বরিশাল মহানগরের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়লেন সাবেক মেয়র কামাল

সম্পাদকও হতে পারলেন না সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল। বিধি বাম! এখন পুরোপুরি তিনি মহানগরের রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ায় হতাশ তার সমর্থকরা। বিপরীতদিকে আনন্দের বন্যা বইছে তার ঘোর বিরোধী এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার সমর্থকদের মাঝে।
প্রসঙ্গত বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার বরিশাল মহানগর বিএনপির সভাপতি এবং কামরুল আহসান শাহিন সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কেন্দ্রীয় কমিটি মঙ্গলবার রাতে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালের সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপিতে দুটি গ্রুপের আবির্ভাব ঘটে। মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি ও মেয়র আহসান হাবীব কামাল এবং জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক এবায়েদুল হক চাঁন দলীয় সিদ্ধান্তকে অমান্য করে মেয়র নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করায় তাদের ওপর নেমে আসে বহিষ্কারের খড়গ। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কিছু দিন আগে এবায়েদুল হক চাঁনের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয় হাইকমান্ড। আর গত বছরের জুন মাসের ১ম সপ্তাহে আহসান হাবীব কামালের বহিষ্কারাদেশ তুলে নেয়া হয়।কামালের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পর ফের বিএনপিতে প্রকাশ্য গ্রুপিং রাজনীতির সূচনা ঘটে। সরোয়ার-কামাল গ্রুপের মধ্যকার কোন্দলে নানা বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দিয়েছে। উভয় গ্রুপে বেশ কয়েকবার সংর্ঘষের ঘটনাও ঘটেছে। গত বছরের ১৫ জুন মেয়াদোর্ত্তীর্ণ সাংগঠনিক কমিটি ভেঙ্গে দিয়ে বরিশালে আহবায়ক কমিটি ঘোষণা করে বিএনপির হাইকমান্ড। বিশেষ করে মহানগর আহবায়ক কমিটি গঠনের শুরু থেকেই এখানে দলের মধ্যকার দ্বন্দ্ব আরো মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। এরপর অভ্যন্তরীণ কোন্দলে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে থাকে। চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারির মধ্যে এখানকার জেলা ও মহানগরের কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু উভয় গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনাকর পরিবেশে সম্মেলন স্থগিত করে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপর বরিশাল জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষে রাজধানী ঢাকায় সভায় বসার সিদ্ধান্ত নেয় হাইকমান্ড। এরইধারাবাহিকতায় গত ৭ আগষ্ট দুপুরে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের লক্ষে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বৈঠক বসে। সেখানে সরোয়ার কামাল সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ায় সভা পন্ড হয়ে যায়।

ওদিকে বহিস্কারের খড়গ উঠার পর থেকেই কামাল মহানগরের সভাপতি হতে লবিং গ্রুপিং করে আসছিল। মাঝখানে রাজনীতির ময়দানে কথা উঠে মহানগরের সভাপতি হচ্ছেন সরোয়ার।আর সম্পাদক হতে যাচ্ছেন কামাল। কিন্তু মহানগরের সভাপতি সম্পাদক কোনটিই কপালে জুটল না কামালের।
সূত্রে আরো জানা গেছে, আহসান হাবীব কামাল মাঠের রাজনীতি থেকে দুরে অবস্থান করে অন্ধরমহলের রাজনীতির মাধ্যমে দলের মধ্যে বিভাজন বাড়িয়ে তুলে আসছিল। কেন্দ্র এ বিষয়টি টের পেয়ে ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেন কামালের উপর। এছাড়া আস্তে আস্তে আস্তাভাজন সমর্থকরা কামালের ঘরোয়া রাজনীতি থেকে দুরত্বে অবস্থান করে।কেউ কেউ কামালের ঘোর বিরোধী এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার শিবিরেও যোগ দেয়। ফলে ক্রমেই কামালের গ্র“পিংর রাজনীতির মাঠ ছোট হয়ে আসে। মাঠের রাজনীতির দীর্ঘ দিনের আস্তাভজন জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি মনোয়ার হোসেন জিপু। অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে জেলা ও মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে  এক বেঠকে প্রকাশ্যেই এমপি সরোয়ার শিবিরে ভীড়ে যান। একই সঙ্গে সরোয়ার শিবিরে ভীড়েছেন বরিশাল কোতোয়ালী থানার সভাপতি শেখ আবদুর রহিম, সাবেক সভাপতি উপজেলা চেয়ারম্যান আজিজুল হক আক্কাস। যদিও রহিম আক্কাস এক সময়ে সরোয়ার গ্র“পেরই সমর্থক ছিলেন। মাঝখানে দলীয় পদ বঞ্চিত হয়ে সরোয়ারের গন্ডি থেকে বের হয়ে কামালের রাজনীতির সঙ্গে একাতœতা প্রকাশ করেছিলেন। এর আগে কামালের রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে এসেছেন মহানগর বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক অ্যাড.আলী হায়দার বাবুল।

এদিকে এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার সভাপতি ও তার আস্তাভাজন কামরুল আহসান শাহিন সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ায় বরিশালে সরোয়ার সমর্থকরা বিভিন্ন স্থানে মিষ্টি বিতরন করছেন। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বরিশাল জেলা আইনজীবী সমিতিতে কামরুল আহসান শাহিনকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। উপস্থিত ছিলেন অ্যাড.শহিদ হোসেন, বাচ্ছুসহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ। অপরদিকে কামাল সমর্থকরা নিরবে রয়েছেন। তারা বর্তমানে হতাশায় ভুগছেন।

বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এমপি মজিবর রহমান সরোয়ার বলেন, মহানগরের সভাপতি আমাকে আর কামরুল আহসান শাহিনকে সম্পাদক করার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে হাইকমান্ড। বিষয়টি আমি কেন্দ্র থেকে জেনেছি। সাবেক মেয়র আহসান হাবীব কামাল বলেন, আমি এখন পর্যন্ত মহানগরের কমিটি গঠনের বিষয়টি জানি না। মহানগর বিএনপি নেতা ত্যাগী নেতা হিসাবে পরিচিত মহানগরের সম্পাদক প্রার্থী এ্যাড.আলী হায়দার বাবুল বলেন, এখন আর রাজনীতিতে সততা মেধার কোন মূল্যায়ন নেই। রাজনীতিতে মূল্যায়ন হচ্ছে টাকা। টাকার মাধ্যমেই পদের অধিকারী হওয়া সম্ভব বলে তিনি মন্তব্য করেন। মহানগর বিএনপি নেতা কট্রর কামাল পন্থী অ্যাড.মহসিন মন্টু বলেন, মহানগরের কমিটির সভাপতি সম্পাদক  ঘোষনা করা হয়েছে। সেখানে আহসান হাবীব কামালকে রাখা হয়নি। কারন তাকে জেলায় শীর্ষ পদে আসীন করা হবে।