মুলাদীতে অগ্নিদ্বগ্ধ মুক্তা মারা গেছে

আক্তার মুক্তা (১৫) মারা গেছে। ৬ দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে গতকাল শনিবার ভোর রাতে ঢাকা মেডিকেলের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।

মুক্তার পিতা মিজানুর রহমান কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, ভোর পৌনে ৫টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক মুক্তাকে মৃত্যু বলে ঘোষনা করেন। তিনি আরো জানান, তার মেয়ে মারা যাওয়ার জন্য যারা দায়ী তিনি তাদের বিচার চান।

জানা গেছে, বরিশালের মুলাদী উপজেলার তেরচর এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মিজানুর রহমানের কন্যা জোবায়দা আক্তার মুক্তা। সে উপজেলার মাহমুদজান পাইলট উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেনীর ছাত্রী। দীর্ঘ ৬ মাস ধরে তার সঙ্গে একই উপজেলার কলাগাছুয়া খেজুরতলা এলাকার মন্টু হাওলাদারের পুত্র সাইফুল ইসলামের প্রেমের সম্পর্ক চলে আসছিল। বিভিন্ন স্থানে মুক্তাকে নিয়ে সাইফুল ঘুরেও বেড়াত। একপর্যায়ে উভয়ের পরিবারের মধ্যে সম্পর্কের বিষয়টি জানাজানিও হয়। এরপর মুক্তা বিয়ের জন্য সাইফুলকে চাপ প্রয়োগ করে। বিয়ের জন্য চাপ প্রয়োগ করায় সাইফুল মুক্তাকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে। সাইফুল মুক্তাকে সাফ জানিয়ে দেয় তোমার সঙ্গে আমার সম্পর্ক নেই। আর তোমাকে বিয়ে করারও কোন প্রশ্ন আসে না। এ ঘটনা মুক্তা তার বাবা মাকে অবহিত করে।

গত ১০ অক্টোবর মেয়ের বাবা মিজানুর রহমান বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে প্রেমিকের পিতা মন্টু হাওলাদারের বাড়ি যায়। সেখানে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখান করা হয়। বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে  প্রেমিক সাইফুল প্রেমিকাকে গালাগাল করে দেখিয়ে নেয়ার হুমকি প্রদান করে। সর্বশেষ গত ৩ ডিসেম্বর রাতে সাইফুল পুনরায় প্রেমিকা মুক্তাকে ফোন করে দেখিয়ে দেবার হুমকি দিয়ে অশ্লীল ভাষায় গালাগাল করে। রাগে ক্ষোভে অভিমানে ৪ ডিসেম্বর শনিবার রাত ১০টার দিকে মুক্তা ঘরের সামনে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন জালিয়ে দেয়। অগ্নিদ্বগ্ধের আগে ডায়রীতে সে লিখে গেছে বাবা মা আমাকে ক্ষমা করে দিও। আমার মৃত্যুর জন্য সাইফুল ও তার ভাতিজা নাঈম দায়ী। ওদেরকে তোমরা কখনো ক্ষমা করবে না। ওদের আমি শাস্তি চাই। অগ্নিদ্বগ্ধের সময় তার চিৎকারের কিছুক্ষন পর পরিবারের লোকজন ও প্রতিবেশীরা তাকে উদ্ধার করে মুলাদী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই রাতেই তাকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরন করে। রাত একটায় তাকে শেবাচিম হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। ৫ডিসেম্বর বিকেল তিনটায় শেবাচিম হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে প্রেরনের সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু মুক্তার পরিবার অর্থ যোগার করতে না পারায় ওই দিন ঢাকায় নিয়ে যেতে পারেনি। পরের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মুক্তাকে ভর্তি করা হয়।

এদিকে এ ঘটনায় ৬ ডিসেম্বর রাতেই মুক্তার পিতা মিজানুর রহমান বাদি হয়ে মুলাদী থানায় সাইফুল, নাঈমসহ চারজনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। মুলাদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি আমিরুজ্জামান আমির বলেন মুক্তার অগ্নিদ্বগ্ধের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার আসামিদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে।