জঙ্গী হিজবুত তওহীদের শক্ত ঘাঁটি

সংগঠন হিজবুত তওহীদ শক্ত ঘাঁটি গেড়ে দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সাকোকাঠী গ্রামের জনৈক মন্নান মীর ছয় জেলার আমীরের দায়িত্বে রয়েছে। তার অধীনে ছয় জেলায় রয়েছে প্রশিক্ষিত প্রায় ১৫ হাজার নারী ও পুরুষ সদস্য। বিগত চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১ সালের প্রথমার্ধ্য)ে গৌরনদীর ভূরঘাটা বাসষ্ট্যান্ডে এলাকাবাসির সাথে সশস্ত্র হিজবুত ক্যাডারদের হামলা ও সংঘর্ষে হিজবুতের সক্রিয় কর্মী সাইফুল ইসলাম নিহত ও ১০ জন সদস্য আহত হয়। এরপর বাবুগঞ্জে হিজবুত ক্যাডারদের সাথে সর্বহারা জিয়া গ্র“পের কয়েকদফা হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পর পরই হিজবুত সদস্যদের আপত্তিকর কথাবার্তা ও হ্যান্ডবেল বিলির প্রতিবাদ করায় হিজবুতের সশস্ত্র ক্যাডাররা গৌরনদীর শাহজিরা এলাকার একটি মসজিদে অগ্নিসংযোগ করে। সবশেষ গত ২৫ জানুয়ারি হিজবুত ক্যাডাররা উজিরপুরে মুসুল্লীদের ওপর হামলা চালিয়ে ২০ জনকে আহত করে। হামলায় হিজবুত ক্যাডাররা অস্ত্র হিসেবে হাতুরিসহ দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে। এ ঘটনায় পুলিশ ১৭ জন হিজবুত কর্মীদের গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করেছে।

সূত্রমতে, সারা বাংলাদেশেই রয়েছে এ সংগঠনের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক। মাঝে মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় হিজবুত ক্যাডারদের গ্রেফতার করা হলেও অদৃশ্য কারনে কয়েকদিন পর তারা জেল থেকে জামিনে মুক্ত হয়ে ফের সংগঠনের কাজে জড়িয়ে পরছে। দক্ষিণাঞ্চলের সর্বপ্রথম চার জেলার আমীর সাকোকাঠী গ্রামের সোহবার হোসেন খান (বর্তমানে দলত্যাগী)। ২০০৪ সালের প্রথমার্ধ্যে সোহরাব হোসেনসহ তার পরিবারের চার সদস্য তওবা করে দলত্যাগ করার পর পরই এ সংগঠনটির জঙ্গী পনার রহস্য বেরিয়ে আসতে শুরু করে। তিনি (সোহরাব হোসেন খান) সহ আলেম সমাজ এ আপত্তিকর জঙ্গী সংগঠনটি নিষিদ্ধের জন্য সরকারের কাছে একাধিকবার দাবি করেও কোন সুফল পাননি। ফলে ক্রমেই হিজবুত তওহীদের জঙ্গীপনার মাত্রা আরো বেরে যায়। বিভিন্ন সময় স্থানীয় প্রসাশন ও সাংবাদিকদের কাছে হিজবুত তওহীদের জঙ্গীপনার তথ্য ফাঁস করায় দলত্যাগী আমীর সোহরাব হোসেনকে হিজবুত ক্যাডাররা হত্যার হুমকিও দেয়।

সূত্রে আরো জানা গেছে, দক্ষিণাঞ্চলের ছয় জেলায় ২০০৫ সালে হিজবুত তওহীদের সক্রিয় কর্মী সংখ্যা ছিলো ১০ হাজার। পরবর্তী ৫ বছরে সদস্য সংখ্যা বেড়ে ১৫ হাজার হয়েছে। হিজবুতের ক্যাডাররা উজিরপুরে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে মুসল্লীদের জখম করার পর স্থানীয় প্রশাসনের মাঝে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়। হামলার পর জঙ্গীদের দুটি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুটি ল্যাপটপ ও বেশ কিছু সিডি, জঙ্গীদের বিভিন্ন বই, পুস্তক ও লিফলেট উদ্ধার করেছে।

সংগঠনের দলত্যাগী আমীর সোহরাব হোসেন খান জানান, দীর্ঘ একযুগ পূর্বে গৌরনদী উপজেলা থেকে দক্ষিণাঞ্চলে এ সংগঠনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০১ সালের পর কয়েকটি সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে লাইমলাইটে চলে আসে সংগঠনটি। বিভিন্ন সময় হাতুড়ি দিয়ে মুসল্লীদের পিটিয়ে আহত করাসহ গোপন বৈঠক ও সদস্য সংগ্রহের কাজ চলতে থাকে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট দেশব্যাপী জেএমবির সিরিজ বোমা হামলার পর প্রশাসনের টনক নড়ে। ওই বছরের ২০ আগস্ট সাকোকাঠী গ্রাম থেকে গৌরনদী থানা পুলিশ হিজবুত অনুসারী শাহীন খান ও এমদাদকে গ্রেফতার করে। কিন্তু রহস্যজনক কারনে গ্রেফতারের কয়েক ঘণ্টা পরই তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। ২০০৯ সালের ৯ অক্টোবর গৌরনদী থানা পুলিশ সংগঠনের আঞ্চলিক নেতা হারুন খানকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত হারুন তখন পুলিশকে জানিয়েছিল গৌরনদীর সরিকল ইউনিয়নের সাকোকাঠী গ্রামের মান্নান মীর হিজবুত তওহীদের বরিশাল বিভাগের দায়িত্বে রয়েছে। তার নির্দেশে পুরো বিভাগে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। তার সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসাবে রয়েছে একই গ্রামের লোকমান হোসেন। এছাড়াও জামাল শরীফ ও কামাল শরীফ শীর্ষ নেতা হিসাবে গুরুতপূর্ণ দায়িত্ব পালন করছে। হারুনের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বরিশাল, ঝালকাঠী, গোপালগঞ্জ, পটুয়াখালী, ভোলা, পিরোজপুর ও বরগুনা জেলার আমিরের দায়িত্বে রয়েছে সাকোকাঠী গ্রামের মান্নান মীর। তার অধীনে রয়েছে হাজার-হাজার প্রশিক্ষিত ও সক্রিয় নারী-পুরুষ সদস্য। তারই সত্যতা মিলেছে ২৫ জানুয়ারি হিজবুত ক্যাডার কর্তৃক উজিরপুরে ঘটে যাওয়া হামলার ঘটনায়। হামলার স্বীকার আহতরা জানিয়েছেন, তারা জঙ্গী হিজবুতের দুটি আস্তানা উচ্ছেদের জন্য দীর্ঘদিন থেকে পুলিশ প্রসাশনের কাছে দাবি জানিয়ে আসছিলো। পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকার কারনে শেষ পর্যন্ত তারা জঙ্গী ঘাঁটি দুটি উচ্ছেদের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। ওই মিছিলে সশস্ত্র হিজবুত ক্যাডারদের হামলার ঘটনার পর পুলিশ অভিযানে নামে। ঘটনাস্থল থেকে ১৭ জন হিজবুত তওহীদের নারী ও পুরুষ সদস্যকে গ্রেফতার করে।

২৬ জানুয়ারি বরিশাল পুলিশ সুপার দেবদাস ভট্টাচার্য ঘটনাস্থল উজিরপুর এসে বিক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়ে হিজবুত তওহীদকে দমনের আশ্বাস দিয়েছেন। আলেম সমাজ, মুসুল্লীরা ও শান্তিপ্রিয় গ্রামবাসি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে টাঙ্গাইলের বায়েজীদ খান পন্নীর প্রতিষ্ঠিত জঙ্গী হিজবুত তওহীদ নিষিদ্ধের জন্য জোড় দাবি করেছেন।