জনদুর্ভোগ নিয়ে নেত্রীর উৎকন্ঠা-ওয়াচডগ
****************************************************************************
ক্যাবল টিভির দৌরাত্ম্য শুরু হয়নি তখনও। বিটিভির একক ও নিরবচ্ছিন্ন রাজত্বে বাস করছে বাংলাদেশের জনগণ। সে সময়ের একটা জনপ্রিয় টিভি সিরিজের নাম ছিল ’কোথাও কেউ নেই’ (যদি ভুল না হয়ে থাকে)। কোথাও কেউ না থাকলে জনজীবনের সুবিধাগুলোর কিছুটা চিত্র দেখা গেছে এবারের কুরবানী ঈদে। খাঁ খাঁ করছে মনুষ্য ভারে নুয়ে পড়া ঢাকা শহর, ভোজবাজির মত মিলিয়ে গেছে দুর্ঘটনা, রাতারাতি বিদায় নিয়েছে হত্যা, ঘুম, ছিনতাই, রাহাজানি সহ হাজার রকমের অপরাধ। নাড়ির টানে যাদের ঘরে ফিরতে হয়নি তারা প্রাণভরে উপভোগ করেছেন ক্ষণিকের এ স্বস্তি। কোথাও কেউ নেই’এর সুবিধা শুধু নগর জীবনের জন্যে প্রযোজ্য এমনটা বললে নিশ্চয় কম বলা হবে, এর আওতায় আনা যায় আরও অনেক কিছু। এই যেমন খেলার মাঠ, রাজনীতির মাঠ, প্রেমের ময়দান, ইত্যাদি। কলেজ জীবনে ফুটবল ম্যাচ দেখতে প্রায়ই ঢাকা স্টেডিয়ামে যেতাম। আবাহনী ও দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের মধ্যে খেলা ছিল সেদিন। কোন এক জটিল সমীকরণের কারণে আবাহনী দল মাঠে এলো না। আর তাতেই জ্বলে উঠল লীগ তালিকার নিম্ন সারীর দল দিলকুশা। ফাঁকা মাঠকে গোলের বন্যায় ভাসিয়ে ফিরে গেল বীরের বেশে।
অর্থাৎ, ‘ অবৈধ পন্থায় দখলকৃত বাড়ি বাঁচাইবার নিমিত্তে হরতাল
দিয়া জনগণের কষ্ট বাড়াইবার কোন অধিকার নাই খালেদা জিয়ার‘।
এতদিন জানতাম একটা দেশের সরকার অথবা রাষ্ট্রপ্রধান বিদেশে গেলে গোটা দেশের প্রতিনিধি হিসাবেই যান, একটা বিশেষ দলের নয়। আমাদের এ প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে অস্বাভাবিক রকমের বিপরীত। এমনকি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের দাড়িয়ে সগৌরবে বলে যান নিজ দলের সাফল্য আর বিরোধী দলের ’কদর্য্যের’ কথা। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। হরতাল করার অধিকার নিয়ে কথা বললেন। উনার কথার সাথে নিকট অতীতের বাস্তবতা তুলনা করলে আমাদের ধরে নিয়ে হবে এ দেশে হরতাল করার অধিকারও সংরক্ষিত আছে প্রধানমন্ত্রীর নিজ দলের জন্যে। জনগণের অসুবিধার জন্যে তিনি উৎকণ্ঠিত, আর তাই বিরোধী দলীয় নেত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন হরতাল না দেয়ার জন্যে। রাশিয়ার রাজনীতি এবং এর জনগণও অনেকটা আমাদের মত। মিথ্যাচার আর রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস আমাদের মত সেখানেও ডালভাত। এমন একটা দেশে বসে এমন নির্জলা মিথ্যাচার একেবারেই বেমানান মনে হয়নি। কোথাও কেউ না থাকলে এসব মিথ্যাচার সহজেই পার পেয়ে যায়। কিন্তু আমরা যারা রাশিয়া হতে হাজার মাইল দুরে আছি তাদের সবাই এখনো অলসাইমার রোগে আক্রান্ত হয়েছি এমনটা মনে করে থাকলে প্রধানমন্ত্রী ভুল করে থাকবেন। আমরা অনেক কিছুই ভুলিনি। ভুলিনি প্রধানমন্ত্রীর হরতাল ম্যারাথন, এর নৈরাজ্য এবং আমজনতার সীমাহীন দুর্ভোগ।
পৃথিবীর কোন কিছুই আপন মার চাইতে বড় নয়, হোক তা জন্মভূমি আর তার রাজনৈতিক বেশ্যাবৃত্তির পেশাদারী গণতন্ত্র। মা বেচে নেই কিন্তু হরতালের কাছে জিম্মি ভীত সন্ত্রস্ত মার চেহারা যতদিন চোখের সামনে ভাসবে ততদিন হরতালের পক্ষ বিপক্ষ নিয়ে নেত্রীদের আহাজারী বেশ্যাদের খদ্দের শিকারের মন্ত্র হিসাবেই গণ্য করে যাব। শেখ হাসিনাও এর ব্যতিক্রম নন।
লেখক : ওয়াচডগ : আমি বাংলাদেশী ডট অর্গ