আদালতের রায় ঘোষণা হয় গ্রাম্য সালিশে !

না পেলে থানায় অভিযোগ  বা জেলা আদালতে মামলা দিয়ে থাকে। বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে দায়ের করা মামলার রায় মাদারীপুরের কালকিনিতে পুলিশ ও গ্রাম্য মাতব্বরদের যৌথ সালিশ বৈঠকে ঘোষণা করা হয়। উপজেলার পৌর এলাকাসহ ১৪টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে জমজমাট এ সালিশ বৈঠক বাণিজ্য চলছে।

ভূক্তভোগীদের অভিযোগে জানা গেছে, থানায় অভিযোগ দিতে সমস্যার অন্ত নেই। বিচারপ্রার্থী থানার কর্তব্যরত কর্মকর্তাকে ঘটনা খুলে বললে তিনি পাঠিয়ে দেন চিহ্নিত কিছু দালাল ও কনস্টেবলদের নিকটে অভিযোগ লেখার জন্য। অতপরঃ উক্ত কর্মকর্তা অফিসার ইন চার্জের অনুমতি সাপেক্ষে বাদী ও বিবাদী পক্ষকে গ্রাম্য মাতুব্বরদের সাহায্যে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করেন। অনুরুপভাবে ধর্ষণ, যৌতুক ও নারী নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করলে থানায় আসে তদন্তের জন্য। পুলিশ কর্মকর্তারা তদন্তের নামে গ্রাম্য সালিশকারীদের নিয়ে দফায় দফায় যৌথ বৈঠকে বসেন। এসব মাতুব্বরেরা আইনের কোন তোয়াক্কা না করে নিজেদের সুবিধামত বিচারের রায় ঘোষনা করে তা পক্ষে-বিপক্ষের প্রতি জোর পূর্বক চাপিয়ে দেয়। রায় বহাল রাখতে পেশী শক্তির ভয় দেখানো হয়। তারা সামান্য কারনকে পুঁজি করে তিলকে তাল বানিয়ে সহজ সরল  মানুষদের বেকায়দায় ফেলে সমাধানের নামে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। গ্রাম্য দরিদরবারের সমাধান না দিয়ে দীর্ঘদিন ঝুলিয়ে রাখেন এবং পক্ষ-বিপক্ষদের সালিশের নামে তাদের পিঁছনে ঘোরাতে থাকেন। আবার বুদ্ধি দেয়ার নামে ঝামেলায় জড়িয়ে পড়া মানুষদের বাড়িতে চলতে থাকে দলবল নিয়ে ভুরি ভোজের মহোৎসব। এ জন্য মাতুব্বরেরা কিছু লাঠিয়াল বাহিনী পুষে রাখে। সালিশের রায়ে মোটা অংকের টাকা জরিমানা করা হয় এবং সেই টাকা বাদী পক্ষকে না দিয়ে হাত ঘুরিয়ে মাতুব্বরেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নেয়। এতে বাদী পক্ষ একদিকে যেমন বিবাদী পক্ষের রোষানলে থাকে তেমনি আবার মাতুব্বরদের আক্রোশে পরার ভয়ে নিরুপায় হয়ে মুখবুজে সব সহ্য করে যায়। কোন কারনে যদিও বিষয়গুলো ফাঁস হয়ে গেলে সব সালিশ মিলে একমত হয়ে ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়। অনেক ক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী দাবী করে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে পার পেয়ে যায়। গ্রাম্য মাতুব্বরদের এড়িয়ে ন্যায্য বিচারের আশায় থানা কিংবা আদালতে মামলা দায়ের করলে তারা সমাজ ভঙ্গের নামে সেই পরিবারকে একঘরে বানিয়ে স্বার্বোক্ষনিক কোনঠাসা করে রাখে। জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ্ব, পারিবারিক কলহ, তালাক, দু’পক্ষের মারামারি, ধর্ষন, পরকিয়াসহ গ্রাম্য দলাদলীকে পুঁজি করে তারা এসব করছে। বেশির ভাগ প্রবাসে থাকা যুবকেরা দেশে ফিরে তাদের শিকার হচ্ছে।

উপজেলার উত্তর রমজানপুর এলাকার জাকির হোসেন রাড়ী জানান, তার ফুঁফাত ভাইদের সাথে জমিজমা নিয়ে বাড়িতে ঝামেলা থাকায় সমাধানের জন্য গ্রাম্য সালিশদের কাছে যাওয়া হয়। সালিশগণ জমি ভাগাভাগির নামে ৫/৬বার বাড়িতে বৈঠক করেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত কোন সমাধান না দিয়ে কেটে পরে। প্রতিবার তাদের খাওয়ানোর জন্য অনেক টাকা ব্যয় হয়েছে অথচ সমাধান হয়নি। কয়েক মাস পূর্বে উপজেলার এনায়েত নগর এলাকায় এক যুবতীকে ধর্ষণ করে উক্ত এলাকারই পাষন্ড এক যুবক। এ ঘটনায় উক্ত ভূক্তভোগীকে থানায় মামলা করতে দেয়নি গ্রাম্য সালিশকারীরা। গ্রাম্য সালিশকারীরা বিচারের নামে যুবতীর ইজ্জতের মূল্য হিসাবে ৩০হাজার টাকা জরিমানা করেন। আবার সে জরিমানার অর্থ পুরোটা ভূক্তভোগীদের হাতে যেতে কালক্ষেপণ হওয়ায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়। আলীনগর ইউপির গদাগরদী গ্রামের ফজলে ফকিরের ছেলে মাহাবুব ফকির (২৫) তার স্ত্রী নাছিমা বেগম(২১) মাদারীপুর চীপ জুডিশিয়াল আদালতে যৌতুক ও নারী নির্যাতন মামলা করলে গ্রাম্য সালিশকারীরা ১লক্ষ ৫০হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করলেও তাকে জেল খাটতে হয়।   এ রকম ঘটনা ঘটছে অহরহ।

আদালতে দায়ের করা মামলার রায় পুলিশ ও গ্রাম্য মাতুব্বরদের যৌথ সালিশ বৈঠকে কোন আইন বলে ঘোষণা করা হয়? এমন প্রশ্নের জবাবে কালকিনি থানার অফিসার ইন চার্জ রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যে মামলাগুলো অতিরঞ্জিত সেগুলো তদন্তের সময় সকল পক্ষের সম্মতিক্রমে সমাধান করে দেয়া হয়’। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় বিরোধ বাঁধে জমিজমা নিয়ে আর মামলা হয় চাঁদাবাজির। তাছাড়া অনেকে মামলা নিয়েও হয়রানির শিকার হয়ে থাকে। তাই আমরা চেষ্টা করি অল্পতেই সমাধান করার’।