ভাগ্য বদলিয়েছে গৌরনদীর দু’শতাধিক পরিবার

গ্রামের প্রায় দুই’শ মানুষ সবজি চাষ করে।


একসময় এই গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির মানুষ আছিলো অসহায়। পোলাপানগুলা বেকার থাহায় একেকটা পরিবার আরো অসহায় হইয়া পড়ে ‘যেমন নুন আনতে পান্তা ফুরাতো’ সবজি চাষ কইরা আইজ হেইসব পরিবার এহন সুখে শান্তিতেই আছে। এই গ্রামের শিক্ষিত পোলাপানরাও এহন সবজি চাষের ওপর আগ্রহ দেহাচ্ছে। মোরা যতদিন বাইচ্চা আছি সবজি চাষ ছাড়মুনা। কথাগুলো বলেন, বরিশালের গৌরনদী উপজেলার ভূরঘাটা গ্রামের সবজি চাষী চেয়ারআলী মুন্সী (৬০)। ২০ বছর বয়সে তিনি ও তাদের বাড়ির ৩/৪ জন যুবক মিলে সবজি চাষ শুরু করেন। প্রথমে শুধু টমেটো চাষ করলেও ফলন ভালো পেয়ে একে একে শুরু করেন হাইব্রীড বীজের করল্লা, চিচিংঙ্গা ও কুশি (রেহা) চাষ। তাদের দেখাদেখি ওই গ্রামের প্রায় দু’শতাধিক পরিবার এখন সবজি চাষের সাথে জড়িত রয়েছেন। ভূরঘাটা গ্রামের চারিদিকে তাকালে শুধু চোখে পড়ে সবুজের সবজি ক্ষেত্রের বিপ্লব। 

সবজি চাষ করে ভাগ্য বদলানো কৃষক বাবলু মুন্সী (২৮) জানান, কয়েক বছর আগে ১০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করে সাফল্য আসার পর আর অন্য কিছু নিয়ে ভাবেননি সে। এবার প্রায় ৫০ শতাংশ জমিতে সবজি চাষ করেছেন। অভাবী পিতার সংসারে এইচ.এস.সি পাশের পর চাকরির খোঁজে সময় নষ্ট না করে গ্রামের অভিজ্ঞ সবজি চাষিদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে সবজি চাষে মনোনিবেশ করার পর এখন তিনি একজন সফল সবজি চাষী। বর্তমানে সে কুশির চাষাবাদ করছেন। বাবলু জানান, ২০ শতাংশ জমিতে কুশি চাষাবাদে বীজ, শ্রমিক, সেচ, সার, কীটনাশকসহ সবকিছু মিলিয়ে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। মোটামুটি ফলন হলেও এর থেকে ১৮ থেকে ২০ হাজার টাকা লাভ করা যায়। স্থানীয় টরকী, মাহিলাড়া ও ভূরঘাটা কাঁচামালের আড়তে তারা সবজি বিক্রি করছেন বলেও উল্লেখ করেন।                        

আরেক সফল সবজি চাষী রুহুল আমীন (৪৫) জানান, এই গ্রামের প্রায় সব পরিবার সবজি চাষের সাথে জড়িত থাকলেও কখনও তাদের খোঁজ নেয়নি কেউ। সরকারি-বেসরকারি ভাবে কখনও তাদের কোন পরামর্শ কিংবা সাহায্য সহযোগীতা করা হয়নি। নিজেদের বুদ্ধিমত্মায় তারা সবজি চাষ করে আসছেন। তিনি ক্ষোভের সাথে বলেন, হুনছি সরকার থেইক্কা কৃষি অফিসে কতো সাহায্য সহযোগীতা আসে। তয় আইজ পোরজোনতো হেইয়া মোগো ভাইগ্যে জোডে নায়। প্রতিবছর যা আয় হয় পোলাপান লইয়া আল্লাহর রহমতে ডাইল ভাত খাইয়া বাইচ্চা আছি। তয় জমিতে সেচের অভাবে প্রতিবছর মোগো ফলন কম হয়। একদিন সেচ দিতে হইলে প্রায় হাজার টাহা দিতে হয় মেশিনের (পাওয়ার পাম্পের) ভাড়া। এতগুলা টাহার লাই¹া যেকালে সবজি ক্ষেতে সেচ দেওয়ার কাম হেইকালে সেচ দিতে পারিনা। সরকারি ভাবে মোগো এই গ্রামের লাই¹া এট্টা মেশিন (পাওয়ার পাম্প) দেয়া হলে ভবিষ্যতে মোগো আর সেচ সংকটে পড়তে হতোনা।
ভূরঘাটা গ্রামের সবজি চাষী বাবলু মুন্সী, করম আলী, মিজানুল ইসলাম, রুহুল আমীন, এস্কেন্দার মুন্সীসহ অন্যান্য চাষীদের একটাই মাত্র দাবি বাম্পার ফলনের জন্য সরকারি উদ্যোগে সেচ কাজের জন্য তাদের যেন বিনামূল্যে একটি সেচপাম্প সরবরাহ করা হয়।