ওএমএস’র লাইনে মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা

লোকলজ্জায় ওএমএস’র (সরকারি ন্যায্যমূল্যের দোকানে) এখন বোরকা পরে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা। তাদের পাশপাশি স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীরাও এখন ওএমএস’র লাইন ভাড়ি করছে। আমন মৌসুমে আকস্মিকভাবে বেসামাল হয়ে ওঠা চালের বাজারের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। অস্থিতিশীল বাজারে প্রতিদিনই চালের মূল্য বেড়ে চলেছে। অনেক পরিবারেই এখন চালের দাম নাগালের বাইরে চলে গেছে। বাধ্য হয়ে নিন্ম ও মধ্যবিত্ত পরিবারের লোকজন ছুটছেন ওএমএস ডিলারের দোকানে। কাকডাকা ভোর থেকেই নিন্মবিত্ত পরিবারের সাথে লোকলজ্জায় বোরকা পরে ন্যায্যমূল্যের চাল পেতে মধ্যবিত্ত পরিবারের নারীরা লাইন ধরছেন ওএমএস’র দোকানে। এছাড়াও বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষের সাথে যোগ হয়েছে বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশুরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে ওএমএস’র দোকানগুলোতে মানুষের লাইন দিন দিন দীর্ঘ হচ্ছে।

গতকাল রবিবার বরিশালের গৌরনদী, আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এসব তথ্য। ক্ষুধার্ত পরিবারের সদস্যরা ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ৫ কেজি করে চাল নিয়ে ঘরে ফিরছেন। তবে এসব উপজেলার ওএমএস ডিলাররা চাহিদা অনুযায়ী চাল দিতে না পারায় ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও প্রতিদিন খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে ক্ষুধার্ত শত শত পরিবারের সদস্যদের।  

আগৈলঝাড়ার ওএমএস ডিলার অপূর্ব লাল সরকার বলেন, প্রতিকেজি চালের দাম ২৫ টাকা হারে প্রতিজনকে ৫ কেজি করে চাল দেয়া হচ্ছে ১২৫ টাকার বিনিময়ে। বাজারে যার দাম প্রায় দ্বিগুন। হঠাৎ করে চালের বাজার আকাশচুম্বী হওয়ার পেছনে সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন অনেকেই। বরিশালে চাল আমদানি করা হয় গাইবান্ধা ও দিনাজপুরের বিভিন্ন উপজেলা থেকে। ওইসব মোকাম থেকে শুরু করে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে উঠেছে নানান সিন্ডিকেট। চালের ব্যবসার নামে মজুদ করে এবং কারনে অকারনে চালের দাম বাড়িয়ে ওইসব সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন। গৌরনদীর টরকী বন্দরের ওএমএস ডিলার নুর মোহাম্মদ জানান, চলতি মাসে শুরু হওয়া এ কার্যক্রমে বাজারে প্রভাব পড়েছে কি না জানি না। তবে ওএমএস’র বাজারে ক্রেতার সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

বাংলার শষ্য ভান্ডার হিসেবে পরিচিত বরিশাল অঞ্চলের মানুষ এখন নিজেরাই খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। এ ব্যাপারে এসব উপজেলার খাদ্য নিয়ন্ত্রন কর্মকর্তারা বলেন, যে পরিমান চাল সরবরাহ দেয়া হচ্ছে তার থেকে চাহিদা অনেক বেশি। তবে ওএমএস’র এ কার্যক্রম চালু রয়েছে বলেই চালের বাজারের অসহনীয় অবস্থা থেকে মানুষ কিছুটা পরিত্রান পাচ্ছেন বলেও তারা উল্লেখ করেন।