহাপ্রলয়ের মাঝে জন্ম নেয়া ফুটফুটে শিশু তুফানের মা ছালমা বেগম (১৮)। বরিশালের গৌরনদী উপজেলার উত্তর চাঁদশী গ্রামের মৃত সেকান্দার আলীর কন্যা ছালমা বেগম।

ছালমার মা সানু বেগম জানান, ঘূর্ণিঝড় সিডরের রাতে যখন তাদের জীর্ণ কুটিরটি উড়িয়ে নিয়ে যায় ঠিক তখন তার মেয়ে ছালমার প্রসব বেদনা শুরু হয়। যখন চারিদিকে শুধু বাঁচাও বাঁচাও বলে ডাকচিৎকার চলছে, সে সময়ই খোলা আকাশের নিচে ছালমার একটি ফুটফুটে পুত্র সন্তান জন্ম নেয়। সিডরের রাতে জন্মগ্রহন করায় প্রতিবেশীরা শিশুটির নাম রেখেছেন তুফান। ঝিয়ের কাজ করে ছালমার মা সানু বেগম তার মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন একই গ্রামের নিজাম গাজীর সাথে। বিয়ের সময় নিজামের দাবি অনুযায়ি ১০ হাজার টাকা যৌতুকও দেয়া হয়েছিলো। বিয়ের পর নিজাম পূর্ণরায় ২০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করে। তার দাবিকৃত টাকা দিতে না পারায় পাষন্ড নিজাম ছালমাকে তার বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়। সে সময় ছালমা তিনমাসের অন্তঃস্বত্তা। ছালমাকে তাড়িয়ে দিয়ে নিজাম দ্বিতীয় বিয়ে করে। এরপর থেকে ছালমার কোন খোঁজ খবর রাখেনি যৌতুকলোভী নিজাম।

মায়ের ঝিয়ের কাজ ও বৃদ্ধ নানীর ভিক্ষার উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোন একমতে চলে ছালমাদের সংসার। প্রলয়ঙ্করী সিডরের তিনবছর পেড়িয়ে গেলেও ছালমাদের জীর্ণ কুটিরটি এখনও মেরামত করা সম্ভব হয়নি। কোন একমতে জীর্ণ কুটিরের মধ্যেই তাদের বসবাস। একটি ঘরের জন্য স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের কাছে বার বার ধর্ণা দিয়েও কোন সুফল মেলেনি।