অবশেষে সাকা চৌধুরী গ্রেপ্তার

বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।

গোয়েন্দা পুলিশ ও র‌্যাবের একটি দল বৃহস্পতিবার ভোররাতে রাজধানীর বনানীর একটি বাড়ি থেকে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেপ্তার করা হয়।

একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের প্রাথমিক তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের জন্য যুদ্ধাপরাধ তদন্তে গঠিত সংস্থা বুধবার সকালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে আবেদন করে।

রাত ৪টার দিকে বনানীর একটি বাড়ি থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কয়েকজন কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন।

র‌্যাবের মহাপরিচালক মোখলেসুর রহমান সংসদ সদস্য সালাউদ্দিনকে গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, গোয়েন্দা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করেছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাহবুবুর রহমান গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তবে সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগে সালাউদ্দিন কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে বলছেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা।

গ্রেপ্তারের পর সালাউদ্দিনকে প্রথমে ক্যান্টনমেন্ট থানায় নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পুলিশের কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

সালাউদ্দিনের ছেলে ফাইয়াজ কাদের চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জেনেছি, গ্রেপ্তারের পর বাবা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে পিজি হাসপাতালে (বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল) নেওয়া হয়। সেখান থেকে তাকে ডিবি অফিসে নেওয়া হয়েছে।”

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে গ্রেপ্তারি পরোয়ানার যে আবেদন করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা, তার ওপর রোববার শুনানির দিন ঠিক রয়েছে। তার আগেই গ্রেপ্তার হলেন বিএনপি নেতা। তবে তার বিরুদ্ধে আরো বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে।

সালাউদ্দিন কাদেরের অন্য ছেলে হুমাম কাদের চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, কোনো ধরনের আইন প্রক্রিয়া ছাড়াই তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

“সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগে যদি তাকে যদি গ্রেপ্তার করা হয়, তবে অ্যারেস্ট ওয়ারেন্ট দেখানো হোক”, বলেন তিনি।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বুধবার সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে সাংবাদিকদের বলেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের ভিত্তিতেই সালাউদ্দিন কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

“তাকে গ্রেপ্তারে গতকাল (বুধবার) জন্য ট্রাইব্যুনালে আবেদন করা হয়েছে। এরপরই আমাদের পুলিশ সদস্যরা পদক্ষেপ নিয়েছেন। আর তার বিরুদ্ধে আরো অনেক মামলা রয়েছে।”

সালাউদ্দিন চৌধুরীর গ্রেপ্তারের বিষয়টি সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে প্রথম নিশ্চিত করেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম।

সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, “কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে অ্যারেস্ট করা হয়েছে।”

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন।

তিনি সকালে শেরেবাংলা নগরে জিয়ার সমাধিতে ফুল দেওয়ার পর তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেপ্তারের জন্য আবেদন করা হলেও তার শুনানির আগেই আটক করা হয়েছে সালাউদ্দিন কাদেরকে।

গ্রেপ্তারের বিষয়ে স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, “সালাউদ্দিন কাদের বর্তমানে কোন পদে আছে তা বিবেচ্য নয়, একাত্তরে তিনি অগ্নিসংযোগ করেছিলেন কিনা, হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিলেন কিনা- তার নিরিখেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।”

তবে গ্রেপ্তারের কারণ পুলিশ জানাবে, বলেন তিনি।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, “সালাউদ্দিন কাদেরের মতো যুদ্ধাপরাধীদের আরো আগে গ্রেপ্তার করা উচিত ছিলো। একে একে সবাইকে (যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত) গ্রেপ্তার করা হবে।”

ট্রাইব্যুনালে আবেদনের আগে মঙ্গলবার রাতে সালাউদ্দিনের ধানমণ্ডির বাড়িতে অভিযান চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী প্যানেলের প্রধান গোলাম আরিফ টিপু নেতৃত্বে তদন্ত দল একাত্তরে চট্টগ্রাম নগরীতে পাকবাহিনী ও রাজাকারদের ক্যাম্প হিসেবে ব্যবহৃত বিভিন্ন ভবন ও বধ্যভূমি পরিদর্শন এবং বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নেয় গত সেপ্টেম্বর মাসে।

তখন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে ‘৭১ এ কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যার অভিযোগ তদন্ত দলকে জানান তার ছেলে প্রফুল¬ চন্দ্র সিংহ।

চট্টগ্রামে মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের স্থান এবং বিভিন্ন জনের সাক্ষ্য নেওয়ার পর ট্রাইব্যুনালের আইনজীবী দল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে সংসদ সদস্য সালাউদ্দিনের জড়িত থাকার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার কথা জানায়।

তবে মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সালাউদ্দিন তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলে আসছেন।

১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গত ২৫ মার্চ তদন্ত সংস্থা, আইনজীবী প্যানেল ও ট্রাইব্যুনাল গঠনের ঘোষণা দিলে বহু প্রতীক্ষিত এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/এলএইচ/এসআইএম/এসএম/এমআই/১০২৫ ঘ.