বরিশালসহ দক্ষিনাঞ্চলের অজ্ঞান-মলম পার্টি লাগামহীন ॥ আতঙ্কে সাধারন যাত্রীরা

তাদের কার্যক্রম দিনদিন বেড়ে চলছে। প্রতিনিয়তই তাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ঢাকা বরিশাল রুটের চলাচলকারী লঞ্চ ও বাসের যাত্রীরা। গত মঙ্গলবার বাকেরগঞ্জের ব্যবসায়ী কাবেল জোমাদ্দারকে অজ্ঞান করে লুটে নিয়েছে সাড়ে ৩ লাখ টাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা।  এ ব্যাপারে কাবেল জানায় বাকেরগঞ্জ থেকে বাসে ওঠে এসময় বাকেরগঞ্জ থেকে অজ্ঞাত আরও ২ জন লোক ওঠে এবং একজন তার পাশে বসেন। গাড়ি ছাড়ার অনেক পরে পাশে বসা লোকটা তাকে মাথা ধরার বড়ি খেতে বলে। তার কথামত কাবেল ঐ বড়ি খেলে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। ২ দিন পর কাবেলের জ্ঞান ফেরে। কিন্তু তার সাথে থাকা টাকা নিয়ে পগারপাড় ঐ অজ্ঞাত ব্যস্তি। এব্যাপারে কাবেল বাদী হয়ে বাকেরগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। পুলিশ তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে। তবে অনেকরেই সন্দেহ এ কাজে বাকেরগঞ্জের মলমপার্টি নেতা জাহিদুল ও অজ্ঞান পার্টি নেতা ফারুক জড়িত রয়েছে। বিশেষ করে ঐ দিন তাদের বাসস্ট্যান্ডে ঘোরারুরি করতে দেখা গেছে।

ম্প্রতি কয়েকটি বিশেষ স্পটে বেশ সক্রিয় এসব পার্টি। তবে পুলিশের চোখকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে তারা জনগনের স্বর্বস্ব লুটে নিচ্ছে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছে বরিশালের সচেতন নাগরিকরা। তারা মনে করেন মলম-অজ্ঞাণসহ এইসব লুটেরা পার্টির সাথে পুলিশের আতাত রয়েছে। লুটে নেওয়া মালামালের একটি অংশ তাদের পকেটেও যাচ্ছে। নতুবা পলিশের টহল ও এত অভিযান সত্বেও পার পেয়ে যাচ্ছে অজ্ঞাণ ও মলম পার্টির লুটেরা। অপর দিকে আরেকটি মহল মনে করে পুলিশের বিশেষ অভিযানে এসব লুটে সদস্যরা গ্রেফতার হলেও নানা কারনে কোর্ট থেকে তারা জামিনে বেরিয়ে আসে। এজন্য অবশ্য পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তাদের গাফিলতি মুল কারন। কেননা গ্রেফতার হওয়ার পরে অজ্ঞান- মলম পার্টির সদস্যরা নিজেদের নাম গোপন রেখে মিথ্যে নাম ব্যবহার করে। পুলিশের ইনকোয়ারীতে তাদের নামের ব্যাপারে কোন নির্দিষ্ট তথ্য দাখিল করতে ব্যর্থ হন পুলিশ কর্মকর্তরা। সেটা দৃশ্য কারনেই হোক বা অদৃশ্য কারনেই হোক।  ফলে সহজেই তারা আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে যান।

সুত্রমতে, অজ্ঞান পার্টি, মলম পার্টি, পটকা পার্টি, পান পার্টি, চকলেট পার্টি, রুমাল পার্টিসহ বিভিন্ন লুটে নেওয়া পার্টি বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বেশ সক্রিয় হয়ে উঠেছিল। বিগত বিএনপি-জামাত জোট সরকারের আমলেও এই পার্টি গুলে বেশ চাঙ্গা হয়েছিল। সরকার অবশ্য মলম পার্টি- অজ্ঞান পার্টির হাত থেকে সাধারন মানুষকে রক্ষার জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহন করেছিল। কিন্তু তাদের সে পদক্ষেপ বেশি দিন থাকেনি। ফলে ঐসব লুটে নেওয়া পার্টিগলো বীর দর্পে তাদের কাজ সফলতার সম্পন্ন করত। তারপরে ১/১১’র সময়ে নেওয়া পদেক্ষপে ঐসব পার্টিগুলো বেশি দিন থাকতে পারেনি। র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে অজ্ঞান- মলম পার্টির নেতারা গ্রেফতার হতে লাগলে সহযোগীরা পালিয়ে দিন কাটাতো। কিন্তু বতর্মান সরকারের সময়ে সেনাবাহিনির সদস্য, সরকার দলীয় শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এইসব মলম পার্টির খপ্পরে পড়ার কারনে টনক নড়ে সারাদেশের প্রশাসনের। সম্প্রতি ঢাকার আশে পাশের এলাকায় চালানো হয় অভিযান । মলম- অজ্ঞান পার্টির সহযোগী পার্টি পাকড়াও র‌্যাব-পুলিশের যৌথ অভিযানে ঢাকা থেকে বিতাড়িত হয় এসব পার্টির সহযোগী সদস্যরা। কিন্তু ঢাকা থেকে বিতাড়িত হয়ে থেমে নেই তারা। স্ব-স্ব এলাকায় তারা গড়ে তুলেছে তাদের এই ক্রাইম নেটওয়ার্ক। এইসব লুটে নেওয়া পার্টি তাদের স্ব-স্ব এলাকায় থাকা তাদের গুরু এমনকি বিগত আমলে বিতাড়িত অথবা দীর্ঘ দিন জেল খাটার পরে এলাকায় ফিরে এসছেন তাদেরকে নিয়ে শুরু হয়েছে তাদের কর্ম পরিকল্পনা। এই কর্মপরিকল্পনায় বরিশালসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের সর্বত্র বিস্তার হয়েছে মলম ও অজ্ঞান পার্টির । খুলনা-বরিশাল- কুয়াকাট রুটে গাড়িতে কিংবা লঞ্চে শুরু হয়েছে তাদের লেট নেওয়ার কাজ।

গেয়েন্দাসংস্থার একটি সূত্র জানায়, সম্প্রতি মলম পার্টির একটি গোপন বৈঠকে বরিশালসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের মলম পার্টির দায়িত্ব দেওয়া হয় বাকেরগঞ্জের জাহিদুলকে। তার প্রধান সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব নেয় গুন্ডা ফারুক। বিশেস করে দক্ষিনাঞ্চলের অজ্ঞান-মলম পার্টির নেতা জাহিদুল এবার অজ্ঞান পার্টি ছেড়ে মলম পার্টির দায়িত্বে অসীন হয়েছে। দীর্ঘ কয়েক বছর অজ্ঞান পার্টির সহযোগী নেতা হিসেবে থেকে সফলতার সাথে কাজ করার বদৌলতে মলম পার্টির ও অজ্ঞান পার্টি এ্যাসোসিয়েশন বাকেরগঞ্জের এই জাহিদুলকে দিয়েছেন দক্ষিনাঞ্চলের মলম পার্টির দায়িত্বে। আর তার প্রধান সহযোগী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে সাধারন মানুষের স্বর্বস্ব লুটে নিচ্ছে এক সময়ের গড ফাদার, চকলেট পার্টির প্রধান ফারুক ওরফে গুন্ডা ফারুক। সহযোগী অণ্যান্য সদস্যরা হলেন, অজ্ঞান পার্টির নেতা বাদশা, জাহাঙ্গির, ওহিদুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম। এছাড়াও তাদের নতুন সদস্যপদে বরিশাল জেলার ১০টি উপজেলার মধ্যে সদর উপজেলা, গৌরনদী, বাবুগঞ্জ, বাকেরগঞ্জ, আগৈলঝাড়া, মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলা থেকে ২৬ জন, ভোলা জেলা থেকে ১৫ জন, ঝালকাঠী জেলা থেকে ১২ জন, পটুয়াখালী জেলা থেকে ১১ জন, পিরোজপুর জেলা থেকে ১৪ জন এবং পিরোজপুর জেলা থেকে ৮ জন নতুন সহযোগী সদস্য স্থান পেয়েছে বলে ঐসব পার্টির গোপন সুত্রে জানা গেছে।

অন্য একটি বিস্বস্ত সূত্রে জানা গেছে দীর্ঘদিন যাবৎ জাহিদুল ঢাকা-বরিশাল রুটের বাসে সাধারন যাত্রীদের  ওষূধ মেশানো খাবার খাইয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে আসে। এই অপরাধী বাকেরগঞ্জ উপজেলার রঙ্গশ্রী ইউনিয়নের দাওকাঠী গ্রামের ছাত্তার হাওলাদারের এর ছেলে। ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় জাহিদুল তার অপকর্ম কিছুটা কমিয়ে দিয়েছিল। খোজ নিয়ে জানাগেছে, এই জাহিদুল একসময়ে বাকেরগঞ্জের আলোচিত জালাল বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে দীর্ঘদিন কাজ করেছিল। কিন্তু নিজের স্বার্থ হাসিল হওয়ার পরে বাহিনীর অবস্থা খারাপ প্রেক্ষাপটে কেটে পড়ে ঢাকায় পাড়ি জমায় সন্ত্রাসী জাহিদুল। সেখানে নতুন পরিচয়ে পরিচিত করে যোগ দেয় অজ্ঞান পার্টির সাথে।

উলেক্ষ্য যে ওয়ান ইলেভেন সরকারের সময় জাহিদুল ঢাকায় ডিবি পুলিশের হাতে আটক হয়ে বেশ কিছুদিন জেল হাজতে থাকেন। কিন্তু রাজনৈতিক সরকারের আগমনে তার অতৎপরতা আবার বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যে জাহিদুলের মলম পার্টির নানাবিধ কর্মকান্ডে বরিশালসহ গোটা দক্ষিনাঞ্চলের জনমনে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘদিন এই জাহিদুল সে ঢাকা-বরিশাল রুটের বাসে ও লঞ্চে সাধারন যাত্রীদের  ওষূধ মেশানো খাবার খাইয়ে তাদের সর্বস্ব লুটে নিয়ে আসে। জাহিদুল অজ্ঞান পার্টির সাথে জড়িত থেকে লাখ লাখ টাকার মালিক বনে গেছেন। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন থানায় মামলা দায়ের হয়েছে। অসংখ্যবার তিনি পুলিশ ও ডিবি’র হাতে আটক হয়েছেন। কিন্তুজাহিদুল বেশিদিন কারাগারে থাকেনি। বের হয়ে শুরু করে তারা অপকর্ম।

বরিশালবাসীর দাবী উঠেছে চিহ্নিত অজ্ঞান পার্টির নেতা , সন্ত্রাসী জাহিদু কে অতিসত্তর গ্রেফতার করার। এ ব্যাপারে তারা র‌্যাব- পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ দাবীকরে আবেদন করেছে ।  এবিষয়ে বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি বিনয় কৃষ্ণ বালা বলেন, অজ্ঞান পার্টির বিষয়ে বরিশালের পুলিশ তৎপর রয়েছে । দু’একটি ঘটনা ঘটতে পারে তবে এসব অপকর্মের হোতাদের গ্রেপ্তারে চেস্টা অব্যাহত রয়েছে ।