নতুন জুতা পরা হলো না পলাশের

পরীক্ষায় প্রথমস্থান অধিকার করলে তাকে নতুন জুতা কিনে দিতে হবে। পরীক্ষায় সে প্রথমস্থানই অধিকার করে। বায়না অনুযায়ী হতদরিদ্র পিতা লতিফ ওরফে লতু ঘরামীর কাছ থেকে গতকাল বুধবার টাকা নিয়ে পলাশ জুতা ক্রয়ের জন্য এসেছিলো বরিশালের গৌরনদী উপজেলার টরকী বন্দরে। সেখান থেকে নতুন জুতা ক্রয়ের পর ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলযোগে পলাশ বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে মর্মান্তিক মোটরসাইকেল দূর্ঘটনায় মেধাবী ছাত্র পলাশ (১৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার কালকিনি উপজেলার বনগ্রাম গ্রামের দিনমজুর লতিফ ঘরামীর স্ত্রী মিনারা বেগম  জানান, তার তিন সন্তানের মধ্যে পলাশ হচ্ছে মেঝ। অভাবের সংসারে অর্থাভাবে বড়পুত্র আসানুর রহমানকে লেখাপড়া করাতে পারেননি।

সূত্রে জানা গেছে, লতু ও আসানুর দিনমজুরের কাজ করে সংসারের পাশাপাশি পলাশের লেখাপড়ার খরচ চালিয়েছেন। গত বছর ডিসেম্বর মাসে পলাশ বায়না ধরে এবারের বার্ষিক পরীক্ষায় সে প্রথমস্থান অধিকার করলে তাকে নতুন জুতা কিনে দিতে হবে। মেধাবী পলাশ গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে নবম শ্রেনীতে প্রথমস্থানই অধিকার করে। বায়না অনুযায়ী গতকাল বুধবার পলাশ তার দিনমজুর পিতার কাছ থেকে টাকা নিয়ে চাচাতো ভাই রাকিব মোল্লাকে সাথে নিয়ে গৌরনদীর টরকী বন্দরে আসে জুতা ক্রয়ের জন্য। জুতা (কেরস্) ক্রয় করে তারা বাড়ির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। স্কুলের সময় অতিসন্নিকটে তাই তড়িঘড়ি যাওয়ার জন্য ভাড়ায়চালিত মটরসাইকেলে তারা রওয়ানা হয়। পথিমধ্যে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের গৌরনদীর বেজগাতি বারেক মাঝির বাড়ির সন্নিকটে পৌঁছলে বিপরীতদিক থেকে আসা অপর একটি মটরসাইকেলের সাথে মুখোমুখী সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই পলাশ নিহত হয়। আহত হয় ৪ জন।  গৌরনদী থানা পুলিশ লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। খবর পেয়ে থানায় ছুটে আসেন পলাশের পিতা, মাতা, সহদরসহ অন্যান্য স্বজনেরা। এসময় তাদের আহাজারিতে থানার কম্পাউন্ড এলাকার আকাশ বাতাস ভাড়ি হয়ে ওঠে। নিহত পলাশের মা মিনারা বেগম ও বাবা লতিফ ঘরামী চিৎকার দিয়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম জানান, মটরসাইকেল দূর্ঘটনায় নিহত পলাশের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বরিশাল মর্গে প্রেরন করা হয়েছে। এছাড়া গুরুতর আহত রাকিব ঘরামী, শাহাজুল মোল্লাকে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।