তসলিমা নাসরিন (পোস্টমর্টেম পার্ট-১)

বাংলাদেশ থেকে শুধু নারীদের অধিকার নিয়ে কথা বলতে যাবার হেতুতেই তনা আপুকে বাংলাদেশ থেকে চলে গিয়ে নির্বাসিত জীবন যাপন করতে হচ্ছে বলে তিনি বলে থাকেন। আমি তসলিমার নারীবাদী চরিত্রের খোঁজ নিতে গিয়ে মনে করলাম আসলে যুক্তি তর্ক, উইকি পিডিয়া,জার্নাল,খাতা,পেন্সিল এইসব উপকরণ না ঘেটে তার বই থেকেই আপনাদের উদাহরণ দেই।

তসলিমা কি আসলেই নারীবাদী? তসলিমা কি আসলেই নিজে যা বলেন তা বিশ্বাস করেন? তিনি কি আসলেই মেয়েদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চান নাকি সব তার ভন্ডামি? এসব প্রশ্ন অনেকদিন ধরেই আমাকে আলোড়িত করছে। ১৯৯৪ সালে মোল্লারা যখন তনার কল্লা চেয়ে মিছিল করেছে তখন আমরা ঢাকা ইউনিতে রাস্তায়, গোপনে মিটিং করেছি তনাকে বাঁচাবার জন্য। শামীম শিকদারকে প্রটেকশন দিয়েছি, প্রটেকশন দিয়েছি যারা যারা তনাকে বাঁচাতে চান। অথচ আজকে এতদিন পর তনার ভন্ডামি আমার এই বৃদ্ধ চোখে ধরা পড়ল। কিন্তু বেলা গড়িয়েছে অনেক। এখন তনা পুরো পৃথিবীর কাছে নারীবাদী এক বিজ্ঞাপন। নারীবাদের আদর্শ। তনার ভক্তরা আজাদ স্যারকে নকলবাজ বলে আখ্যা দেন, হার্ভার্ডের প্রফেসর বলে হাঁক দিয়ে ওঠেন।

কিন্তু এই তথাকথিত নারীবাদী লেখিকা তার নিজের বই গুলোতেই ফাঁক রেখে দিয়েছেন, রেখে দিয়েছেন তার ভন্ডামীর ছাপ। একজন মানুষ যখন ভান করেন তখন তিনি নিজেকে তার আসল রূপ থেকে হাজার চেষ্টা করেও লুকোতে পারেন না। তার বলা মিথ্যেই তার কাছে সত্য হতে থাকে।

এরকম একটা অবস্থায় আমি চিন্তা করেছি, তনার নিজের লেখার বই থেকেই আপনাদের অল্প অল্প করে উদাহরণ দিয়ে যাব তার আসল নারীবাদী চরিত্রের-

তাহলে দেখুন-

আমি পরীক্ষার জন্য প্রথমেই হাতে তুলে নেই তনার লেখা বই “ক” ।

লেখার শুরুতে একটি মজার তথ্য দেই, এই বইটির শুরুতে তনা যাদের কাছে তার সারা জীবনের ঋণ এমন একটি ফর্দ আমাদের ধরিয়ে দিয়েছেন। যেখানে তিনি ১৪ জন মানুষের নাম লিখেছেন। এর মধ্যে ৮ জন হচ্ছেন পুরুষ।

ক বইটির প্রথম লেখার নাম ” ব্রক্ষপূত্রের পাড়ে”

এই গল্পের সময়কালীন পটভূমিতে তনা সরকারী চাকুরী করতেন সূর্যকান্ত হাসপাতালে। তখন ছিলো খুব কলেরার উপদ্রব। তনা কাজ করছিলেন দেশের জন্য। মাতৃকার জন্য। এই সময়ে তিনি ময়মন্সিং স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্তা মজিবর রহমানের উপর তার অনেক ক্ষোভের কথা, প্রুষ তান্ত্রিক সমাজে এরাই কর্তা এই ধরনের কথা বলতে গিয়ে পেটের আসল কথা বের করে আনেন।

তিনি এক পর্যায়ে বলেন,(পৃঃ১৩)

চৌচালা টিনের ঘরটিতে শক্ত কাগজের দেয়াল দিয়ে দুটি ঘর তৈরী করা হয়েছে, ছোটটিতে বসেন মজিবর রহমান, বড়টিতে চার জন, চারজনের একজন আম্বিয়া বেগম। কড়া লিপিস্টিক মেখে, গালে গোলাপী পাউডার লাগিয়ে নিপাট নিভাঁজ শাড়ি পরে তিনি আপিসে আসেন। তিনি ওষুধের গুদাম ঘরটিতে ঢোকেন ওষুদের হিসাব নিতে। ঘন্টা কেটে যায়, হিসাব নিতেন নেওয়া শেষ হয়না।

এর পরে অবশ্য তিনি প্রচ্ছন্ন একটি সম্ভাবনার কথা বলেছেন যে আম্বিয়া বেগম মজুবর রহমানের সাথে দৈহিক মিলনের জন্যই গুদাম ঘরে যান।

আমার প্রশ্নঃ

১) এখানে আম্বিয়া খাতুনকে খুবি শ্লেষাত্নক ভাবে তার গালে পাউডার দেয়া, লিপিস্টিক দেয়া,কিভাবে শাড়ি পড়ছেন তার ইংগিত দেয়ার কারণ কি? অন্য কারো কোনো কিছুর বর্ণনা আপনি দিলেন না কিন্তু একজন নারীর বর্ণনাই শুধু আপনি দিলেন কেন এখানে মিস তনা আপু?

২) আচ্ছা, এখন যদি মিস আম্বিয়া খাতুন গুদাম ঘরে শারিরীক মিলনের জন্যও যদি মজিবুর রহমানের সাথে ঢোকে তাহলে আপনার সমস্যা কি? নারী বলে কি তার স্বাধীনতা নেই? সে কি যৌন মিলন করতে পারবেন না যার সাথে তার ইচ্ছা তার সাথে? এভাবে সারকাস্টিক টোনে আলাদা করে আম্বিয়া বেগমের নাম বলা হলো কেন তনা আপু?

তনা আপুর এই বইয়ের পরের অংশের নাম “খুঁটি নাটি”

এইখানে সংক্ষেপে বলি, শিপ্রা নামে তনা আপুর এক বান্ধবী আছেন। যিনি বিবাহিত হওয়া সত্বেও পরকীয়া প্রেমে একজন ডাক্তার সাহেবের সাথে মত্ত। পৃঃ১৭ এর একটি অংশে তনা বলেন,

এত বছর এ শহরে থেকেও শিপ্রা কথা বলে রাজশাহীর ভাষায়। ময়মন্সিঙ্গের ভাষার তুলনায় পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর। আইবাম, খাইবাম,যাইবাম চন্দনার মত রপ্ত করা শিপ্রার পক্ষে সম্ভব হয় না, এখনো সে আসব খাব যাব তে রয়ে গেছে। তা থাক, শিপ্রা যেমন আছে তেমন দেখতেই ভালো লাগে। শিপ্রা লম্বায় আমার চেয়ে দুই ইঞ্চি বেশী, মেদ মাংশে আমার চেয়ে কেবল দুই ইঞ্চি নয়। অনেক ইঞ্চিই বেশী। ক্লাসের সবচেয়ে লম্বা মেয়ে বলে আমার পরিচয়খানি শিপ্রার সামনে এসে খুব ম্লান না হলে খানিকটা ম্লান তো হয়ই।

এই অংশটিতে বুদ্ধিমান পাঠক কি লক্ষ্য করেছেন, যে একজন নারী কি করে আরেক নারীর সাথে একটি খুবই স্থুল প্রতিযোগীতার ইংগিত দিচ্ছেন। শিপ্রা ২ ইঞ্চি লম্বা কিন্তু মেদের পরিমাণ বেশী অথনা তনার মেদ কম তাই ২ ইঞ্চি খাটো হলেও ক্লাসের সবচাইতে লম্বা মেয়ে হিসেবে পরিচিত থাকলেও এতে করে তার পরিচয় খুব ( এই খুব শব্দটি বইয়ে ইটালিক করে দেয়া আছে একটি ইংগিত হিসাবে) ম্লান হয় না।

আমার প্রশ্ন হচ্ছে,

১) শারিরীক এই দূর্বলতা যেমন কার মেদ কম বা বেশী বা কে বেশী লম্বা এই জাতীয় ব্যখ্যা একটি মানুষের জন্য কেন দরকার? তনার মত এত বড় নারীবাদী অন্য মেয়ের শরীর বা গঠন নিয়ে কেন এই জাতীয় কম্পারেটিভ আলোচনা করেছেন?

যদিও তিনি দাবী করেছেন এই ম্লানতা তাকে ছুঁতে পারে না তবে এই আলোচনার দরকার কি আদৌ ছিলো? কিংবা “খুব” শব্দটিতে আলাদা করে ইটালিক ফন্ট করে দেবার দরকার-ই ছিলো বা কি? তনা কি নিজেকে জাহির করতে চাইলেন?

এই বইয়ের ১৯ নাম্বার পৃষ্ঠাতে একটি উদাহরণ আছে যা খুব ইন্টারেস্টিং এই তথাকথিত নারীবাদীর পোস্ট মর্টেমের ক্ষেত্রে।

তনা লিখেছেন-

এরপর শুনলো ক্লাসের কিছু কুতসিত দেখতে কিছু মেয়েও বিয়ে করে ফেলেছে। এখন উপায় কি হবে? আমি কজন সুন্দরী মেয়ের উদাহরণ দিয়ে বললাম, ওরা তো এখনও করেনি। সুন্দরী মেয়েদের মধ্যে হালিদার কথা বিশেষ করে বললাম

এই অংশ থেকে কি দেখলাম আমরা? চরম নারীবাদী তনা আপু ক্লাসে কোন মেয়ে দেখতে কুতসিত আর কোন মেয়ে সুন্দরী তার থিয়রী বের করে ফেলেছেন। কেন? এইগুলা না পুরুষের কাজ। মেইল শভেনিস্ট দের কাম!!! তাহলে আমাদের তনা আপু মেয়েদের শারিরীক অবস্থাকে “কুতসিত” এবং “সুন্দর” এই দুই বিষেষনে ট্যাগ করেন? কেন? তিনি কি নারীদের এইভাবে বিচার করে থাকেন?

আমার প্রশ্ন হচ্ছে,

১) নারীবাদী আখ্যা দিয়েও তনা কেন মেয়েদের শারিরীক অবস্থাকে “কুতসিত” এবং “সুন্দর” এই দুই বিষেষনে ট্যাগ করেন?

এই অংশটির বাকি লেখাগুলোতে মোটামুটি বর্ণনা আছে যে শিপ্রা কিভাবে ডাঃ মানু নামের একজনের সাথে প্রেম করেছে তারা উভয়ে বিবাহিত থাকা সত্বেও। কিন্তু আমাদের তনা আপু শুধু দোষ দেবার বেলায় দোষ দিতে চান ডাঃ মানু সাহেব কে। কারন ডাঃ মানু পরকীয়া একটা করে না দুইটা করে।

আমার প্রশ্ন হলো,

শিপ্রা তনার বান্ধবী। তার স্বামী থাকার পরেও তিনি ডাঃ মানুর সাথে শারিরীক সম্পর্ক করেন। এইদিকে ডাঃমানুও বিবাহিত। কিন্তু পুরো লেখাতেই বর্ণনা এসেছে মানু কত খারাপ। তার স্বভাব কতটা নীচু। কিন্তু অপরাধ যদি করে থাকেন তাহলে শিপ্রা ও মানু দুইজনই করেছেন। কেননা শিপ্রা তার স্বামীকে ধোকা দিয়েছেন, আর এইদিকে মানু তার স্ত্রীকে।

এইদিকে আমাদের অতি স্মার্ট তনা শিপ্রার উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছেন যে, তার স্বামী তাকে পরিপূর্ণ শারিরীক সুখ দিতে অক্ষম তাই শিপ্রা এমন পরকীয়াতে মত্ত। এইটা আমাদের তনা সুন্দর করে পাঠকদের বুঝিয়ে দিয়েছেন তার পক্ষে নানান যুক্তি দিয়ে, আবেগের শব্দ দিয়ে। কিন্তু ডাঃ মানুর বেলাতে তনা বলতে চেয়েছেন মানু ডাক্তারের স্ত্রীর সাথে তার ভালো সম্পর্ক থাকার পরেও মানু শিপ্রার সাথে সম্পর্ক বজায় রেখেছেন এবং এইটা ছাড়াও তার আরেকজন রক্ষিতা আছে যার নাম ডাঃ আনু।

এইখানে প্রশ্ন আসে অনেক। শিপ্রা যদি স্বামীর কাছ থেকে স্যাটিস্ফাইড না হয় তাহলে সে অন্যের সাথে বিছানায় যাবে। যেমন গিয়েছে মানুর সাথে। মানুও হয়ত তার স্ত্রীর সাথে স্যাটিস্ফাইড না হয়ে এসেছে শিপ্রার কাছে। এবং তার আরো যৌনতা চাই, এজন্য গিয়েছে আরেকজনের কাছে যার নাম আনু। মানে হচ্ছে মানু পরকীয়া করে ২ জনের সাথে আর শিপ্রা করে একজনের সাথে।

তনার কথা অনুযায়ী নারীদের যৌনতার স্বাধীনতা থাকতে হবে। তাহলে শিপ্রার কাজটিকে তনার ভালো লাগে কিন্তু মানুর সেই একি কাজ কেন খারাপ লাগে? কেন তার স্মপর্কে সব নেগেটিভ কথা দিয়ে লেখার এই অংশটি ভরপুর? আর কেনই বা আপনি একজন নারী ডাক্তার আনুকে রক্ষিতা বললেন ? যদি আপনি এইটা বুঝাতে চান যে, আনুকে রক্ষিতা বলেন নি বাট রক্ষিতার মত ট্রিট করেছে এই কথা বুঝাতে চেয়েছেন সেই ক্ষেত্রেও কথা থাকে। আপনার কথার প্রমাণ আর রেফারেন্স কি?

মানু পুরুষ বলে? আর আনুকে রক্ষিতা কেন বললেন কোনো তথ্য প্রমাণ ছাড়া? সে নারী বলে?

প্রিয় তসলিমা নাসরিন, এই হচ্ছে আপনার নিজেরই বলা নারীবাদের প্রমাণ।

এইটা গেলো প্রথম পর্ব। ২য় পর্বে আমি তসলিমার এমন অনেক ভন্ডামী আপনাদের কাছে তুলে ধরব আস্তে আস্তে। আপ্নারা দেখতে থাকুন একজন তথাকথিত নারীবাদী কিভাবে নিজের জালেই, নিজের লেখাতেই তার ভন্ডামীর ছাপ রেখে যাচ্ছেন।

Source: NagorikBlog.com