একজন বাংলাদেশী গুলি খেলে তিন বিএসএফকে মারতে হবে

বলছেন, এতো দেখি ভয়াবহ প্রভোকেটিভ। ফলে সাক্ষাতকার ছাপা হলেও বিশেষ অংশগুলো সাইজ হয়ে গেছে। পাঠকরাই বলতে পারবেন- আসলে এটি প্রভোকেটিভ কিনা-যখন সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুলিতে নিহতের হার ১০ বছরে এক হাজার ছুঁয়ে যাচ্ছে। স্থানীয় খাসিয়াদের সঙ্গে বিএসএফ এখন বাংলাদেশের হাওর দখলে নামছে, গুলি করছে। দেশের সীমানায় ঢুকে একজন বিডিআরকে ধরে নিয়ে বিএসএফ’র ক্যাম্পে আটকে রেখেছে। আর এ অবস্থায় আমরা বলেই যাচ্ছি- সবাই আমাদের বন্ধু কেউ শত্রু নয়। এ প্রেক্ষিতেই এ সাক্ষাতকারটি নেয়া হয়েছে।  

কাজী সায়েমুজ্জামান: বাংলাদেশ রাইফেলস বিডিআরের সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান বলেছেন, সীমান্তে একজন বাংলাদেশী গুলি খেয়ে মারা গেলে তিনজন বিএসএফকে গুলি করে মারতে হবে। তাহলে সীমান্তে গুলি বন্ধ হবে। আমি বিডিআরের মহাপরিচালক থাকাকালে এ ধরনের উন্মুক্ত নির্দেশ দিয়েছিলাম।

সম্প্রতি এ প্রতিবেদকের সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে ফজলুর রহমান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, আমরা যতটুকু জেনেছি, কাশ্মিরে যিনি মুসলমান মেরে হাত পাকান তাকেই বিএসএফের মহাপরিচালক করা হয়। তার কাছ থেকে যে নির্দেশনাটা আসে তা হলো, সীমান্তের ওপাড়ে যারা রয়েছে তারা বাঙালি হলেও মুসলমান। সৈনিকদেরও কাশ্মির সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ভালোভাবে ব্রিফও দেওয়া হয় না। ফলে কাশ্মিরের সীমান্তে একজন মানুষকে তারা যেভাবে মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের সীমান্তের মানুষটিকেও সেভাবে চিহ্নিত করে। তারা একজন বাংলাদেশীকে সন্ত্রাসী হিসেবেই চিহ্নিত করেÑ গুলি করে মেরে ফেলে।
বিডিআরের এ সাবেক মহাপরিচালক ২০০১ সালে পাদুয়া পুনরুদ্ধার ও রৌমারীতে বিএসএফ এর আগ্রাসন প্রতিহত করে আলোচিত । পরে চাকরিচ্যুত হলে রাজনৈতিক দল নির্দলীয় জন আন্দোলন প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দলটির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা কমিটির আহবায়ক। সাাতকারে তিনি দেশের সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশীদের হত্যাকান্ড, ভারতীয় সীমান্তরী বাহিনী বিএসএফএর বারবার প্রতিশ্র“তি ভংগ ও বাংলাদেশের সীমান্তরী বাহিনী বিডিআরের করণীয় সম্পর্কে তার মতামত তুলে ধরেন। বরাবরের মতো তিনি বিডিআরের নাম বদলে তার আপত্তির কথাও জানান।

তিনি বলেন, তিনি বলেন, পাদুয়া আর রৌমারীতে দেশপ্রেম দেখাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে বিডিআরের মহাপরিচালক থেকে সরিয়ে দিয়েছে। আর বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে আমকে চাকরিচ্যুতি করেছে। দেশের সকল সরকারই ভারতের স্বার্থ রক্ষা করে চলছে। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। এদেশে কোন ধর্ম, বর্ণ, ভাষা বৈষম্য নেই। ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে চার কোটি বাঙালিই খালি হাতে ভারত মোকাবেলা করতে পারে। মহাÍা গান্ধীর মতো অহিংস আন্দোলন করেও আমরা যদি বলি- তোমরা আমাদের ১৭ হাজার বর্গমাইল সামুদ্রিক এলাকা দখল করে নিয়েছ। আজ যদি এ জায়গা ছেড়ে না দাও কাল আমাদের দুই কোটি লোক খালি হাতে পশ্চিম বাংলার দিকে যাত্রা করবে। কোন সেনাবাহিনী দিয়ে ভারত তাদের ঠেকাবে? এ শক্তি আমাদের রয়েছে। আর এদের হাতে যদি একটি অস্ত্র তুলে দেয়া যায়। তবে বলতে পারি আমরা সমগ্র ভারত জয় করতে পারবো। পুরো সাক্ষাতকারটি নিচে তুলে ধরা হলো-

কাজী সায়েমুজ্জামান: বেসরকারী হিসেবে গত ১০ বছরে সীমান্তে বিএসএফ ৮১৮ জন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। বারবার পতাকা বৈঠক করেও লাভ হচ্ছেনা কেন?

মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান: সমস্যাটি বিডিআর-বিএসএফ দৃষ্টিকোণে দেখলে হবে না। সামগ্রিক দৃষ্টিতে দেখতে হবে। ১৯৫৮ সালেই ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের সীমান্ত নিয়ে একটি চুক্তি হয়েছিল। এরপরও আমাদের সীমান্তের ৬.৫ কিলোমিটার এখনো চিহ্নিত হয়নি। সীমান্তের আরেকটি স্থানে ৩৫ কিলোমিটার চিহ্নিত হলেও ভারতের কারণে স্থিতাবস্থা বিরাজ করছে। সেখানে পিলার দেওয়া সম্ভব হয়নি। এছাড়াও ভারতের অবাধ দখলকৃত এলাকা রয়েছে, তিনবিঘা করিডোর রয়েছে। আমাদের ৫৬টি ছিটমহল রয়েছে ভারতের মধ্যে। আমাদের মধ্যে তাদের ১১১টি ছিটমহল রয়েছে। এসব হস্তান্তর করা হলে আমরা ভারতের কাছ থেকে ১০ হাজার একর জমি লাভ করবো। এ বিষয়গুলো ভারত দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে ঝুলিয়ে রেখেছে। এটাকে দীর্ঘায়িত করার জন্য এ ধরনের কর্মকাণ্ড তাদের করতে হয়। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশ যখনই স্বাধীনভাবে এসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যায় তখনই তারা সীমান্তে অশান্তির সৃষ্টি করে। এক ধরনের বার্তা দেয়ার চেষ্টা করে- তোমরা এটা করো না। যেমন প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরকে সামনে রেখেই তারা সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চীন সফরকে ভারত ভালো চোখে দেখছে না বলেই আমার ধারণা। কারণ কুনমিংয়ের সঙ্গে চট্টগ্রামের একটি সংযোগ সড়ক হবে। সোনাদিয়ার গভীর সমুদ্র বন্দরে সহায়তা করার জন্যও তারা রাজি হয়েছে। চীনের সঙ্গে ভারতের স্থল সীমান্ত রয়েছে। আমাদের সঙ্গেও ভারতের সীমান্ত রয়েছে। সেদিক থেকে ভারতের কাছে আমাদের ও চীনের অবস্থান সমান। এদিক থেকে আমরা চীনের খুব কাছাকাছি যেতে পারি। আমাদের মতো চীনের সঙ্গেও তাদের সীমান্ত নিয়ে কতগুলো বিষয় ঝুলে রয়েছে। চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের এই সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশই আমরা ভারতের সীমান্তে দেখতে পাচ্ছি। হাওর দখল করার জন্য তারা চেষ্টা করল। এসব রাজনৈতিক সমস্যা। বিডিআর-বিএসএফের সমস্যা নয়। আজ পর্যন্ত কি তারা দেখাতে পেরেছে যে ফেনসিডিল নিয়ে আসা বাংলাদেশ নাগরিককে তারা হত্যা করেছে। তারা দাবি করে তারা গরু নিয়ে ব্যবসা করে। ভারতে গরু ব্যবসা নিষিদ্ধ। এজন্য অনেক করিডোর সিল করা রয়েছে। এখন কথা হলো মাদক চোরাচালানিকে তারা গুলি করেনা। এ ধরনের কাউকে তারা যদি গুলি করে মেরে বলতো বাংলাদেশে মাদক সরবরাহকারীকে আমরা গুলি করে মেরেছি। এ ধরনের কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। তারা স্টেটমেন্ট দেয়ার জন্য একটি স্টেটমেন্ট দেয়। আমরা যতটুকু জেনেছি, কাশ্মিরে যিনি মুসলমান মেরে হাত পাকান তাকেই বিএসএফের মহাপরিচালক করা হয়। তার কাছ থেকে যে নির্দেশনাটা আসে তা হলো, সীমান্তের ওপাড়ে যারা রয়েছে তারা বাঙালি হলেও মুসলমান। সৈনিকদেরও কাশ্মির সীমান্ত থেকে বাংলাদেশের সীমান্তে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। তাদের ভালোভাবে ব্রিফও দেওয়া হয় না। ফলে কাশ্মিরের সীমান্তে একজন মানুষকে তারা যেভাবে মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশের সীমান্তের মানুষটিকেও মুসলমান হিসেবে চিহ্নিত করে। তারা সন্ত্রাসী হিসেবেই তাকে চিহ্নিত করে গুলি করে মেরে ফেলে। অথচ আমাদের সঙ্গে ভারতের সীমান্তের ব্যাপারটি একেবারেই আলাদা। কারণ বাংলাদেশের কারো বাড়ির ভেতর দিয়েও সীমান্ত চলে গেছে। দু’দেশের মানুষ একই মসজিদেও নামাজ পড়েন। জয়পুরহাটের একটি এলাকায় এ ধরনের ঘটনা রয়েছে আমি বিডিআরের মহাপরিচালক থাকাকালে তৎকালীন বিএসএফের মহাপরিচালককে অনুরোধ করেছিলাম তোমরা বাংলাদেশের সীমান্তে বাঙালি বিএসএফ মোতায়েন করো। তারা অবাঙালি বিএসএফকে বোঝাতে পারবে। বাংলাদেশের আর পাকিস্তানের বিষয়টি এক নয়। আমরা পহেলা বৈশাখ পালন করি। রবীন্দ্রনাথের জন্মদিবস পালন করি। পশ্চিম বাংলার সংস্কৃতিও এরা ধারণ করে। তবে বাঙালি বিএসএফ কর্মকর্তা নিয়োগ দিলেই হবে না তাদের রাষ্ট্রীয় নীতি বদলাতে হবে। কাশ্মিরের আট হাজার বর্গমাইলের একটি স্থানেই ছয় লাখের মতো ভারতীয় সৈন্য রয়েছে। আর আমরা চিন্তা করছি, পার্বত্য চট্টগ্রামে কেন সেনাবাহিনী? কেন সেখানে সেনা শাসন চলছে? আমরা ভারতের সামরিক শক্তির দিকটি দেখছি না। তথাকথিত সুশীল আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রিক মহারথীরা প্রশ্ন করে না- কেন সেখানে ছোট একটি স্থানে এত সেনা সদস্য? ভারত এবার সামরিক বাজেট বাড়িয়ে দিয়েছে। সাংবাদিক সুবীর ভৌমিক লিখেছেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তি বাহিনী কারা তৈরি করেছেন? ভারত সেখানে শান্তি বাহিনী তৈরি করেছে। আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব কিভাবে আমরা রক্ষা করবো তা নিয়ে আমাদের ভাববে হবে।

সায়েম: সম্প্রতি ভারত এক বছর সীমান্তে কোন গুলি করবেনা বলে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা বলছে। এর মানে কি এই যে, দুই প্রধানমন্ত্রী যুক্ত ইশতেহারে সীমান্তে আর কোন হত্যাকান্ড হবেনা বলে ঘোষণা দিলেও আসলে তারা হত্যাকান্ড চায়। আর ভারত সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এ পর্যন্ত বাংলাদেশীদের হত্যা করা হচ্ছে ?

ফজলুর রহমান: আমার প্রশ্ন হলো, কি এমন ঘটনা এদেশে ঘটেছে যে ভারত ঘোষণা দিচ্ছে এক বছর সীমান্তে কোনো গুলি করবে না। তাদের পে সীমান্তে গোলাগুলি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ আমরা যদি নেপাল বা ভুটান হতাম তাহলে সম্ভব হতো। কারণ ভারতীয় বাহিনী এদেশে ঢুকবে, বিডিআরের সঙ্গে চা বিস্কিট খাতে তারপর যখন ইচ্ছা চলে যাবে। ভারতের সব পণ্য এখানে চলবে। ব্যবসায়ীরা আসবেন। বিনাবাধায় ব্যবসা করবেন। নেপালে আমি পাঁচ-সাতবার গিয়েছি। সীমান্ত দেখে বুঝতে পারিনি সেটা নেপাল নাকি ভারত? কিন্তু আপনি যদি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে বাঁচতে চান তাহলে ভারতীয় গুলি খেতে হবে। তবে হ্যাঁ গুলি বন্ধ হবেÑ একটির বদলে পাল্টা তিনটিকে মেরে ফেলতে পারলে। একজন বাঙালিকে মারলে তিনজন বিএসএফকে মেরে ফেলতে পারলে গুলি বন্ধ হয়ে যাবে। আমি মহাপরিচালক থাকাকালে এ ধরনের উন্মুক্ত নির্দেশ দিয়েছিলাম। কথা রয়েছে, মিষ্টি মুখ কুকুরে চাটে। এক সময় মিষ্টি শেষ হয়ে গেলে মাংস খাবে। পরে দেখা যাবে কংকাল পড়ে রয়েছে।

সায়েম: ভারতীয় সরকার এক বছরের জন্য গুলি বন্ধ করার কথা বলেছেন। এর মানে কি এক বছর পর তারা ফের শুরু করবে?

ফজলুর রহমান: ব্যাপারটা মনে হচ্ছে তারা আমাদের দয়া করতে চাইছে। আমরা তো তাদের দয়া করতে বলছি না। বাংলাদেশের ওপর তাদের দয়া করার দরকারটা কি? এর মাধ্যমে তারা স্বীকার করে নিয়েছে, তারা আমাদের উপর গুলি করতো। কদিন পর আবার তারা গুলি করবে। আমার মতে, তারা একটি গুলি করলে আমাদের তিনটি গুলি করতে হবে। এতে গুলি বন্ধ হবে।

সায়েম: বিডিআর বিএসএফ শীর্ষ বৈঠক শেষ হওয়ার পরদিন থেকেই সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যাকান্ড হয়েছে। আপনার সময়ও কি এভাবেই বিএসএফ কথা দিয়ে কথা ভংগ করতো?

ফজলুর রহমান: আমার সময় অবশ্যই তাদের এভাবে প্রতিশ্র“তি ভঙ্গ হতো। তারা ভঙ্গ করতো। আমার অভিজ্ঞতা বলছে, এদেশে যে সরকারই আসুক না কেন তারা ভারতের স্বার্থবিরোধী কাজ করেনি। উলফা নেতা রাজখোয়া এখানে লুকিয়ে ছিলেন। তাদের যখনই পাওয়া গেল সরকার তাদের ধরে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছে। আন্তর্জাতিক একটি আইন রয়েছে তা লংঘন করে সরকার এ কাজটি করেছে। ভারতের কাছে তার সদিচ্ছা প্রমাণের জন্য। আর কি কাজ তারা করবে? একটা জিনিসই বাকি রয়েছে, স্বাধীনতাটা ভারতের হাতে তুলে দেয়ার। এদেশের অনেক বিচ্ছিন্নতাবাদী, শীর্ষ সন্ত্রাসী ভারতের মাটিতে রয়েছে তাদের কি আমাদের হাতে হস্তান্তর করছে? সন্তু লারমারা অস্ত্র কোথায় পেয়েছিলেন? ভারত দিয়েছিলেন। আমরা আমাদের ভূমিতে বাস করছি। আমরা ভারতের শত্র“ও না। আমরা তাদের তিও করছি না। তাদের জমির ওপরও আমাদের লোভ নেই। এরপরও ভারত বড়ভাই সুলভ আচরণ যদি অব্যাহতভাবে করে যায় তাহলে ভুল করবে। আমরা পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ। এদেশে কোন ধর্ম, বর্ণ, ভাষা বৈষম্য নেই। ১৫ কোটি মানুষের মধ্যে চার কোটি বাঙালিই খালি হাতে মোকাবেলা করার জন্য নেমে যাবে। মহাত্মা গান্ধীর মতো অহিংস আন্দোলন করেও আমরা যদি বলি- তোমরা আমাদের ১৭ হাজার বর্গমাইল সামুদ্রিক এলাকা দখল করে নিয়েছ। আজ যদি এ জায়গা ছেড়ে না দাও কাল আমাদের দুই কোটি লোক খালি হাতে পশ্চিম বাংলার দিকে যাত্রা করবে। কোন সেনাবাহিনী দিয়ে ভারত তাদের ঠেকাবে? এ শক্তি আমাদের রয়েছে। আর এদের হাতে যদি একটি অস্ত্র তুলে দেয়া যায়। তবে বলতে পারি আমরা সমগ্র ভারত জয় করতে পারবো।
আসলে আমি বিডিআরের মহাপরিচালক থাকার সময় সরাসরি বলেছিলাম, তোমরা নিরীহ মানুষকে গুলি করে মারো। তারা বলে, ওরা নিরীহ নয় হাতিয়ার নিয়ে আসে। আমি বলেছিলাম তাহলে হাতিয়ার তো আমাদের কোনদিনও দাওনি।

সায়েম: পাদুয়ায় বিএসএফ এর বাংলাদেশ সীমান্তে অনুপ্রবেশের পর বিডিআর কর্তৃক প্রতিহত করার কারণে রৌমারীতে সংঘটিত ভারতীয় য়তির প্রতিশোধ নিতেই এসব হত্যাকান্ড চালাচ্ছে কিনা?

ফজলুর রহমান: দুটি ঘটনার প্রতিশোধ তারা শত বছরেও নিতে পারবে না। আপনি আমাকে বলুন, ভারত কোন যুদ্ধে জয়লাভ করেছে? কাশ্মিরের যুদ্ধে ভারত জেতেনি। কারণ পাকিস্তানও কাশ্মিরের একটি অংশের দখল বজায় রেখেছে। ’৬৫ সালের ভারত পাস্থান যুদ্ধে কেউ হারেনি কেউ জেতেনি। কারগিল যুদ্ধেরও একই অবস্থা। ৬২’তে চীনের সঙ্গে যুদ্ধে তো তারা হেরে গেছে। এর ফলে নেহরু পপাতগ্রস্ত হয়ে মরেই গেলেন। ভারত আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধ করে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতাও অর্জন করেনি। এজন্য ভারতকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। ভারত আমাদের মতো মুক্তিযুদ্ধ করে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতাও অর্জন করেনি। এজন্য ভারতকে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। পাদুয়া আমাদের সার্বভৌম একটি অংশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি ক্যাম্প ছিল। স্বাধীন হওয়ার পর আমাদের যোদ্ধারা ওই ক্যাম্প ছাড়লেও ভারতীয় বাহিনী তা ছাড়েনি। আমার সময়ে তারা ১০ কিলোমিটার দূরের আরেকটি ক্যাম্পের সঙ্গে ওই ক্যাম্পের সংযোগ করতে সড়ক তৈরি করে। তাদের অনেকবার বারণ করার পরও তারা নিবৃত্ত হয়নি। দেশের সার্বভৌম অংশে বিডিআর অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করতে পারে। সরকারের এ অনুমতি আগেই দেওয়া থাকে। আমি দুশ’ জওয়ানকে পাদুয়ার দিকে অগ্রসর হতে নির্দেশ দেই। তারা তিনদিকে তিনটি ক্যাম্প স্থাপন করে পাদুয়া ক্যাম্প বুঝে নেয়। আমরা কোনো গুলি করিনি। বিএসএফ ছয়টি গুলি করার পর আত্মসমার্পণ করে। এ ঘটনার প্রতিশোধ নিতে তারা ঘটনাস্থল থেকে দুশ’ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বের এলাকা রৌমারিতে আমাদের ওপর আক্রমণ করে। সেখানে তারা চরমভাবে মার খায়। একটা জিনিস বুঝতে হবে। বাংলাদেশের ভেতরে এসে গুলি করে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয়। কারণ জনগণ বিডিআরের পাশে দাঁড়ায়। তবে প্রতিশোধ স্পৃহা বিএসএফের মধ্যে রয়ে গেছে। এটাকে তারা চরিতার্থ করতে চায়। এজন্য এ সময় একটি বার্তা তাদের দেওয়া উচিত যে, আমরা খালি হাতেও যদি আসি তোমাদের প্রতিরোধ করার মতা রাখি। বিডিআরের পদপেগুলো খুব সাহসী হতে হবে।

সায়েম: বাংলাদেশের মানুষকে বিএসএফ এর হত্যাযজ্ঞ থেকে রা করতে নাইট কারফিউ চালুর ঘটনাকে আপনি কিভাবে দেখেন?

ফজলুর রহমান: আমি মনে করি বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম দেশ, এখানে কোন জরুরি অবস্থাও নেই। কাজেই সীমান্ত এলাকায় কোন নাগরিক রাতে চলাচল করতে পারবে নাÑ আমার মতে এটা তার স্বাধীনতার ওপর হস্তপে, এটা করা যেমন উচিত নয়। করতে দেওয়াও উচিত নয়। আমি বলবো, ভারতের জন্য আমাদের নাগরিকদের চলাফেরা বন্ধ করা ঠিক হবে না। ভারতীয় আগ্রাসন মোকাবেলা করতে লোকজনকে উৎসাহিত করা উচিত। সায়েম:অন্যদিকে ভারতও রাতে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকা লাইট জ্বালিয়ে আলোকিত করে রাখছে।
ফজলুর রহমান: আমার বাড়িও সীমান্ত এলাকায়। বিএসএফ রাতভর আমাদের দিকে লাইটগুলো জ্বালিয়ে রাখে। এতে দুটো তি হচ্ছে। বাংলাদেশের তিন চার কিলোমিটার এলাকার কৃষিেেত আলো পড়ে। ফলে ভারতের পোকামাকর ফসলের ক্ষেতের ওপর গিয়ে পড়ে ফসল নষ্ট করছে। সীমান্তের ফসল নষ্ট করতেই এটা করা হচ্ছে। বিডিআর ক্যাম্পও ওই আলোতে আলোকিত হয়ে থাকে। ফলে তারা আমাদের বিডিআরদের ওপরও নজরদারি করতে পারছে। এটা একটা নিরাপত্তাহীন পরিবেশ তৈরি করছে। আমাদের বলা উচিত তোমরা লাইটগুলো তোমাদের দিকে জ্বালাও নয়তো গুলি করে আমরাই নিভিয়ে দেবো।

সায়েম: সীমান্তে কাটা তারের বেড়া বাংলাদেশের নিরাপত্তার জন্য কোন বিঘœতা সৃষ্টি করতে পারে কি?

ফজলুর রহমান: কাঁটাতারের বেড়াকে আমি অপমানজনক একটি বিষয় বলে মনে করি। এর মাধ্যমে আমাদেরকে একটি উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছে।

সায়েম: এরপরও সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশীরা কি নিরাপদ বলে আপনি মনে করেন?

ফজলুর রহমান: তাদের আমি নিরাপত্তাহীন বলবো না। তবে যদি লোকজন দেখে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশীরা নিহত হচ্ছে আর আমরা তাদের ছাড় দিয়ে দিচ্ছি বিষয়টি তাদের নিরাপত্তাহীন বোধ জাগাতে পারে বৈকি। পাদুয়া রৌমারীর ঘটনায় আমাকে কিভাবে পুরস্কৃত করা হলো? তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার আমাকে বিডিআরের মহাপরিচালকের পদ থেকে সরিয়ে দিলো। পরে বিএনপি সরকার আমাকে চাকুরিচ্যুত করে। এসব দেখলে মানুষ নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবতে পারে। এজন্য এমন ব্যবস্থা নেওয়া দরকার যাতে তারা বুঝে বিডিআর ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। শক্ত ব্যবস্থা মানুষের মনোবল চাঙা করবে। একজন মানুষকে তারা মেরে নিয়ে গেলো আর আপনি ফাগ মিটিং করে লাশ নিয়ে আসলেন তাহলে চলবে না। বিডিআরকে তো খালি হাতে সীমান্তে পাঠানো হয়নি। গোলা বারুদ দেওয়া হয়েছে। এগুলোর সদ্ব্যবহার তো করতে হবে।

সায়েম: সীমান্ত অঞ্চলে বাংলাদেশের মানুষকে নিরাপত্তা দেয়ার জন্য সরকার ও বিডিআরের কি কি ভূমিকা থাকা উচিত?

ফজলুর রহমান: সীমান্তের পাঁচ মাইলের মধ্যে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব বিডিআরের। বিডিআরের সঙ্গে সমন্বয় করে পুলিশ সেখানে কাজ করতে পারে। বিডিআর যাতে ওইসব এলাকায় টহল বাড়াতে পারে সেজন্য বেশি করে মোটরসাইকেল সরবরাহ ও সড়ক তৈরি করতে হবে। সরকার এধরনের কিছু কাজ করছে যা ভালো পদক্ষেপ। এ বিষয়গুলো সরকারের নজরে আনাটাই প্রথম কাজ হবে।

সায়েম: বিডিআর বিদ্রোহে হত্যাকান্ড, তদন্ত বিচার প্রক্রিয়ায় আপনি কি সন্তুষ্ট?

ফজলুর রহমান: বিচার এখন চলছে। এজন্য এ সম্পর্কে আমি কোন কথা বলতে চাই না। তদন্ত নিয়ে অনেক লেখালেখি হয়েছে। বলা হয়েছে তদন্তের জন্য নির্ধারিত বিষয়গুলোতে তদন্ত হয়েছে। তবে তদন্তে আরো অনেক বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল। আমার মনে হয় নেপথ্যের শক্তিটাকে বের করার জন্য আরো তদন্ত করা যায়। নেপথ্যের শক্তি বের করার বিষয়টি তদন্তে অন্তর্ভুক্ত ছিল বলে আমার জানা নেই। তবে সরকারি তদন্ত কমিটির তদন্ত আংশিক প্রকাশ পেয়েছে। সেনাবাহিনীর নিজস্ব তদন্ত প্রতিবেদন এখনো প্রকাশ পায়নি। এগুলো প্রকাশ করলে হয়ত আসল বিষয় জানা যাবে।

সায়েম: বিডিআর বিদ্রোহের ফলে সীমান্ত রায় কি প্রভাব পড়েছে বলে আপনার মনে হয়?

ফজলুর রহমান: গত বছর ফেব্র“য়ারিতে বিডিআরে একটি দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। ৫৭ জন অফিসার নিহত হয়েছেন, তবে আমি মনে করি এটা তেমন কিছু না। এটা নিয়ে বিলাপ করতে থাকলে চলবে না। শোককে শক্তিতে পরিণত করে রুখে দাঁড়াতে হবে। কোন যুদ্ধে য়তি হলেও তো কাটিয়ে ওঠে এগিয়ে যেতে হয়। এ ঘটনায় সীমান্তে বড় কোনো প্রভাব পড়েছে বলে মনে করি না। সামরিকভাবে প্রভাব পড়েছিল যখন তাদের অস্ত্রগুলো হেফাজতে ছিল। কারণ অস্ত্রবিহীন অবস্থায় একজন সৈনিকের মনোবল থাকেনি। বিদ্রোহের পর ভারতের একটি ধারণা হয়েছে বিডিআর দুর্বল হয়ে গেছে। এ জন্য আমাদের গণমাধ্যম দায়ী। তারা দিনের পর দিন লিখে যাচ্ছে বিডিআর দুর্বল হয়ে গেছে। ভারত গণমাধ্যম থেকেই এ ধারনাটা নিচ্ছে।

সায়েম: বিডিআরের নাম পরিবর্তন করে কি সীমান্ত রায় আগের ভূমিকায় বিডিআরকে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব?

ফজলুর রহমান: আমি প্রথম থেকেই বলে আসছি নাম পরিবর্তনের পে আমি নই। ১৭৯৫ সালে বিডিআর প্রতিষ্ঠিত হয়। তারপর দুইশ বছর পার হয়ে গেছে। আগে এর নাম বদল হলেও তা এখনকার মতো শাস্তিমূলক ছিল না। এর মানে হচ্ছে, তোমরা কর্মকর্তাদের মেরেছো শৃংখলা ভঙ্গ করেছ বলে তোমাদের নাম-পোশাক পরিবর্তন করে দেয়া হলো। আমার মনে হচ্ছে, এটা বিডিআরের মনোবলের ওপর আঘাত করতে পারে। কয়েদির পোশাকও সুতা দিয়ে তৈরি। অথচ ওই পোশাক পরে কেউ রাস্তায় নামলে সবাই তাকে আলাদা করে দেখবে। এ বিষয়টি কতটুকু ইতিবাচক হবে-তা চিন্তার বিষয়। এ অবস্থায় বিডিআরকে আগের ভূমিকায় নেওয়া কতটুকু সম্ভব তা বর্তমান কর্মকর্তারা বলতে পারবেন। তবে আমি মনে করি প্রত্যেক বাহিনীতে প্রেষণা একটি বড় বিষয়।

সায়েম: বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন ২০০৯ কে আপনি কিভাবে দেখছেন ?

ফজলুর রহমান: আমি আইনটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখি, এখন কেউ বিদ্রোহ করলে মৃত্যুদণ্ড হবে। আগে তো সাত বছর ছিল। আমার মনে হয় ভবিষ্যতে কোন বিদ্রোহ দমনে এ আইনটি সময়ের দাবি পূরণে সমর্থ হবে।

সায়েম: আপনাকে ধন্যবাদ।


কাজী সায়েমুজ্জামান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগ বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতোকত্তোর। জন্ম ১৯৮১ সালে চট্টগ্রাম শহরের দামপাড়ায়। তার পূর্বপুরুষ ছিলেন দক্ষিণাঞ্চলের বাউফলের ঐতিহ্যবাহী জমিদার কাজী পরিবার। ছাত্রজীবন থেকেই লেখালেখিতে হাতে খড়ি। তবে ১৯৯৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে জড়িত হন। তিনি যুগান্তর স্বজন সমাবেশের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহবায়ক। ২০০৪ সালে তিনি দৈনিক মানবজমিন পত্রিকায় স্টাফ রিপোর্টার হিসেবে যোগ দেন। বর্তমানে ইংরেজী দৈনিক নিউ এজ এর বাংলা প্রকাশনা সাপ্তাহিক বুধবারের সিনিয়র প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত। তিনি বাংলা ছাড়াও ইংরেজী, আরবী, উর্দ্দু ও হিন্দী ভাষা জানেন। ছোটবেলা থেকেই কমার্শিয়াল আর্টিস্ট হিসেবে পরিচিত। স্কুল জীবনে তার লেখা বেশ কিছু ছড়া ও কার্টুন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ছাপা হয়।