বাস্তুহারা কোচানস্ত্রা এবং দুই এতিমের এতিম কাহিনী-ওয়াচডগ

আলাদা কিছু করার তাগাদা অনুভব করলেন। রূপকথার রাজকন্যাদের মত ‘হও’ বললেই যেখানে সবকিছু হয়ে যায় সেখানে এতিমদের জন্যে ‘প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল‘ তৈরী হতেও কালক্ষেপণ হল না । আতশবাজি পুড়ল না, কোথাও কেউ তোরণ নির্মান করল না, আনন্দ করতে কাউকে রাস্তায় পর্যন্ত নামতে হল না। বিশেষ প্রসব বেদনা ছাড়াই মহিয়সীর গর্ভ হতে জন্ম নিল হল “প্রধানমন্ত্রীর এতিম তহবিল’ নামক মূষিক শাবক। এ যাত্রায় রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সোনালী ব্যাংকের রমণা শাখাকে ধন্য করা হল মহতি কাজের ঠিকানা হিসাবে। দেশে গোপন থাকলেও যথাযত চ্যানেলের মাধ্যমে শুভ সংবাদটা সময় মত পৌছে দেয় হল মধ্যপ্রাচ্যের দানবীর রাজা-বাদশাদের দরবারে। ঐ অঞ্চল হতে বাংলাদেশি টাকার ৪ কোটি ৪৪ লাখ ৮১ হাজার ২১৬ টাকার সমপরিমান অর্থ উড়ে আসতে খুব বেশি দুতিয়ালির প্রয়োজন পরলো না। টাকা এলো এবং তা জমা হয়ে গেল নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে। দীর্ঘ দুই বছর ঐ টাকা বরফের মত জমে থাকল একই ব্যাংকে (দেশে কোন এতিম খুঁজে না পাওয়ার কারণে)। দুই বছর পরের ঘটনা। ক্ষমতার দিগন্তে তখন কালো মেঘের ঘনঘটা। রাজনীতির তপ্ত হাওয়া গ্রাস করে নিচ্ছে দেশের মাঠ-ঘাট। টনক নড়ল মহিয়সীর। পরিবারের ৩ সদস্য, তারেক, আরাফাত এবং মমিনুরকে প্রধান করে “জিয়া অরফেনেজ ট্রাষ্ট” গঠন করে খুলে দিলেন কোটি টাকার তালা (শেয়ালের কাছে মুরগি বর্গা)। কাহিনীর এখানে কেবল শুরু। পরিবারের এই ’ত্রইকা’ বগুড়া এবং বাগেরহাটে ট্রাষ্ট্রের নামে সামান্য কিছু জমি কিনে বাকি টাকা রেখে দেন চড়া সুদের ব্যাংক হিসাবে (নতুন)। এরপর অতিবাহিত হয়ে যায় দীর্ঘ সময়। ততদিনে মেঘনার পানি গড়িয়ে চলে গেছে যমুনায়। লতাপাতার মত বেড়ে জমাকৃত টাকার সুদ হতে উঠে আসে জমি কেনার টাকা।

কালের চাকা ঘুরে ক্যালেন্ডারের পাতায় হাজির হয় ২০০৫ সাল। ক্ষমতার দিগন্তে ততদিনে রাজত্ব করছে ভাটার টান। আবারও টনক নড়ে মহিয়সীর। এ যাত্রায় তারেক রহমান এবং মমিনুর রহমানকে দিয়ে চেকের মাধ্যমে ৩ কোটি ৩০ লাখ টাকা উঠিয়ে এফডিআর করে রাখেন গুলশানস্থ প্রাইম ব্যাংকে। এরপর সলিমুল, গিয়াস উদ্দিন, শরফুদ্দিন এবং সৈয়দ আহম্মদ নামের দলীয় কর্মীদের ব্যাংক একাউন্ট হয়ে টাকা পাড়ি জমায় আরাফাত রহমান ও ককো রহমান নামক দুই কোটিপতির ব্যাংক একাউন্টে। কারণ? কারণ এ’রা দুজনই যে এতিম (এবং দেশের একমাত্র কোয়ালিফাইড এতিম – চোখের পানি ফেলার ইমো হবে) !

কে এই মহিয়সী আর কারা এই রহমান চক্র, এসব জানতে পাঠকদের হাতড়াতে হবে দেশীয় রাজনীতির আরব্য উপন্যাস। একটা ক্লু দিতে অবশ্য অসুবিধা দেখছি না, প্রায় ৫ কোটি টাকার এতিম তহবিল নিয়ে মহিয়সী এখন বাস্তুহারা, আর কোয়ালিফাইড এতিম চক্র এখন নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে চষে বেড়াচ্ছে পৃথিবীর হরেক রকম গলি।

পাঠক, এ কাহিনী ইতালিয়ান কোচানস্ত্রাদের উপর নির্মিত হলিউডের ছায়াছবি হতে নেয়া নয়। এ আমাদের রাজনীতির অন্দরমহলের কালো কাহিনীর কালো অধ্যায়।

 

 
AmiBangladeshi.Org