সাতলার নিলার খালে বিএনপি নেতাদের বাঁধ নির্মানে এক হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো চাষ অনিশ্চিত

খালে বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করায় প্রায় এক হাজার হেক্টর জমির ইরি-বোরো চাষ অনিশ্চিত হয়ে পরেছে। এলাকাবাসি বাঁধ নির্মানের কাজ বন্ধের দাবিতে গতকাল রবিবার বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। ঘটনাটি বরিশালের উজিরপুর উপজেলার সাতলা এলাকার।


সরেজমিনে ভূক্তভোগী কৃষক, স্থানীয় লোকজন ও সংশ্লিস্টদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে, সাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ ইলিয়াস হাওলাদার, সাতলা ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আব্দুর রহমান মোল্লা, প্রভাবশালী রতন সমাদ্দার, টুটুল হাওলাদার, ইদ্রিস আলী, টুটুল বিশ্বাসসহ কতিপয় বিত্তবান ও প্রভাবশালী ব্যক্তি পশ্চিম সাতলা মৎস্য সমিতি-২ গঠন করে গত জুলাই মাসে সাতলা ইউনিয়নে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁশবাড়ি বাঁধ প্রকল্পের ১ নং পোল্ডারের ভেতরের পশ্চিম ও পূর্ব সাতলা এলাকার প্রায় এক হাজার হেক্টর জমিতে মাছ চাষ শুরু করেন। স্থানীয়রা জানান, নিবিঘে তারা এ কাজটি করার জন্য সাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইলিয়াছ হাওলাদারকে সভাপতি ও রতন সমাদ্দারকে সাধারন সম্পাদক করে ৩১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটিও গঠন করেছেন।


এ মৎস্য ঘেরের আওতায় থাকা ভূক্তভোগী কৃষক মোঃ ফারুক মোল্লা, রফিকুল ইসলাম, কাইউম ভাদ্রি, শাহাদাত হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, তৈয়ব আলীসহ একাধিক কৃষকেরা অভিযোগ করেন, পশ্চিম সাতলা মৎস্য সমিতি-২’র নামে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থে  দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা ও ষড়ষন্ত্র শুরু করেছেন। এ মৎস্য সমিতির কমিটির নেতাদের ঘেরের মধ্যে তাদের দুই শত হেক্টর জমি থাকতে পারে কিন্তু তারা প্রায় আট শত হেক্টর জমির দশ হাজার কৃষককে ভয়ভীতি দেখিয়ে জিম্মি করে মৎস্য চাষে বাধ্য করছেন। তাদের ভয়ে সাধারন কৃষকেরা আতংকিত। স্থানীয় কৃষক হোসেন মোল্লা, রফিক মোল্লা, কালাম বালী, অপূর্ব কুমার বাইন, মোবারেক মোল্লা, খালেক হোসেন, হামেদ মিয়া, মৌজে আলী মোল্লা, লক্ষী সমাদ্দার, শাহজাহান হাওলাদার, অবিনাশ মন্ডল, দুলাল মন্ডল, বসন্ত সমাদ্দার জানান, ঘেরের মধ্যে থাকা জমিতে শুধুমাত্র এক ফসল হয়। ইরি-বোরো ফসলই হচ্ছে এ এলাকার মানুষের একমাত্র অবলম্বন। আগামি ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে ইরি-বোরো চাষ শুরু হবে। এখনই বীজতলা তৈরী করার উপযুক্ত সময়। কিন্তু গত দু’দিন থেকে প্রভাবশালী মৎস্য সমিতির লোকজনে সাতলা ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়ের নিলয় খালের মুখের স্লুইচগেট হইতে বড়ই ভিটা পর্যন্ত খালের নিলার এলাকায় বাঁধ নির্মানের কাজ শুরু করেছেন। এ বাঁধ নির্মান করা হলে জমির (ঘেরের মধ্যে) পানি নামতে বিলম্ব হবে, ফলে বীজতলা তৈরী করা যাবে না। তাছাড়া ইরি-বোরো চাষের মৌসুম শুরু হলে বাঁধের মধ্যে পানিশূন্য হয়ে যাবে। ফলে কৃষকরা ইরি-বোরো চাষ করতে পারবে না। ইতোমধ্যে ওই প্রভাবশালীরা বাঁধ নির্মানের জন্য খালে প্যালাসাইডিং (পাইলিং) নির্মান সম্পন্ন করে প্যালাসাইডিং’র মাঝে বালু ভরাট করার জন্য ড্রেজিং মেশিন বসিয়েছেন।


বাঁধ নির্মান প্রসঙ্গে সাতলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সাতলা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ফজলুল হক হাওলাদার জানান, এ বাঁধ নির্মান করা হলে হাজার-হাজার কৃষকের সর্বনাশ হয়ে যাবে। ইরি-বোরো ধান চাষ করতে না পারলে সাধারন কৃষকদের পরিবার পরিজন নিয়ে অর্ধহারে অনাহারে থাকতে হবে। স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, প্রভাবশালী কর্তৃক বাঁধ নির্মান বন্ধ করতে তারা স্থানীয় প্রশাসন ও উপজেলা কৃষি বিভাগকে অবহিত করা হলেও এখনো তারা কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেননি। সাধারন কৃষকদের জিম্মি করে মৎস্য চাষ করার অভিযোগ অভিযোগ অস্বীকার করে পশ্চিম সাতলা মৎস্য সমিতি-২’র সভাপতি ও সাতলা ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক মোঃ ইলিয়াছ হাওলাদার বলেন, জোরপূর্বক নয়  কৃষকেরা নিজেদের ইচ্ছায়ই মাছ চাষে যুক্ত হয়েছেন। তার এ বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করে স্থানীয় কৃষকেরা জানান, প্রভাবশালী ওই মহলটি সন্ত্রাসীদের সংগঠিত করে বাঁধ নির্মানের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন।


এ ব্যাপারে উজিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার মোঃ আলমগীর হোসেন বিশ্বাসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, গোটা সাতলা ইউনিয়নের কৃষকেরা এক ফসলের ওপর নির্ভরশীল। বাঁধ নির্মান করা হলে সাধারন কৃষকদের চলতি বছর ইরি-বোরে চাষ করা সম্ভব হবে না। তিনি আরো বলেন, মহল বিশেষের বাঁধ নির্মানের প্রচেষ্টার কথা শুনেছি এখনো কোন লিখিত অভিযোগ পাইনি। উজিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রিয় সিন্ধু তালুকদারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, সাতলায় ঘের নিয়ে কৃষকদের সাথে বিরোধের কথা শুনেছি কিন্তু সেটা বাঁধ নির্মানকে কেন্দ্র করে কিনা তা আমার জানা নেই। এ বিষয়ে কারো কাছ থেকে কোন লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিয়ে বাঁধ নির্মানের সত্যতা পাওয়া গেলে কৃষকদের স্বার্থ সংরক্ষনে যেকোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।