কাপুরুষ বলার বদলা খুন

বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এরপরও তুমি কর্ণপাত করোনি। বিয়ের পর এখন আমার বাবাকে হুমকি দিয়ে কী লাভ। কাপুরুষ কোথাকার। তুমি মিথ্যাবাদী, প্রতারক।’ মৃত্যুর কয়েক সেকেন্ড আগে এসব কথা বলে প্রেমিকের সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন আকলিমা আক্তার রুবী (২৮)। তখনও রুবী জানতেন না প্রেমিকের হাতেই নৃশংসভাবে খুন হতে যাচ্ছেন তিনি। কাপুরুষ বলায় নিজেকে স্থির রাখতে পারেনি রুবীর প্রেমিক জিল্লুর ভূঁইয়া। কিছু বুঝে ওঠার আগেই খাটের ওপরে থাকা গামছা দিয়ে শ্বাসরোধে রুবীকে হত্যা করে জিল্লুর। মৃত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর রুবীর মোবাইল ফোন সেটটি নিয়ে বাইরে থেকে দরজা তালাবদ্ধ করে পালিয়ে যায় সরকারি কবি নজরুল কলেজের ছাত্র জিল্লুর।

পল্লবী থানা পুলিশ জিল্লুরকে গ্রেফতার করে তিনদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে।  জিজ্ঞাসাবাদে রুবীকে হত্যার কথা স্বীকার করে বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে জিল্লুর। জিল্লুরের দাবি, পূর্ব পরিকল্পনা নয়, রুবীর সঙ্গে কথা কাটাকাটির সময় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে সে। কাপুরুষ বলার সঙ্গে সঙ্গে তার মাথায় রক্ত উঠে যায়।

গত ১০ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর পল্লবীর ৬ নম্বর সেকশনের ডি-ব্লকের ৩ নম্বর সড়কের ২৫ নম্বর বাসার দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয় মিরপুর বাংলা স্কুল এন্ড কলেজের গণিত বিভাগের শিক্ষিকা রুবীকে। সাবলেট বাসায় স্কুল শিক্ষিকার হত্যার পর ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্লবী থানার উপ-পরিদর্শক (এস.আই) হাবিবুর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদে রুবীকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে জিল্লুর। দীর্ঘদিনের সম্পর্ক থাকার পরও রুবীকে বিয়ে করেনি সে। রুবীর অন্যত্র বিয়ে হওয়ায় পরও দু’জনের মধ্যে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। প্রায়ই জিল্লুর রুবীর পল্লবীর বাসায় যাতায়াত করত। ঘটনার দিন রাত ১০ টার দিকে রুবীর বাসায় ঢুকে জিল্লুর। এরপর দু’জনের মধ্যে নানা বিষয়ে কথার কাটাকাটি হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জিল্লুর জানায়, দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও বয়সে রুবীর চেয়ে সে ছোট। সরকারি কবি নজরুল কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র সে। পড়াশোনা শেষ করেই রুবীকে বিয়ে করার পরিকল্পনা ছিল তার। কিন্তু চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিত বিভাগে প্রথম শ্রেণীতে পাস করার পরই পরিবার থেকে রুবীকে বিয়ে দিতে চাপ দেওয়া হয়। এক পর্যায়ে পরিবারের মতামতেই রুবী অন্যত্র বিয়ে করেন। তবে দাম্পত্য জীবনে তিনি ছিলেন অসুখী। বিয়ের পর নিয়মিত জিল্লুরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন তিনি। ফোন করে তার পল্লবীর বাসায় যেতে বলতেন।

তদন্ত সূত্র জানায়, মোবাইলের কললিস্ট উদ্ধার করে রুবী ও জিল্লুরের মধ্যে একাধিকবার কথা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। রুবীকে হত্যার পর জিল্লুর প্রথমে উত্তর শাহজাহানপুরে তার ভাইয়ের বাসায় যায়। এরপর সেখান থেকে মাদারীপুরের তার বোনজামাতার বাসায় গিয়ে আত্মগোপন করে। সূত্র দৈনিক সমকাল। সূত্রে আরো জানা গেছে, প্রায় দুই মাস আগে নাহিদ আহমেদ খান লিটন নামে এক যুবকের সঙ্গে পারিবারিকভাবে রুবীর বিয়ে হয়। এরপরই রুবীর বাবাকে নানা ধরনের হুমকি দিচ্ছিল জিল্লুর। গত ১৯ ডিসেম্বর জামিন নেওয়ার জন্য সিএমএম আদালতে হাজির হওয়ার পর পুলিশ খবর পেয়ে জিল্লুরকে গ্রেফতার করে। এরপর পল্লবী থানা পুলিশ তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের কাছে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে। আদালত তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।