হিজবুত তওহীদের ১৭ সদস্যকে জেলহাজতে প্রেরন

আহত রাজ্জাক বালীর পুত্র সাহাদাত বালী বাদি হয়ে ২১ জনকে আসামি করে উজিরপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ হামলার ঘটনার সাথে জড়িত ১৭ জন হিজবুত ক্যাডারকে গ্রেফতার করছে। গতকাল বুধবার দুপুরে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তাদেরকে বরিশাল আদালতে প্রেরন করা হয়। আদালত গ্রেফতারকৃতদের জেলহাজতে পাঠিয়ে।

গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছে শিকারপুর শেরে বাংলা ডিগ্রী কলেজের প্রফেসর মোজাম্মেল হক মানিক, জালাল উদ্দিন, মাসুদ আহম্মেদ, ফরিদ হাওলাদার, মোকলেচুর রহমান, শাহাদাত সিকদার, মিলন হাওলাদার, তাইজুল ইসলাম, হাসান আলী, রুহুল আমীন, সেলিনা বেগম, লুৎফুন নেছা, রেশমা বেগম, সেলিনা আক্তার, সিরাজ হাওলাদার, রুবি বেগম, মর্জিনা বেগম। অন্যান্য আসামিরা হচ্ছে রুহুল আমিন, বাচ্চু সিকদার, আলম বালী ও আবুল মেকার।

অপরদিকে বুধবার সকালে উজিরপুর সদরে স্থানীয় মুসল্লীরা হিযবুত তওহীদ নিষিদ্ধের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করার সময় পুলিশ তাদেরকে মিছিল করতে বাঁধা প্রদান করে। উজিরপুর থানার ওসি সুকুমার রায় বলেন, থানা পুলিশের অনুমতি না নেয়ায় মিছিলে বাঁধা দেয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে হিজবুত তওহীদ নিষিদ্ধে দাবিতে মুসল্লীরা মিছিল বের করেছিলেন। মিছিলে অতর্কিকভাবে হামলা চালায় হিজবুত তওহীদের সশস্ত্র ক্যাডাররা। জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তওহীদের হামলায় কমপক্ষে ২০ জন এলাকাবাসি ও মুসুল্লীরা আহত হয়। গুরুতর আহতদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় হানিফ হোসেন ও নাজমুলকে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে ও অন্যান্যদের উজিরপুর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

উজিরপুর থানার ওসি সুকুমার রায় বলেন, হিজবুত তওহীদ সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। উজিরপুরে তাদের সংগঠনটি বেশ শক্তিশালী। মূল দলনেতা মোহাম্মদ বাইজিদ খান পন্নির পৃষ্ঠপোষকতায় উজিরপুর উপজেলার সাকরাল গ্রামের আঃ হক হাওলাদারের পুত্র ও মটরসাইকেল মেকানিক আবু হাসান এ দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার সাথে গৌরনদী উপজেলার সাকোকাঠী গ্রামের আব্দুল হাই মোল্লার পুত্র শিকারপুর শেরে বাংলা কলেজের প্রফেসর মোজাম্মেল হক মানিক উজিরপুর উপজেলা কমান্ডার হিসেবে সংগঠনটির কর্মকান্ড পরিচালনা করছে।

উল্লেখ্য, বিগত বিএনপি-জামায়াতের চারদলীয় জোট সরকারের প্রথমার্ধে বরিশালের চারটি বিভাগের আমীরের দায়িত্ব নিয়ে গৌরনদীর সাকোকাঠী গ্রাম থেকে হিজবুতের কার্যক্রম শুরু করা হয়। ওইসময় এ চার জেলায় আমীরের দায়িত্বে ছিলেন গৌরনদীর সাকোকাঠী গ্রামের সোহরাব হোসেন খান। তৎকালীন সময় বরিশালসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলের প্রবেশদ্বার গৌরনদীর ভূরঘাটায় আপত্তিকর লিফলেট বিতরন কালে এলাকাবাসির সাথে হিজবুতের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে সাইফুল ইসলাম নামের হিজবুতের এক সক্রিয় ক্যাডার নিহত ও ১০ জন আহত হয়। এ সংঘর্ষের ঘটনার মধ্য দিয়েই এতদাঞ্চলে জঙ্গী হিজবুত লাইম লাইটে চলে আসে। পরবর্তী সময়ে একাধিক সংঘর্ষ ও মসজিদে অগ্নিসংযোগের মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনাও ঘটনায় জঙ্গী হিজবুতের ক্যাডাররা। এক পর্যায়ে পুলিশের ব্যাপক ধরপাকরের কারনে চারজেলার আমীর সোহবার হোসেন খানসহ তার পরিবারের ৪ সদস্য তওবা করে দলত্যাগ করেন। এরপরই তার স্থলে ভারপ্রাপ্ত আমীরের দায়িত্ব পান দলের সেকেন্ড-ইন কমান্ড সাকোকাঠী গ্রামের জামাল শরীফ। কিছুদিন পর গোপন বৈঠকের মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলার আমীরের দায়িত্ব দেয়া হয় একই গ্রামের মান্নান মীরকে। তার অধীনে রয়েছে প্রশিক্ষিত পাঁচ শতাধিক নারী ও সহস্রাধীক পুরুষ সদস্য। বিভিন্ন সময় পুলিশ হিজবুত তওহীদের সদস্যদের গ্রেফতার করে আদালতে প্রেরন করলেও অদৃশ্য কারনে তারা জামিনে বেরিয়ে পূর্ণরায় কার্যক্রমে লিপ্ত হচ্ছেন। চার জেলার আমীরের দায়িত্ব পালন করা দলত্যাগী সোহরাব হোসেন খান দলত্যাগের পর পরই বেরিয়ে আসতে থাকে হিজবুত তওহীদের জঙ্গী পনার অজানা কাহিনী। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন হিজবুত তওহীদ একটি জঙ্গী সংগঠন। এছাড়াও এ সংগঠনটির সাথে জামায়াত কানেকশন রয়েছে। হিজবুত তওহীদের সংগঠনকি নিষিদ্ধের দাবিতে তিনি সরকারের কাছে জোর আবেদনও করেছিলেন। ফলে তাকে একাধিকবার হত্যার হুমকিও দিয়েছিলো হিজবুত ক্যাডাররা।

 

পুলিশ সুপারের ঘটনাস্থল পরিদর্শন
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উজিরপুর থানার পুলিশ পরিদর্শক জিয়াউল আহসান জানান, হিজবুত তওহীদ কর্তৃক গ্রামবাসী ও মুসুল্লীদের ওপর হামলার ঘটনায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় বরিশালের পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য্য ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। তিনি প্রত্যক্ষদর্শী, আহত ও স্থানীয় সূধীজনের সাথে মতবিনিময় করে হামলার ঘটনায় সুষ্ঠ তদন্তের মাধ্যমে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।

অপরদিকে গৌরনদী থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মোঃ নুরুল ইসলাম-পিপিএম জানান, উজিরপুরে হিজবুত তওহীদের হামলার ঘটনার পর পরই গৌরনদীতে পুলিশের কড়ানজরদারি চলছে। গত মঙ্গলবার রাত থেকে হিজবুত অধ্যুষিত গৌরনদীর সাকোকাঠী, শাহজিরা, বংকুরা, চন্দ্রহার এলাকায় সাদাপোষাকে পুলিশের কঠোর অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।