৭৪ বছর বয়সেও বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পায়নি মোমেনা

খুশি অইয়া হ্যারে একখান কাগজ (সনদ) দিছে। মোর সোয়ামির মরার পর মোরা খাইয়া না খাইয়া আছি, কেউ মোর খবর ন্যায় নায়। কেউই একটু সাহায্য করে না। ক্ষোভের সাথে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বরিশালের গৌরনদী উপজেলার আশোকাঠী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্বা কালু সরদারের ৭৪ বছরের বৃদ্ধা ও বিধবা স্ত্রী মোমেনা বেগম। বয়স্ক ও বিধবা ভাতা বঞ্চিত মোমেনা বেগমের হতদরিদ্র দিনমজুর পুত্রের জিজ্ঞাসা আর কত বছর বয়স হলে তার মা বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।

মোমেনা বেগমের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তার স্বামী কালু সরদার রিকসা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দেশের স্বাধীনতার জন্য স্ত্রী ও বড় ছেলে তিন বছরের সাদেককে ফেলে জীবনের মায়া ত্যাগ করে পাক হানাদার প্রতিরোধে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন। ’৭১-র আগষ্ট মাসে উজিরপুরের জয়শ্রী এলাকায় হানাদারদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধে তিনি পায়ে গুলি বৃদ্ধ হয়ে পঙ্গুত্ব বরন করেন। দেশ স্বাধীনের পর তাকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাক্ষরিত সনদ ও আর্থিক অনুদান প্রদান করেন তৎকালীন বরিশালের জেলা প্রশাসক। বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষরিত সনদে (স্বারক নং প্রত্রাক ৬-৪-৭২/সিভি/নং ৪৫৫, তারিখ-২৪/২/১৯৭২) বলা হয়, প্রিয় ভাই আপনি দেশ প্রেমের সুমহান আদর্শ ও প্রেরনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশ মাতৃকার মুক্তি সংগ্রামে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে পাকহানাদার দস্যুবাহিনীর হাতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন। এই দুঃসাহসিক ঝুকি নেয়ার জন্য আপনাকে জানাচ্ছি আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা। আপনার মতো নিঃস্বার্থ দেশ প্রেমিক বীর সন্তনরাই উত্তরকালে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের নিশ্চয়তার এক অত্যুজ্জল আদর্শ হিসেবে প্রেরনা যোগাবে।

প্রধানমন্ত্রীর ত্রান ও কল্যাণ তহবিল থেকে আপনার পরিবারের উপকারর্থে আপনার সংশ্লিষ্ট (বরিশাল) মহাকুমা প্রশাসকের নিকট থেকে ৫ হাজার টাকার চেক প্রেরিত হল। (চেক নম্বর-পিএ০৩৮১৫০) আমার প্রাণভরা ভালবাসা ও সংগ্রামী অভিন্দন নিন। ইতি-শেখ মুজিব। এই সনদ নিয়েই রোগাক্রান্ত বৃদ্ধা মোমেনা বেগম সাহায্যের জন্য মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। মোমেনা আরো বলেন, কাড (ভাতা) পাওয়ার লাইগ্যা চেয়ারম্যান ও মেম্বরের ধারে গেছি কেউই মোর লাইগ্যা কিছু করে নাই। চাইয়া চিন্তা চলি। স্বামীর মৃত্যুর পর অর্ধহারে অনাহারে অতিকষ্টে দিন কাটে। কিন্তু তার ভাগ্যে ৭৪ বছর বয়সেও জুটেনি বয়স্ক কিংবা বিধবা ভাতা। মোমেনার পুত্র দিনমজুর আব্দুল সাত্তার সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আর কত বছর বয়স হলে মোর মায় বয়স্ক ও বিধবা ভাতা পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান বাবার বীরত্বের প্রতি সন্মান দিল কিন্তু সমাজের কর্তারা একটু সহানুভুতি পর্যন্ত দেখাতে পারলো না। অর্থাভাবে না খাইয়া বিনা চিকিৎসায় ভূগছে। তিনি তার মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।