ছয় বছরে আটটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত

বিধ্বস্তের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে অকালেই প্রাণ হারিয়েছে দেশের মেধাবী ছয়টি তাজা প্রাণ। সর্বশেষ গত সোমবার (২০ ডিসেম্বর) দুপুরে বরিশাল বিমান বন্দরের সন্নিকটে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানটির স্কোয়াড্রন লিডার আশরাফ ইবনে আহম্মেদ ও পাইলট মাহমুদুল হক নিহত হয়েছেন। এ ঘটনার পর পরই হেলিকপ্টারযোগে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল শাহ মোঃ জিয়াউর রহমান। এসময় তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, তদন্ত টিমের রির্পোট ছাড়া দুর্ঘটনার কারন সম্পর্কে কিছুই বলা যাচ্ছে না। দুর্ঘটনা কবলিত স্থান কর্ডন করে রাখা হয়েছে। যাতে কোন আলামত নষ্ট না হয়।

Biman Bangladeshসূত্রমতে, গত ছয় বছরে এভাবে বিমানবাহিনীর ৮টি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের পর বিমানবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনেই বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। আর যান্ত্রিক ত্রুটি কেনইবা থাকবেনা। কয়েক মাস আগে যমুনা নদীতে ডুবে যাওয়া বিমানটির দাম ছিল মাত্র ৭০ লক্ষ টাকা। অথচ আমাদের দেশে অসংখ্য গাড়ির মূল্য রয়েছে কোটি টাকারও ওপরে। সংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানের স্বল্প ব্যয়ের প্রশিক্ষণ বিমানগুলো বাদ দিয়ে নতুন করে আধুনিক বিমান আমদানি করা উচিত। নতুবা প্রায়ই দেখা যাবে যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে এ রকম অহরহ দূর্ঘটনা। আর এতে করে অকালেই ঝড়ে যাবে দেশের মেধাবী তাজা প্রানগুলো।

নামপ্রকাশ না করার শর্তে এক বৈমানিক ক্ষোভের সাথে বলেন, এদেশে মেধাবীদের মূল্য নেই। তার এ বক্তব্যের মাঝে চরম অসহায়ত্ব ফুটে উঠেছে। সূত্রে আরো জানা গেছে, দুর্ঘটনার কবলে পড়া প্রায় সবকটি প্রশিক্ষণ বিমানই হচ্ছে চীনের তৈরি। এসব ফাইটার বিমান ইতোমধ্যে দু’তিনবার রি-ওভার হোলিং (রিপিয়ারিং) করা ছিলো। সূত্রে জানা গেছে, একের পর এক যুদ্ধ ও প্রশিক্ষণ বিমানগুলো বিধ্বস্ত হয়ে পাইলট মারা যাওয়ার ঘটনায় মেধাবীরা এখন আর বিমানবাহিনীতে যোগদান করতে চাচ্ছেন না। বিমানবাহিনীতে নিয়োগ প্রক্রিয়া অনেকাংশে শিথিল করার পরেও এ বাহিনীতে মেধাবীদের আগ্রহ কমে গেছে। নামপ্রকাশ না করার শর্তে একজন অবসরপ্রাপ্ত বিমান বাহিনীর কর্মকর্তা বলেন, চীনের তৈরি এসব প্রশিক্ষণ বিমান অনেকটাই ব্যবহারে অনুপযোগী। যেকোনো মুহুর্তে এসব বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি হওয়াটাই স্বাভাবিক। মেধাবীদের আগ্রহ হারিয়ে ফেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, অব্যাহত দুর্ঘটনায় আতংক সৃষ্টি হওয়ায় বিমানবাহিনীর জন্য যেসব চৌকস ও মেধাবীর প্রয়োজন তা খুব কম পাওয়া যায়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চলতি বছরের ৩০ অক্টোবর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীতে ফ্লাইং ক্লাবের একটি বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই দূর্ঘটনায় পাইলট কামরুল হাসান নিহত হন। দূর্ঘটনাকবলিত বিধ্বস্ত বিমানটি ফ্লাইং ক্লাবের বেসরকারি প্রশিক্ষণ বিমান (বি-১৫২)। এরআগে ২৩ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীতে বিধ্বস্ত হয় বিমানবাহিনীর একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ বিমান। চীনের তৈরি এ বিমানটি ছিল এফ-৭ এমবি মডেলের। গত বছরের ২২ অক্টোবর বগুড়ার রাডার স্টেশনে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। ওই দূর্ঘটনায় পাইলট স্কোয়াড্রন লিডার শামছুজ্জামান ও জামিল আহত হন। ১৬ জুন বিমানবাহিনীর এফটি-৬ মডেলের একটি জঙ্গি প্রশিক্ষণ বিমান চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর মোহনায় সাগরে পড়ে বিধ্বস্ত হলে প্যারাসুটের মাধ্যমে পাইলট নদীতে নামায় প্রাণে বেঁচে যান। ২০০৮ সালের ৮ এপ্রিল টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায় এফ-৭ এমবি জঙ্গি বিমান যান্ত্রিক ত্র“টির কারনে বিধ্বস্ত হয়। ওই দূর্ঘটনায় বিমানের চালক স্কোয়াড্রন লিডার মোরশেদ হাসানকে উদ্ধার করে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে আনার পর মারা যান। ২০০৭ সালের ৯ এপ্রিল যশোরে পিটি-৬১ প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়। সে দূর্ঘটনায় মারা যান পাইলট ফ্লাইট ক্যাডেট ফয়সল মাহমুদ। ২০০৬ সালের ২৪ এপ্রিল ঝিনাইদহে পিটি-৬১ নামের প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান ফ্লাইট ক্যাডেট তানিউল ইসলাম। ২০০৫ সালের ৭ জুন ঢাকার উত্তরায় একটি ভবনে ধাক্কা খেয়ে বিধ্বস্ত হয় যুদ্ধ বিমান এফ-৭ এমবি। সে সময় চালক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট আহসানুল কবীর প্যারাসুটের মাধ্যমে অবতরণ করতে সক্ষম হন।