যে মৃত্যুর রঙ নেই – ওয়াচডগ

She has bigger fish to fry, greater mubarokbad to encash! উল্লেখ করার মত তেমন কিছু নয় যদিও, তবু লিখছি কারণ না লিখলে ভেতরের জানোয়ারটাকে বশ মানানো যাচ্ছিল না। খবরে প্রকাশ, ঈদ উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি যাওয়ার পথে এ যাত্রায় প্রাণ হারিয়েছে সর্বসাকুল্যে ৪২ জন। কারও মৃত্যুতে কাউকে মোবারকবাদ জানানো ইহজগতের আচার না হলেও বাংলাদেশে এ প্রায় ডালভাত। পাঠককুল নিশ্চয় ভুলে যায়নি বিডিআর ম্যাসাকারের কথা? পিলখানার রক্ত বন্যা সাগরে না মিশতে জাহাঙ্গীর কবির নানক ও মির্জা আজম নামের দুই বিশাল বাংলাদেশি পুরস্কার নিয়ে হাজির হয়েছিলেন নেত্রী এবং দেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দরবারে। সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্যে যুবলীগের পক্ষ হতে নেত্রীকে ভূষিত করা হয় শান্তিকন্যা উপাধিতে। শতাধিক সেনা অফিসারের ক্ষতবিক্ষত লাশ নর্দমা আর গণকবরে রেখে দেশের সরকার প্রধান সমস্যার কথিত ঐতিহাসিক সমাধানের জন্যে শান্তিকন্যা উপাধি নিচ্ছেন, বাংলাদেশেই এসব সম্ভব। তাই এবারের ঈদের বলি ৪০ জনের মহাপ্রয়াণে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়কে মোবারকবাদ জানানোর ভেতর পশুত্বের কিছু দেখছি না। কালচারটা দেশ ও রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় হতে চালু করা হয়েছে। ওরা মালিক হয়ে যা করতে পারে ’বান্দি’ হয়ে আমরা কেন পারবো না তার কোন কারণ দেখছি না। বিডিআর শান্তিকন্যার মত এ মোবারকবাদেও কিছু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট আছে।

 

Accidents in Bangladesh

ক্ষমতাসীন দলের অন্ধ ও গৃহপালিত ভৃত্য কাম বুদ্ধি-ব্যবসায়ীরা বলবেন মসনদে আওয়ামী সরকার আছে বলেই নিহতের সংখ্যা ৪২’এ সীমাবদ্ধ রাখা গেছে। বিরোধী দল থাকলে এ সংখ্যা ৪২০ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারত। নিহত যাত্রীদের কারও যদি বিএনপি জামাতি সীল থাকে সরকারী হিসাবে সংখ্যাটা ৪২ হতে কমে আসতে বাধ্য। প্রতিপক্ষের ওরা নিশ্চয় মানুষ নয়, ওদের লগি বৈঠা দিয়ে মারা যেমন ফরজ তেমনি ফরজ রাস্তাঘাটের অপমৃত্যু । এক কথায়, সবকিছুর মুলে আছে মাননীয়া প্রধানমন্ত্রীর সুশাসন আর উন্নয়ন তৎপরতার সফল বাস্তবায়ন। দলীয় নেত্রীকে কথার মোসাহেবি দিয়ে যারা মন্ত্রী এমপি হওয়ার ধান্ধায় আছেন তাদের কেউ হয়ত নতুন কোন উপাধি নিয়ে হাজির হবেন নেত্রীর দরবার। পদক আর ভুষণেরর ব্যাপারে নেত্রীর উদারতার কথা কমবেশি সবার জানা আছে।

কাকে দায়ী করবো ৪২ জনের অকাল মৃত্যুতে? কজন ড্রাইভারকে? ত্রুটিযুক্ত যানবাহনকে? অনুন্নত ও অপরিকল্পিত রাস্তাঘাটকে? মনুষ্য জীবনকে যারা সৃষ্টিকর্তার দাবার ঘুঁটি হিসাবে বিবেচনা করেন তাদের জন্যে ব্যাপারটার হজম করা খুব সোজা, ’আল্লার মাল আল্লা নিয়ে গেছে’। অথবা, বিএনপি নেতা নাজমুল হুদার ভাষায়, ড্রাইভার আর যাত্রীরা নিজেদের ভেতর মৃত্যু মৃত্যু খেলা করে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে অবদান রেখেছে। কথার মারপ্যাঁচে অনেক কথাই বলা যায়, দুঃখজনক বাস্তবতা হল, সপরিবার ঈদের আনন্দ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে আমার আপনার মতই কজন। এদের কেউ হয়ত ব্লগ লেখে নি, ইন্টারনেট ব্যবহার করেনি। এদের মৃত্যু নিয়ে তাই ভার্চুয়াল দুনিয়ায় আহাজারি হয়না। এসব মৃত্যু নীরবে নিঃশব্দে ঠাঁই নেয় ক্ষমতাসীন রাজনীতির ব্যর্থতার তালিকায়। দেশে যোগাযোগ মন্ত্রনালয় নামের বিশাল একটা প্রতিষ্ঠান আছে। আছে এর হাজার হাজার কর্মকর্তা কর্মচারী। এদের খরচ যোগাতে বছরে ব্যয় করতে হয় কোটি কোটি টাকা। মন্ত্রী, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী আর উপদেষ্টা নিয়ে বিশাল এক রাজত্ব আছে সরকার প্রধানের। এবং সবটাই যোগাযোগের নামে। হোক তা রাজপথ, হাইওয়ে, অলিগলি অথবা হাট, মাঠ আর ঘাট, যোগাযোগের কারণে বাংলাদেশের কোথাও কেউ প্রাণ হারালে তার সবটুকু দায়দায়িত্ব বর্তাবে যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের উপর। রাজনৈতিক মৃত্যু হতে ফায়দা লোটার জন্যে মন্ত্রী এমপিরা অন্তত লাশ দেখতে যান, নিহতের আত্মীয়দের হাতে নগদ কিছু ধরিয়ে দেন। যেহেতু ঈদের মৃত্যুর কোন রাজনৈতিক পরিচয় নেই, তাই এ নিয়ে মাথা ব্যথা নেই স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের, মন্ত্রীর, প্রতিমন্ত্রীর, উপদেষ্টার, অথবা খোদ প্রধানমন্ত্রীর। দেশে আইন থাকলে আইনের প্রয়োগ থাকতে হয়, মন্ত্রী থাকলে মন্ত্রিত্ব থাকতে হয়, প্রধানমন্ত্রী থাকলে দায়দায়িত্ব নিতে হয়। ক্ষমতার রঙমহলে বসে পিতা আর স্বামী নামের কীর্তন গাওয়ার নাম দেশ শাসন হতে পারে না। দেশ শাসন করার জন্যে চাই যোগ্যতা, মেধা আর দায়বদ্ধতা। এর কোনটা নিয়ে দেশ শাসন করছেন বর্তমান অথবা অতীতের প্রধানমন্ত্রীরা?

 

পাঠকদের অনুরোধ করবো হাতের সবকিছু ফেলে দু’মিনিটের জন্যে আমার সাথে যোগ দিতে। ফ্রি হয়ে থাকলে আরও একটা অনুরোধ, এক মিনিটের জন্যে চোখ দুটো বন্ধ করুন। এবার দেখার চেষ্টা করুন নির্মম একটা চিত্র, আপনার অতি আপনজন, যেমন, মা, বাবা, ভাই-বোনদের কেউ একজন লাশ হয়ে শুয়ে আছে ৪২ জনের সাথে।

ধন্যবাদ সবাইকে।

 

লেখক: ওয়াচডগ – আমি বাংলাদেশী