পৌর নির্বাচনে আ:লীগ ৪৯.৩১ বিএনপি ৫০.৬৯ শতাংশ ভোট পেয়েছে

বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আওয়ামী লীগের চেয়ে বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা ১ লাখ ৬৭ হাজার ৩৮১ ভোট বেশী পেয়েছে। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী নির্বাচিত ১৬ মেয়র ও বিএনপির বিদ্রোহী ৮ মেয়রের পাশাপাশি প্রতিযোগীতায় আসা অন্য বিদ্রোহী প্রার্থীদের প্রাপ্ত ভোট দলওয়ারী যোগ করলে উভয় দলের ভোটের পরিমাণ প্রায় সমান হয়।

 
২৩৬ পৌরসভার ৩৬ লাখ ৫২ হাজার ২৯৩ জন ভোটার এ নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন। এরমধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা মোট ভোট পেয়েছেন ১৮ লাখ ৯৫৬ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের ৪৯.৩১ শতাংশ। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা পেয়েছেন ১৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৩৭ ভোট, যা প্রদত্ত ভোটের প্রায় ৫০.৬৯ শতাংশ। 

আওয়ামী লীগ রংপুর বিভাগে পেয়েছে ১ লাখ ২৩ হাজার ৭২১ ভোট, রাজশাহী বিভাগে পেয়েছে ৩ লাখ ৪০ হাজার ৬৭৭ ভোট, খুলনা বিভাগে  পেয়েছে ১ লাখ ৯৭ হাজার ৪৩৯ ভোট, বরিশাল বিভাগে পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৭১১ ভোট, ঢাকা বিভাগে পেয়েছে ৬ লাখ ৯৭ হাজার ৫৯০ ভোট, চট্টগ্রাম বিভাগে পেয়েছে ২ লাখ ৫৭ হাজার ৬২৩ ভোট। সিলেট বিভাগে পেয়েছে ৭৮ হাজার ১৯৫ ভোট ।

বিএনপি রংপুর বিভাগে পেয়েছে ১ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৫ ভোট, রাজশাহী বিভাগে পেয়েছে ৪ লাখ ৮৫ হাজার ৯৪৬ ভোট,  খুলনা বিভাগে পেয়েছে ২ লাখ ৩২ হাজার ৮১ ভোট,  বরিশাল বিভাগে পেয়েছে মাত্র ৪৩ হাজার ৯৮০টি ভোট,  ঢাকা বিভাগে পেয়েছে ৫ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮০ ভোট, চট্টগ্রাম বিভাগে পেয়েছে ২ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬৪ ভোট, সিলেট বিভাগে পেয়েছে ৭৬ হাজার ৬৩১ ভোট।

ঢাকা, চট্ট্রগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগে মোট ভোটে এগিয়ে আওয়ামী লীগ। রংপুর, খুলনা এবং রাজশাহী বিভাগের মোট ভোটে এগিয়ে বিএনপি।

রংপুর বিভাগের ২৩টি পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র বিজয়ী হয়েছে ৭টি পৌরসভায়, বিএনপি সমর্থিত মেয়র বিজয়ী হয়েছে ৯টি পৌরসভায়। জাতীয় পার্টি ২টি, জামাত ২ টি এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ৩টি পৌরসভায় মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছেন।

রাজশাহী বিভাগের ৪৫ পৌরসভার আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১১টি মেয়র পদ, বিএনপিও ২৪টি, জামাত ৩টি, স্বতন্ত্র ৩টি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ২টি, বিএনপির বিদোহী ২টি মেয়র পদে বিজয়ী হয়।

খুলনার ৩০টি পৌরসভার আওয়ামী লীগ ১২টি মেয়র পদ, বিএনপি ১২টি, এ বিভাগে বিএনপির ৪ বিদ্রোহী বিজয়ী হয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র  ২টি।
বরিশাল বিভাগের ১৯টি পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৬টি, বিএনপি ১টি, স্বতন্ত্র ১টি এবং আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১টি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছে।
ঢাকা বিভাগের ৬৩টি পৌরসভা মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৮টি, বিএনপি ২২টি এবং স্বতন্ত্র ৫টি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছে। আওয়ামী লীগের ৭ বিদ্রোহী প্রার্থী  ও বিএনপির ১ বিদ্রোহী মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন।

চট্টগ্রামের ৪৪টি পৌরসভার মধ্যে ৩৮টি পৌরসভার ফল প্রকাশ হয়েছে। নির্বাচনী সহিংসতার কারনে ১টি পৌরসভার পূর্ণাঙ্গ ও ৫টি  পৌরসভার বিভিন্ন কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। ঘোষিত ৩৮ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ পায় ১৫টি মেয়র, বিএনপি ১৯টি, এলডিপি ১টি স্বতন্ত্র ১টি, আওয়ামী লীগের ১ বিদ্রোহী ও বিএনপির ১ বিদ্রোহী মেয়র পদে নির্বাচিত হয়েছেন।

সিলেট বিভাগে ১৬টি পৌরসভার মধ্যে আওয়ামী লীগ ৬টি, বিএনপি ৯টি, আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ১টি মেয়র পদে বিজয়ী হয়েছে।
প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল সিদ্ধান্তের কারনে শুধু আওয়ামী লীগের সমর্থিত প্রার্থীদের সঙ্গে দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থীদের হাড্ডাহাড্ডি প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ২১ পৌরসভায়। এ পৌরসভাগুলো হলÑ গফরগাঁও, নরসিংদী, গোপালগঞ্জ, টুঙ্গিপাড়া, কোটালীপাড়া, ভেদরগঞ্জ, ডামুড্যা, নেত্রকোনা, দুর্গাপুর, কালকিনি, গৌরীপুর, বরগুনা, আমতলী, পাইকগাছা, কালিয়া, হাতিয়া, রহনপুর, পাঁচবিবি, সুজানগর, সাঁথিয়া ও পটিয়া।

৩০টি পৌরসভায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল।  শুধু বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগ হেরেছে ৭টি পৌরসভার মেয়র পদে। এসব পৌরসভায় বিজয়ী হয়েছে বিএনপি সমর্থিত মেয়র। আবার বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে লড়াই সীমাবদ্ধ ছিল ৪ পৌরসভায়। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থিত প্রার্থীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়ই আসতে পারেননি। এছাড়া বিএনপি এবং জামাত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ৬টি পৌরসভায়। আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ১টি পৌরসভায়। আবার আওয়ামী লীগ-জামাত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে ৫টি পৌরসভায়। জামাত-জাতীয় পার্টি লড়াই হয়েছে ১টি পৌরসভায়।

বিদ্রোহী প্রার্থীর কারণে আওয়ামী লীগের হাতছাড়া হয়েছে কমপক্ষে ১০টি পৌরসভা। এর মধ্যে নকলায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী ৩ হাজার ৩৪১ ভোট, বিদ্রোহী প্রার্থী ১ হাজার ৭০৫ ভোট  পেয়েছেন। এ দুজনের ভোটযুদ্ধের মাঝখানে বিজয়ী হয়েছেন বিএনপি প্রার্থী। তার প্রাপ্ত ভোট ৪ হাজার ১৫২। অথচ আওয়ামী লীগের সমর্থিত ও বিদ্রোহী উভয়ের প্রাপ্ত ভোট ৫ হাজার ৪৬টি । একইভাবে শ্রীবর্দীতে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ৩ হাজার ৩২৫ ভোট এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ১ হাজার ৩২৬ ভোট লাভ করেছেন। দু’জনের মোট ভোট ৪ হাজার ৬৫১। অথচ এ পৌরসভায় বিএনপি মেয়র জিতেছেন ৪ হাজার ১৯০ ভোট পেয়ে। মুন্সীগঞ্জ পৌরসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ৬ হাজার ১৯৮ ভোট এবং একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী পেয়েছেন ১০ হাজার ৮৪৪ ভোট। দু’জনের মোট ভোট ১৭ হাজার ৪২। অথচ বিএনপির মেয়র প্রার্থী জিতেছেন ১২ হাজার ২০৯ ভোট পেয়ে। নগরকান্দায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী এবং মনোনীত প্রার্থী দু’জনের মোট ভোট ২ হাজার ৪৮২টি। এতে বিএনপি প্রার্থী জিতেছেন ১ হাজার ৯৭৮ ভোট পেয়ে। একইভাবে নলছিটি, চালনা এবং জীবননগরে আওয়ামী লীগের মনোনীত ও বিদ্রোহীর লড়াইয়ের ফাঁকে স্বল্প ভোটে বিজয়ী হয়েছেন দুই বিএনপি এবং একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী।

বিএনপির মনোনীত ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে এমন ৭ পৌরসভার মধ্যে তারাব, খোকসা, মাটিরাঙ্গা, বড়াইগ্রাম, নন্দীগ্রাম, আক্কেলপুর ও শ্রীমঙ্গল রয়েছে। দু’দলের মনোনয়নপ্রাপ্ত প্রার্থীদের বাইরে রেখে শুধু বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে চার পৌরসভায়। এরমধ্যে আলমডাঙ্গায় প্রতিন্দ্বন্দ্বিতা হয় দুই বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর মধ্যে। এদের একজন বিজয়ী হন ৬ হাজার ৫৯৫ ভোট পেয়ে। অন্যজন পান ৫ হাজার ৮৬৬ ভোট। তানোরে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ৭ হাজার ৩৮৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। অন্যদিকে বিএনপির বিদ্রোহী পান ৫ হাজার ৯৯৬ ভোট। এ পৌরসভার দু’দলের মনোনীত প্রার্থীরা নামমাত্র ভোট পেয়ে পঞ্চম ও ষষ্ঠ স্থান লাভ করেন।

বিএনপি ও জামাত প্রার্থীদের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ৬ পৌরসভায়। এগুলো হল কাটাখালী, নবাবগঞ্জ, জলঢাকা, রামগতি, কলারোয়া ও বড়লেখা।
আওয়ামী লীগ-জাতীয় পার্টির মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল শুধু বদরগঞ্জ পৌরসভায়। আবার আওয়ামী লীগ-জামাতের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছিল ৪ পৌরসভায়। এগুলো হলÑ গোদাগাড়ী, বীরগঞ্জ, কানাইঘাট, কুমারখালী।

সর্বশেষ ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দলীয় অভ্যন্তরিণ কোন্দল, প্রার্থীর যোগ্যতা ও অহমিকা, বিদ্রোহী প্রার্থীর অবস্থান, দলের একের অধিক প্রার্থী, স্থানীয় সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান দ্বন্ধসহ নানাবিধ কারণে আওয়ামী লীগ ও মহাজোট সংখ্যার দিক থেকে অধিক সংখ্যক পৌরসভায় মেয়র নির্বাচিত হতে পারেনি। আরো কিছু পৌরসভায় তারা বিজয়ী হতে পারতো। কিন্তু মোট ভোটের তারতম্যে আওয়ামী লীগের অবস্থান বিএনপির পিঠ ছুই ছুই।

 

পৌর নির্বাচনের ফলাফল
আওয়ামী লীগ ৯৩
বিএনপি ৯৭
আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী ১৬
বিএনপির বিদ্রোহী ৮
জাতীয় পার্টি ১
জামাত ৫
এলডিপি ১
নাগরিক কমিটি ১
স্বতন্ত্র ১৪