উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থার বিরুদ্ধে লক্ষ লক্ষ টাকার দূর্নীতি ও অনিয়ম

অভিযোগ পাওয়া গেছে। এনিয়ে উপজেলা প্রশাসন ও সাধারণ জনসাধারণের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।


সংশ্লিষ্টসূত্রে জানা গেছে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা প্রকল্পের অধীনে ‘মানব উন্নয়নের জন্য স্বাক্ষরোত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-২ (পিএলসিইএইচডি-২) বাস্তবায়নের জন্য বেসরকারী সংস্থা ‘বাংলাদেশ রুরাল ইন্টিং গ্রোটেড ডেভেলমেন্ট ফর গ্রারাবস্ট্রিট ইকোনমি’ (ব্রীজ) নামে একটি সংস্থাকে দায়িত্ব প্রদান করা হয়। বাস্তবায়নকারী ওই সংস্থার বিরুদ্ধে ঘর তৈরি, আসবাবপত্র ক্রয়সহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করার  অভিযোগ উঠেছে। দেশের নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে মানব উন্নয়নের জন্য স্বাক্ষরোত্তর ও অব্যাহত শিক্ষা প্রকল্প-২ বাস্তবায়নের  জন্য এ প্রকল্প হাতে নেয় সরকার। ২০১৫ সালের মধ্যে নিরক্ষরতার হার শতকরা ৫০ ভাগে কমিয়ে আনার লক্ষে কমিউনিটি শিখন কেন্দ্রের একটি নেটওয়ার্ক স্থাপন করে কার্যকর দক্ষতা প্রশিক্ষণ, অব্যাহত শিক্ষা ও জীবনব্যাপী শিখন প্রক্রিয়ার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে সবার জন্য শিক্ষার লক্ষমাত্রা অর্জন এবং দারিদ্র বিমোচনের লক্ষে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়।


এ কর্মসূচির আওতায় আগৈলঝাড়া উপজেলার রতপুর, বাকাল, গৈলা, রাজিহার, বাগধা ইউনিয়নে ৩৪টি শিক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ২০০৯ সালের ১৫ নভেম্বর এসব শিক্ষা কেন্দ্রের কাজ শুরু করা হয়। কেন্দ্র গুলোতে প্রথমব্যাচে ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী পরবর্তীতে ২৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী নিরক্ষর, নব্যস্বাক্ষর ও প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ঝরেপড়া শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি ম্যাশিনারী, প্লাম্বিং ও পাইপ ফিটিং, কম্পিউটার ও ফটোকপিয়ার ব্যবহার ও মেরামত, বাঁশ-বেতের কাজ, আধুনিক মৌ-চাষ, ওয়েল্ডিং, রেফ্রিজারেশন এন্ড এয়ারকন্ডিশনিং, শ্যালোপাম্প মেকানিকসহ ১৬টি ট্রেডে দক্ষতামূলক প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা। এ কার্যক্রম শুরুর আগেই স্থানীয়ভাবে প্রতিটি কেন্দ্রে ৯ সদসদ্যের ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়। এছাড়া প্রকল্পভুক্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে সভাপতি ও সরকারী বিভাগীয় কর্মকর্তা ও ইউপি চেয়ারম্যানদের সদস্য করে উপজেলা উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা কমিটি গঠন করার কথা থাকলেও সংস্থাটি এ নিয়ম মেনে কমিটি করেননি। আগৈলঝাড়া উপজেলার নির্বাহী অফিসারসহ কোন সরকারি কর্মকর্তাকেই এ প্রকল্প শুরুর পূর্র্বে অবহিত করা হয়নি বলে তারা জানান। শিখন কেন্দ্রের সাথে জড়িত নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানান, প্রতিটি কেন্দ্রে ২৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ২৪০বর্গ ফুটের কেন্দ্রের ঘর নির্মাণ করে সেখানে আসবাবপত্র তৈরি, সেলফ, স্টিল আলমিরা, রেডিও, টেলিভিশন, ইস্যুভিত্তিক বই, জাতীয় দৈনিক পত্রিকাসহ বিভিন্ন উপকরণের জন্য ৬২ হাজার ৫ শত ৫০ টাকা বরাদ্দ করা হয়। এছাড়া ৩৪টি কেন্দ্রে শিক্ষাকোর্স পরিচালনার জন্য ২৭ লক্ষ ৯১ হাজার ৪ শ’ টাকা বরাদ্দ করা হয়। কেন্দ্র ব্যাবস্থাপনা কমিটির মাধ্যমে এ ব্যয় করার কথা থাকলেও স্থানীয় কমিটি এবিষয়ে কিছুই জানেননা।


ব্রীজ সংস্থাটি চরম দূর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে এ উপজেলা থেকে সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলা কমিটির অনেক সদস্যরা অভিযোগ করেন, শিখন ও প্রশিক্ষণ সামগ্রী প্রদানসহ সবক্ষেত্রে সংস্থাটি চরম দূর্নীতি ও অনিয়মের আশ্রয় নিয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অধিকাংশ শিখন কেন্দ্রে কাঁঠাল অথবা শিলকড়ই কাঠের চেয়ার, বেঞ্চ, ও টেবিল দেয়ার কথা থাকলেও সংস্থাটি আম ও রেইন্ট্রি জাতীয় কাঠ দিয়ে নিম্নমানের আসবাবপত্র সরবরাহ করেছে। উপজেলার ৩৪টি কেন্দ্রে আসবাবপত্র তৈরী ও উপকরন সরবরাহ ও শিক্ষাকোর্স পরিচালনা খাত থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। শিখন কেন্দ্রগুলো ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কেন্দ্রেই শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি প্রায় শূণ্যের কোঠায়। দুপুর ৪টা থেকে বিকেল ৬টা পর্যন্ত নারী এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুরুষদের এসব শিখন কেন্দ্রে লেখাপড়া ও প্রশিক্ষণ নেয়ার কথা থাকলেও বাস্তবে তার কোনো প্রতিফলন পাওয়া যায়নি।


উপজেলা কমিটির সদস্য ও আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আফজাল সিকদার জানান, ব্রীজ নামে সংস্থাটির কার্যক্রম সম্পকে আমরা কিছুই জানিনা। আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটির সদস্য উপজেলা মৎস্য অফিসার মো.আবুল কালাম, উপজেলা প্রকৌশলী মো. নজরুল ইসলাম জানান, এ প্রকল্পের কোন কার্যক্রম নেই, এমন কি আমরা যে এ কমিটির সদস্য একথা শুধু আপনাদের কাছেই শুনলাম। আগৈলঝাড়া উপজেলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপংকর বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, আমার উপজেলায় এ প্রকল্পের কোন কার্যক্রম নেই। সংস্থাটি সরকারের লক্ষ লক্ষ টাকা লুটপাট করেছে। তাদের প্রতারণা ও দূর্নীতির কারণে সরকারের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হয়নি। তাদের বিরূদ্ধে প্রতিবেদন তৈরী করে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। ব্রীজের বরিশাল আঞ্চলিক ম্যানেজার মিজানুর রহমানকে এ প্রসঙ্গে মোবাইল ফোনে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সরকারের নিয়ম অনুযায়ী প্রতিটি কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে।