তদন্ত কমিশন তাদের রিপোর্টে উলে¬খ করেছেন, ২০০৯ সালের ২৫ এপ্রিল রাতে স্কুল শাখার ৮ম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে একা পেয়ে তার উপর ব্যপক যৌন নিপীড়ন চালায়। পরদিন এঘটনা ওই ছাত্রী অন্যান্যদের কাছে বললে দ্বিগবিজয়ের কুকৃত্তির চাঞ্চল্যকর তথ্য বেড়িয়ে আসতে শুরু করে। ওই স্কুলের শিক্ষক যতীন্দ্রনাথ ঘটক ওই ছাত্রীর সাথে কথা বলে ঘটনার সত্যতা পেয়েছিলেন বলে তদন্ত কমিশনের রিপোর্টে উল্লেখ রয়েছে। দাখিলকৃত কমিশনের ওই তদন্ত রিপোর্টে আরও উল্লেখ রয়েছে একই বছর মার্চ মাসে শেষের দিকে স্কুল শাখার ৭ম শ্রেণী ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে অশোভন ইঙ্গীত করলে একজন চলে যাওয়ার পর অন্যজনের উপর যৌন নিপীড়ন চালায় দ্বিগবিজয়। ওই ছাত্রী ঘটনাটি আবাসিক হলের রান্নার কাজে নিয়োজিত অপু সহ অন্যান্যদের জানায়। অপু বিষয়টি ধামাচাঁপা দেয়ার চেষ্টা করে। অপর এক ছাত্রী আবাসিক হলে আসার পর তাকে দ্বিগবিজয় কুপ্রস্তাব দিলে ছাত্রী তা অস্বীকার করায় ৬ মাসের মধ্যে বদনাম রটিয়ে ওই ছাত্রীকে হল ত্যাগ করতে হবে বলে দ্বিগবিজয় হুমকী দেয়। ওই রিপোর্টে আরও জানাযায়, একই বছর ২০ এপ্রিল দুপুরে অপুর সাথে দ্বিগবিজয় খাবার ঘরে অসামাজিক কাজে লিপ্ত ছিল, যা প্রত্যক্ষ করে ওই বিদ্যালয়ের ছাত্রী নমিতা মল্লিক। অপু ও দ্বিগবিজয় হরহামেশাই আবাসিক হলের বিভিন্ন স্থানে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হত। যার প্রত্যক্ষদর্শী ছাত্রী লাভলী মন্ডল। তদন্ত কমিশনের কাছে ওই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রীরা জানিয়েছে তাদের সবার চোখেই দ্বিগবিজয়ের বিভিন্ন অপকৃত্তি ও যৌনাচার ও নিপীড়নের দৃশ্য ধরা পরে।
ছাত্রীরা এর দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবী করে দ্বিগবিজয়কে বহিস্কারের দাবি করে একাধিকবার বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। পাশাপাশি এসব ঘটনার বিচার না হলে ভবিষ্যতে হোস্টেল ছেড়ে ছাত্রীরা অন্যত্র চলে যাবে বলে জানায়।
নামপ্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানান এতকিছুর ঘটনার পরেও কোন সমাধান বা আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি অধ্যক্ষ। উপায়ন্ত ঘটনার জের হিসেবে স্থানীয়রা সম্প্রতি দ্বিগবিজয়কে প্রতিষ্ঠানে ঢুকতে দেয়নি। প্রায় ১ বছর যাবৎ দ্বিগবিজয় কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও প্রতিষ্ঠান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও অন্যান্য সদস্যদের মতামতকে উপেক্ষা করে অধ্যক্ষ নির্মল হালদার নিজে আত্মগোপনে থাকা দ্বিগবিজয়ের স্বাক্ষর আদায় করছেন হাজিরা খাতায়। কিছুদিন তার বেতন ভাতা বন্ধ থাকলেও অধ্যক্ষর আশির্বাদে দ্বিগবিজয় বর্তমানে বেতন ভাতা উত্তোলন করছেন বলে ওই স্কুল ও কলেজের শিক্ষকরা জানান।
ছাত্রী অভিভাবক তমাল জানান, ইতোপূর্বে অধ্যক্ষ নির্মল হালদারের বিরুদ্ধেও রাতের বিভিন্ন সময় অবাধে ছাত্রী হোস্টেলে বিচরণ ও যৌন নিপীড়নের অভিযোগ রয়েছে। যা বিভিন্ন সময় কলেজ কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছিল।
এব্যাপারে কলেজ অধ্যক্ষ নির্মল চন্দ্র হালদার একটি তদন্ত রিপোর্ট তার হাতে পেয়েছেন স্বীকার করে বলেন, অভিযুক্ত ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী দ্বিগবিজয় বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী ব্যক্তি। আমার চাকরি রক্ষার্থে দ্বিগবিজয়ের বাড়ি গিয়ে স্বাক্ষর এনে তাকে বেতনের ব্যবস্থা করেছিলাম, তবে চলতি মাস থেকে বন্ধ করে দেয়া হব। ঘটনাটি এখন দলগত ব্যাপার, বিষয়টি ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দেখবে।
উপজেলা মাধ্যমিক ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা আশরাফুজ্জামান সাগর ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার দীপংকর বিশ্বাস একাডেমীক সুপারভাইজার অরুন চন্দ্র মন্ডলকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। কিন্তু দীর্ঘদিনেও তা আলোর মুখ দেখেনি। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের লোকজন দায়িত্ব নিয়েছেন বিষয়টি মিমাংশা করার জন্য।